ঋতু পরিক্রমায় প্রকৃতিতে এখন শীতকাল চলছে। যদিও শীতের দাপট কমে এসেছে, তার পরও শীতের রোগবালাই পিছু ছাড়েনি।
দেশের অনেক স্থানে শীত নিবারণের জন্য এখনও অতিরিক্ত পোশাক পরতে হচ্ছে। এসব পোশাকের বড় অংশ কৃত্রিম সুতা বা প্রাণীর পশমের সুতায় তৈরি; যা শরীরের জন্য বিশেষ সমস্যাজনক। এর ফলে শরীরের পাশাপাশি চোখেও অ্যালার্জি দেখা দেয়। শীতকালে চোখের সমস্যাকে আমরা কয়েক ভাগে ভাগ করতে পারি।
চোখে পানিস্বল্পতা
এ সময় বাতাসে একটা শুকনা ভাব থাকে। ফলে অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে ড্রাই আইয়ের সমস্যা দেখা দেয়। পানিস্বল্পতার জন্য চোখ খচখচ, জ্বালা-যন্ত্রণা করে।
চোখের অ্যালার্জি
শীতকালে কাপড়চোপড় বেশি পরা হয়। কাপড়ের তন্তু শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা তৈরি করে। এ সময় ইটভাটার চিমনি থেকে নির্গত ধোঁয়া ও সড়কে ধুলাবালির পরিমাণ বেড়ে যায়। এগুলোতেও অ্যালার্জি হয়। শীতকালে দেশে ফুলের চাষ বেশি হয়। ফুলের পরাগরেণু বাতাসে ওড়ে। এতে চোখে অ্যালার্জি সৃষ্টি হয়।
এ ছাড়া আম, কাঁঠাল ইত্যাদির ফুল শীতকালেই আসে। এ সময় খাল-বিল, পুকুরের পানি কমে যায়। ওই পানিতে গোসল করলে অ্যালার্জি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।
চোখ ওঠা
শীতকালেও ভাইরাস সংক্রমণে চোখ উঠতে পারে। চোখের নেত্রপর্দার (কনজাংটিভা) ঝিল্লি লাল টকটকে আকার ধারণ, অঝোরে পানি ঝরা, পিচুটি হয়ে চোখের জ্বালা-যন্ত্রণা, ব্যথাসহ জ্বরও আসতে পারে।
চোখের পানি ঝরা
শীতকালে অ্যালার্জি, চোখ ওঠা বা সর্দি-কাশি, জ্বরে নাকের ভেতর ঝিল্লি প্রদাহ হয়ে নাক বন্ধ হলে চোখ থেকে অঝোরে পানি ঝরে।
অতিবেগুনি রশ্মি বা ইউভি রশ্মি সমস্যা
শীতকালে যেহেতু বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে, তাই সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি চোখের কর্নিয়া, লেন্স বা রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ সময় তাই চোখে কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে গাফিলতি না করে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তাঁর নির্দেশে চলাফেলা করতে হবে। প্রয়োজনে ধুলাবালি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হালকা রঙিন চশমা, চোখ শুকানোর হাত থেকে রক্ষা পেতে ঘন ঘন পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখ ধোয়া যেতে পারে। পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শে কৃত্রিম চোখের পানি ব্যবহার করা যায়। অনেকক্ষণ ল্যাপটপ, কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করা উচিত নয়। যারা কন্ট্যাক্ট লেন্স পরেন, তাদেরও বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজন আছে।
লেখক : কনসালট্যান্ট, যশোর চক্ষু ক্লিনিক, যশোর।