সায়াটিকা শব্দটি অনেকেরই জানা। তবে এ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের নানা ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকের ধারণা, শরীরের যেকোনো জায়গায় ব্যথা হলেই সেটা সায়াটিকার জন্য হয়ে থাকে, এটা ঠিক নয়।
আমাদের শরীরে সায়াটিক নামের একটি দীর্ঘ নার্ভ বা স্নায়ু রয়েছে। মেরুদণ্ডের লাম্বার স্পাইনের বা কোমরের শেষ দিকের কশেরুকা থেকে বের হয়ে এই স্নায়ু ঊরুর পেছন দিক দিয়ে হাঁটুর নিচের মাংসপেশির মধ্য দিয়ে পায়ের আঙুল পর্যন্ত বিস্তৃত। যখন কোনো কারণে এই স্নায়ুর ওপর চাপ পড়ে, তখন এর গতিপথজুড়ে একটা তীব্র ব্যথা কোমর থেকে পায়ের দিকে নিচে ছড়িয়ে যায়। এই সমস্যাকেই চিকিৎসার পরিভাষায় সায়াটিকা বলা হয়।
কীভাবে বুঝবেন
সায়াটিকা হলে ব্যথা কোমর থেকে পায়ের দিকে ছড়িয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে কোমরে ব্যথা থাকে না, কিন্তু ঊরুর পেছন দিক থেকে শুরু করে হাঁটুর নিচের মাংসপেশির মধ্যে বেশি ব্যথা করে। বিশ্রাম নিলে বা শুয়ে থাকলে ব্যথা কম থাকে। কিন্তু খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে কিংবা হাঁটলেই ব্যথা বেড়ে যায়। এমনকি কারও কারও কিছুক্ষণ হাঁটলে আর হাঁটার ক্ষমতা থাকে না, কিছুটা বিশ্রাম নিলে আবার কিছুটা হাঁটতে পারেন। আক্রান্ত পা ঝিন ঝিন বা অবশ অনুভূত হতে পারে। কখনো আক্রান্ত পায়ে জ্বালাপোড়া অনুভব করতে পারেন।
রোগনির্ণয়
রোগনির্ণয়ের জন্য রোগীর বিস্তারিত ইতিহাস ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি লাম্বো-সেকরাল স্পাইনের এমআরআই (ম্যাগনেটিক রিজোনেন্স ইমেজিং) করার প্রয়োজন পড়ে। এর মাধ্যমে কেন কোথায় চাপ পড়েছে, তা শনাক্ত করা যায়।
চিকিৎসা
সায়াটিকার মূল চিকিৎসা বিশ্রাম, স্নায়ুর ব্যথা কমানোর ওষুধ এবং পাশাপাশি সঠিক ফিজিওথেরাপি। এ ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত।
কিছু পরামর্শ
সামনের দিকে ঝুঁকে কোনো ভারী কাজ করা যাবে না।
ভারী ওজন তোলা নিষেধ।
শক্ত বিছানায় শোয়া ভালো।
ভ্রমণ ও হাঁটাচলার সময় লাম্বার করসেট বেল্ট ব্যবহার করবেন
চিকিৎসকের নির্দেশমতো ব্যায়াম করবেন।
এম ইয়াছিন আলী, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা