বঙ্গনিউজঃ বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন করতে হলে লাইসেন্সধারী হতে হবে। যদি লাইসেন্স ছাড়া কেউ ব্যবসা করে বা ব্যবসার উদ্দেশ্যে মুদ্রা মজুত করে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকার আর্থিক জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। এছাড়া আগে লাইসেন্স ছিল কিন্তু বাতিল হয়ে গেছে এরপরও যদি কেউ বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবসা করে তার ক্ষেত্রেও এ দণ্ড কার্যকর হবে। এসব বিধান রেখে বৈদেশিক মুদ্রা ও বিনিময় ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ এর খসড়া তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। খসড়াটির ওপর স্টেকহোল্ডারদের মতামত চাওয়া হয়েছে। মতামত পাওয়ার পর যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হবে। বিদ্যমান ডলার সংকট মোকাবিলা ও বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ করতেই মূলত এ আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।
আইনের খসড়ায় আরও উল্লেখ করা হয়, এ আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কেউ বাধা দিলে একই দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে যে কোনো মুদ্রা, স্বর্ণ, রৌপ্য বা অন্য সম্পত্তির ক্ষেত্রে এ আইনের ব্যত্যয় হলে দণ্ডের পাশাপাশি বাজেয়াপ্ত করা হবে। এছাড়া অনুমোদিত ডিলার ছাড়া বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করেন সেই ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি সেই উদ্দেশ্য বা ভিন্ন অন্য কোনো উদ্দেশ্যে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে পারবেন না।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চলমান নীতিমালায়, কোনো ব্যাংকের এডি লাইসেন্স শাখা ও মানি চেঞ্জারগুলো ফরেন কারেন্সি লেনদেন ও আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে অনিয়ম করলে সর্বোচ্চ লাইসেন্স বাতিল ও আদালতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মামলা করতে পারে। দ্য ফরেন একচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৪৭ এর ৩(৫) ধারাটি ২০১৫ সালে সংশোধন করার মাধ্যমে ধারাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে একই আইনের ২৭ ধারার অধীনে সরকার কর্তৃক কোনো বিধি প্রণয়ন করা হয়নি অর্থাৎ অনিয়ম হলে কী শাস্তি হবে-সেটি স্পষ্ট করা হয়নি। যার কারণে অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।
ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) তথ্যমতে, এ মুহূর্তে কমপক্ষে এক হাজার অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ রয়েছে। যেখানে প্রতিটিতে দৈনিক লেনদেন ৭০-৭৫ লাখ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় হয়। এত সংখ্যক অবৈধ মানিচেঞ্জার গড়ে উঠার পেছনে দুটি কারণ। প্রধানত বৈদেশিক মুদ্রা ও বিনিময় ব্যবস্থাপনা আইন নেই। দ্বিতীয়ত সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে দেশের কিছু অসাধু বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসায়ী লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে বৈদেশিক মুদ্রার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এবং অধিক মুনাফার জন্য মার্কিন ডলার মজুত করে দাম বাড়ায়। ৮৫ টাকার মার্কিন ডলার ১২৩ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এ কাজে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের যেমন ভূমিকা ছিল তেমনি কিছু কিছু বৈধমানি এক্সচেঞ্জারের ভূমিকাও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
বৈদেশিক মুদ্রা ও বিনিয়ম আইনের খসড়ায় বলা হয়, আইনের কোনো বিধান বা আরোপিত শর্ত পালন না করলে, পরিদর্শনকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শককে অসহযোগিতা করলে, কোনো তথ্য, হিসাব, বহি বা নথিপত্র ইচ্ছাকৃতভাবে বিনষ্ট, ধ্বংস, পরিবর্তন বা ভুলভাবে উপস্থাপন করলে একই ধরনের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
প্রস্তাবিত এই আইনের মাধ্যমে দেশের বাহিরে পরিশোধ, বৈদেশিক মুদ্রায় চলতি ও মূলধনী হিসাবের লেনদেন, বিনিময়, সিকিউরিটিজের লেনদেন, বৈদেশিক মুদ্রা, পণ্য, সেবা ও স্বর্ণ-রৌপ্যের আমদানি ও রপ্তানিসংক্রান্ত কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাধারণ বা বিশেষ পূর্বানুমতি এবং অনুমোদিত ডিলার ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান দেশের অভ্যন্তরে এবং বাংলাদেশে নিবাসী কোনো ব্যক্তি, দেশের ভৌগোলিক সীমার বাহিরের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়, ঋণ গ্রহণ ও বিক্রয় করতে পারবে না। আর অনুমোদিত ডিলার ছাড়া বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করেন সেই ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি সেই উদ্দেশ্য বা ভিন্ন অন্য কোনো উদ্দেশ্যে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করিতে পারবেন না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন বা শর্ত ছাড়া বিদেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানো যাবে না। দেশের বাহিরে নিবাসী কোনো ব্যক্তির নির্দেশে অন্য কোনো ব্যক্তিকে অর্থ পরিশোধ বা প্রেরণ করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাধারণ বা বিশেষ অনুমোদন এবং প্রযোজ্য ফি পরিশোধ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো স্বর্ণ বা রৌপ্য বা কারেন্সি নোট বা ব্যাংক নোট বা ধাতব মুদ্রা আমদানি এবং বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করতে পারবে না।
‘বৈদেশিক মুদ্রা’ বলতে বাংলাদেশি মুদ্রা ব্যতীত অন্য যে কোনো দেশের সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত ব্যাংক নোট এবং ধাতব মুদ্রা যাহা পণ্য ও সেবার মূল্য এবং ঋণ পরিশোধের জন্য আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য বোঝায়।