আমাদের সুন্দর মুখমণ্ডলটি হঠাৎ বেঁকে যেতে পারে। মুখের বিভিন্ন ভঙ্গিমা, হাসি-কান্না ইত্যাদি মুখের দু’পাশের চল্লিশের বেশি মাংসপেশির সাহায্যে হয়ে থাকে। যদি কোনো কারণে এই মাংসপেশির কার্যক্ষমতা কমে যায়, তাহলে মুখের আকৃতি খারাপ হয়ে বেঁকেও যাবে।
দেহের সাত নম্বর নার্ভ (ফেসিয়াল নার্ভ) বেশি দায়িত্ব নিয়ে মুখের মাংসপেশিগুলো নড়াচড়া করে। নার্ভ মগজে সৃষ্টি হয়ে মাথার হাড়ের বিশেষ ছিদ্র দিয়ে কানের পেছনে ঘুরে পরোটিড গ্রন্থির মাধ্যমে মুখে এসে পাঁচ ভাগে ভাগ হয়ে মাংসপেশি নিয়ন্ত্রণ করে। এই গতিপথের যে কোনো সমস্যায় মাংসপেশির কার্যক্ষমতা লোপ পায়, তখন মুখ বাঁকা হয়ে যায়।
উত্তর আয়ারল্যান্ডবাসী চিকিৎসাবিজ্ঞানী জন স্টুয়ার্ট বেল (১৯২৮-১৯৯০) প্রথম এই রোগ নির্ণয় করেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে রাখার জন্য রোগের নাম ‘বেলস পালসি’ বলা হয়।
কেন এই রোগ হয়
১. হঠাৎ কানের পেছনে ঠান্ডা বাতাস লাগার জন্য, বিশেষ করে বাসে বা ট্রেনে জানালার পাশে বসলে।
২. মগজের টিউমার।
৩. ডায়াবেটিস বা উচ্চচাপে মাথার মগজে সমস্যা হওয়া।
৪. মাথায় রক্তক্ষরণ।
৫. ভাইরাসজনিত সংক্রমণ।
৬. মধ্য কানের সংক্রমণ বা প্রদাহ।
৭. দুর্ঘটনায় মাথার হাড়ভাঙা।
৮. কানের সামনে বা পেছনে যে কোনো অপারেশনে।
৯. কিছু কিছু অটো ইমুইন রোগ।
রোগের লক্ষণ
মুখের চামড়ায় হাত দিলে অসাড় ভাব লাগা, কথা জড়িয়ে যাচ্ছে, কুলকুচি করা যাচ্ছে না, পানি এক পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে, মুখ ফুলানোর চেষ্টা করে মুখ ফুলছে না, ফুস করে বাতাস বেরিয়ে যাচ্ছে, শিস দেওয়া যাচ্ছে না, চোখের পাতা বন্ধ না হয়ে চোখকে বড় দেখা ইত্যাদি।
কী করতে হবে
দেরি না করে চক্ষু ও স্নায়ু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। তারা বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করবেন।
রাতে ঘুমানোর সময় চোখ পুরো বন্ধ না হলে চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রয়োজনে সাময়িক পাপড়ি অপারেশন করে চোখ ছোট করে দিতে পারেন। ডাক্তারের চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে মুখের বিশেষ ব্যায়াম, ফিজিও দরকার।
প্রতি ঘণ্টায় এক মিনিট করে ঘরে বসে মুখের যত রকম ব্যায়াম বা ভ্যাংচামি করতে হবে। যদি চিকিৎসার কোনো গাফিলতি হয়, তাহলে এই সমস্যা স্থায়ী হতে পারে, যা সমস্যাজনক।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও ফেকো সার্জন, যশোর চক্ষু ক্লিনিক অ্যান্ড ফেকো সেন্টার।