কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৫ ব্যাংককে চিঠির কথা স্বীকার

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৫ ব্যাংককে চিঠির কথা স্বীকার
সোমবার ● ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩


 কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৫ ব্যাংককে চিঠির কথা স্বীকার

 বঙ্গনিউজঃ   শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের চলতি হিসাবে টাকার ঘাটতি থাকায় সতর্ক করে চিঠি দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক রোববার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জানান, চিঠিতে অর্থ ঋণাত্মক থাকার বিষয়ে সতর্ক করা হলেও লেনদেন বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে সহকারী মুখপাত্র ও পরিচালক সরোয়ার হোসেন, সাঈদা খানমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। পাঁচ ব্যাংক হলো-ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক।

মেজবাউল হক বলেন, ‘ইসলামি ব্যাংকগুলোর সিআরআর এবং এসএলআরের বেশিরভাগ টাকা রাখতে হয় নগদে। যে কারণে সিকিউরিটিজ থাকে খুব কম। এর আগে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে কোনো সিকিউরিটিজ ছাড়া একই উপায়ে ধার দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় এ নিয়ে চিঠি দিলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগ। ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর কাঠামোগত সমস্যার কারণে কিছু ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়েছে। এ নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুখপাত্র জানান, এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য। এরপর বহিস্থ চাপ থেকে বের হয়ে এলে সংকটে পড়া ব্যাংকের সুশাসন নিয়ে কাজ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।’

বছরখানেক ধরে বিধিবদ্ধ তারল্য রাখতে না পারায় সম্প্রতি শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ইসলামি ব্যাংককে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘বিএসিএইচ সেটেলমেন্ট জটিলতা প্রসঙ্গ’ শিরোনামের ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনাদের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে চলতি হিসাবের স্থিতি ঋণাত্মক, যা স্বাভাবিক ব্যাংকিং প্রক্রিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিষয়টি বারবার আপনাদের গোচরীভূত করা হলেও এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমতাবস্থায় পত্র পাওয়ার ২০ কর্মদিবসের মধ্যে আবশ্যিকভাবে আপনাদের চলতি হিসাবের ঋণাত্মক স্থিতি সমন্বয়ের পরামর্শ দেওয়া হলো।’

এতে আরও বলা হয়, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমন্বয়ে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে সম্পাদিত ‘ক্লিয়ারিং সেটেলমেন্টের জন্য নির্ধারিত হিসাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণ চুক্তি অনুসারে সব বা নির্দিষ্ট কোনো ক্লিয়ারিং প্ল্যাটফর্ম থেকে বিরত রাখা হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন সময়ে সংকটে পড়া ব্যাংকের সিআরআর, এসএলআর ঘাটতি হলেও চলতি হিসাব নেতিবাচক হওয়ার ঘটনা শোনা যায়নি। আর হঠাৎ কোনো ব্যাংকের সিআরআর, এসএলআর ঘাটতি হলে একদিনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ওভার ড্রাফট (ওডি) সুবিধা দেওয়া হয়। পরদিন ওই ব্যাংক যে করেই হোক, তা সমন্বয় করে। তবে এভাবে মাসের পর মাস অ্যাকাউন্ট ঋণাত্মক থাকা কিংবা টাকা দেওয়ার ঘটনা আগে ঘটেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ, ১৯৭২-এর ৩৬(১) ধারা অনুযায়ী, আমানতকারীদের সুরক্ষায় প্রতিটি ব্যাংকের মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। বর্তমানে প্রচলতি ধারার ব্যাংকের জন্য এ হার ১৭ শতাংশ। আর শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংকের জন্য সাড়ে ৯ শতাংশ। ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোকে সরকারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের বিপরীতে সহজে বিনিময়যোগ্য সম্পদ বা এসএলআর হিসাবে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং বিধিবদ্ধ নগদ জমা সংরক্ষণ বা সিআরআর হিসাবে ৪ শতাংশ নগদে রাখতে হয়। কোনো ব্যাংক যদি সিআরআর রাখতে না পারে তাহলে অসংরক্ষিত অংশের ওপর ৯ শতাংশ হারে দণ্ডসুদ দিতে হয়। আর এসএলআর রাখতে ব্যর্থ অংশের ওপর ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে জরিমানা আরোপ করা হয়। কোনো ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে ৪২ দিন ব্যর্থ হলে পরে বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশের ৩৬(৫)(এ) অনুযায়ী, প্রত্যেক পরিচালককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করতে হবে। এরপরও বিধিবদ্ধ জমা সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে ৩৬(৫)(বি) অনুযায়ী, নতুন আমানত নেওয়া বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২:৫৯:৫২ ● ১৫৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ