বঙ্গনিউজঃ শিশুর ছয় মাস বয়স থেকে দুধের দাঁত ওঠা শুরু হয় এবং ছয় বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ী হয়। দুধের দাঁত সর্বমোট ২০টি। দুধের দাঁত অনেক সময় বয়সের আগেই নষ্ট হয়ে পড়ে যেতে পারে। এ দাঁত সম্পর্কে আমাদের দেশের মা-বাবার ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত। সেটি হচ্ছে, দুধের দাঁত তো স্থায়ী নয়। এটি একসময় পড়েই যাবে। তাই এ দাঁতে কোনো গর্ত হলে তা ফিলিং বা অন্যান্য চিকিৎসা না করিয়ে ফেলে দেন। কিন্তু একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দাঁতের যেভাবে যত্ন নিতে হয়, দুধের দাঁতেরও ঠিক সেভাবেই যত্ন নেওয়া উচিত।
বাচ্চাদের খুব কমন একটি দাঁতের রোগের নাম ‘নার্সিং বোটল সিনড্রোম’ বা ‘আর্লি চাইল্ডহুড ক্যারিস’। এ ক্ষেত্রে বাচ্চার সামনের দাঁতগুলোয় গর্ত হয়ে যায়। অনেক সময় গর্ত বড় হতে হতে দাঁতের ভেতরের নার্ভ, যাকে পাল্প বলে, সেখানে ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন শুরু হয়ে বাচ্চার দাঁতের তীব্র ব্যথার সৃষ্টি হয়। তখন দাঁতগুলোর সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। ক্যাভিটি বা গর্ত যদি ছোট হয়ে থাকে, তাহলে দাঁতগুলো ফিলিং করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জিআই বা গ্লাস আয়নোমার ফিলিং নামে একটি ফ্লুরাইড নিঃসরণ ক্ষমতাসম্পন্ন ফিলিং ম্যাটেরিয়াল দিয়ে ফিলিং করা হয়। ফ্লুরাইডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এটি দাঁতের ক্যারিস তৈরি হওয়া থেকে বিরত রাখে। যদি গর্ত অনেক বেশি হয়, তখন পালপোটমি বা পালপেকটমি (বড়দের রুট ক্যানেল চিকিৎসার মতো) চিকিৎসা করে সেই দুধের দাঁতকে রক্ষা করা হয় স্বাভাবিক বয়সে পড়ে যাওয়া পর্যন্ত। কোনো দুধের দাঁত যখন পড়ে যাওয়ার বয়স, তার অনেক আগেই যদি পড়ে যায় কিংবা অনেক দেরিতে পড়ে, তখন সেই দুধের দাঁতের করেসপন্ডিং পারমান্যান্ট দাঁত যখন উঠবে, তখন আঁকাবাঁকাভাবে উঠবে। পরিণতিতে আঁকাবাঁকা, উঁচু-নিচু, দাঁতের মধ্যে ফাঁকা– এসব ম্যালঅক্লুশন তৈরি হয়। আর এই আঁকাবাঁকা দাঁত থেকে প্রিভেনশনের একটাই উপায়, দুধের দাঁত পড়ে যাওয়ার বয়স পর্যন্ত রক্ষা করা, অনেক আগেই ফেলে না দেওয়া। মা-বাবার অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, বাচ্চাকে রাতে খাওয়ানোর পর কুলকুচা করে মুখ পরিষ্কার রাখা।
যদি বাচ্চা খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়ে, তাহলে কোনো ভেজা কাপড় দিয়ে দাঁতগুলো পরিষ্কার করে দেওয়া। বছরে দু’বার বাচ্চাকে নিকটস্থ ডেন্টিস্টকে দিয়ে চেকআপ করালে বাচ্চার ভবিষ্যৎ দাঁতগুলো হবে সুন্দর ও সুস্থ।
লেখক : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।