প্রতিবছর বিশ্বের ৫ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এটি সাদামাটা মনে হলেও অনেক সময় ভয়ানক আকার ধারণ করতে পারে। প্রতিবছর পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে ছয় লাখের বেশি মানুষ এতে মৃত্যুবরণ করে।
প্রতিবছর টিকা
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস প্রতিবছর নিজেকে বদলে ফেলতে সক্ষম। বিশেষত ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস খুব দ্রুত নিজেকে পাল্টাতে পারে। এ কারণেই প্রতিবছর ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিষেধক টিকা নতুন করে তৈরি করতে হয়। অর্থাৎ বিগত বছরের ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা কিন্তু এ বছরের জন্য মোটেও কার্যকর নয়।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সাদামাটা মনে হলেও অনেক সময় ভয়ানক আকার ধারণ করতে পারে
কাদের জন্য টিকা
ছয় মাস বয়স থেকে শুরু করে সবার জন্য প্রতিবছর এ টিকা নেওয়া দরকার। তবে এটি যাদের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তারা হলো– ছয় মাস থেকে ছয় বয়স বছর বয়সী শিশু, পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তি, গর্ভবতী মা, কিডনি ফেইলিউর, হৃদরোগ, অ্যাজমা কিংবা সিওপিডি আক্রান্ত ব্যক্তি। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদেরও টিকা নিতে হবে। এ ছাড়া যারা বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন হজব্রত কিংবা ওমরাহ পালন করার জন্য, তাদের জন্যও টিকা দেওয়া জরুরি।
কেন টিকা
এটি দেওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ প্রাচীর তৈরি হয়ে যায় এবং ছয় থেকে আট মাস পর্যন্ত এর স্থায়িত্বকাল থাকে। কোনো টিকাই ১০০ শতাংশ কার্যকর নয়। তবে টিকা দেওয়ার কারণে ৮০ শতাংশের ক্ষেত্রে এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। তীব্র ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। এর কারণে হাসপাতালে ভর্তির মাত্রা অনেক কমে যায়। তা ছাড়া কিছু রোগব্যাধি, যেমন– ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ফুসফুসের তীব্রতা অনেকটা কমে যায়।
টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
টিকা দিলে সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন– হালকা জ্বর, গা ব্যথা, টিকার স্থানে ব্যথা ইত্যাদি। কারও কারও টিকাতে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়াও হতে পারে। তীব্র মাত্রায় অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হলে তাদের টিকা না নেওয়াই ভালো।
টিকার ডোজ
টিকার জন্য বছরে একটি ডোজই যথেষ্ট। কারও কারও ক্ষেত্রে দুই ডোজ টিকা দেওয়া প্রয়োজন পড়তে পারে। টিকা দেওয়া হয় মাংসপেশিতে। এটি দিতে হবে প্রতিবছর ফ্লুর প্রাদুর্ভাব শুরুর আগেই।
তবে মনে রাখা প্রয়োজন, রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা দেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস, মাস্কের ব্যবহার, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার অবশ্যই মানতে হবে।
লেখক : মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ, ঢাকা।