বঙ্গনিউজঃ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) এক ছাত্রকে মেস থেকে তুলে নিয়ে জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। পরে ওই ভুক্তভোগী ছাত্রকে শিবির আখ্যা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে রেলক্রসিং এলাকার একটি মেস থেকে সোমবার রাত ২টার দিকে ফিশারিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মনিরুল ইসলামকে তুলে নেয় শাখা ছাত্রলীগের সিক্সটি নাইন উপগ্রুপের কিছু নেতাকর্মী। এরপর তাকে আটকে রেখে পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। পরে ছেলের নিরাপত্তার কথা ভেবে ওই শিক্ষার্থীর মা বিকাশে তিন ধাপে তাদেরকে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা পাঠান।
টাকা পাওয়ার পর তাকে পুলিশে সোপর্দ করে ছাত্রলীগকর্মীরা। পুলিশ সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবন ও পরিবহণ দপ্তর ভাঙচুরের ঘটনায় গত সেপ্টেম্বরে হাটহাজারী থানায় দুটি মামলা দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে মনিরুল ইসলামের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাকে কোর্টে চালান করা হয়েছে।
মনিরুল ইসলামের ছোট ভাই মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, যখন চাঁদা দাবি করেছে, আমাদের মনে হয়েছে ভাইকে অপহরণ করা হয়েছে। নিরাপত্তার কথা ভেবে আমার মা ০১৬০৬৭৪৬০৪১ নম্বরে মোট ১৩ হাজার ৫০০ টাকা বিকাশ করে। আমাদের জানামতে আমার ভাই নিয়মিত নামাজ পড়ত এবং ভালো ছাত্র। দেশের এমন একটা পরিস্থিতি হয়েছে যে নামাজও পড়া যাবে না। শুধু তাই নয়, তাকে তুলে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে মেসেঞ্জার থেকে পরিচিতদের কাছে টাকা ধার চাওয়া হয়েছে।
ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের সিক্সটি নাইন উপগ্রুপের নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানা গেছে। উপগ্রুপের অনুসারী বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আকিভ জাভেদ, সমাজতত্ব বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ইবনুল জাররাহ, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আবু সাইদ শাকিল, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাহমুদুল হাসান ইলিয়াস ও ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অনুপ সরকার আকাশ ঘটনাস্থলে ছিলেন বলে জানা গেছে।
এদের মধ্যে আকিব জাভেদ ও আবু সাইদ শাকিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি। অনুপ সরকার আকাশ ঘটনার বিষয়ে কিছু জানেন না দাবি করেন। তবে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কি না জিজ্ঞাসা করা হলে কল কেটে দেন।
ইবনুল জাররাহ বলেন, আমরা এক ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে মনিরুলের শিবির সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে জেনে ওই মেসে যায়। তার কক্ষ থেকে বই ও বিভিন্ন প্রমাণাদি পাওয়া গেছে। পরে আমরা তাকে ও তার এক বন্ধুকে নিয়ে আসি। তবে তার বন্ধুর সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মনিরুলের শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ায় তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। চাঁদা আদায়ের বিষয়টিকে গুজব বলে মন্তব্য করলেও মনিরুল ইসলামকে ‘উত্তম-মধ্যম’ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।
মাহমুদুল হাসান ইলিয়াস বলেন, ওই ছেলেকে পুলিশ বক্সে আনার পর খবর পেয়ে আমি সেখানে যায়। এর বেশি কিছু জানি না।
চবি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. জয়নাল বলেন, প্রক্টর স্যারের মাধ্যমে ঘটনাটা জেনে পুলিশ বক্সে যাই ভোর পৌনে ৪টার দিকে। পরে ৫টার দিকে তাকে হাটহাজারী থানায় পাঠানো হয়। আমি তাকে সুস্থই দেখেছি। তাকে জিজ্ঞাসা করলে মারধর করা হয়নি বলেও সে জানায়।
হাটহাজারী থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আবদুল গুফরান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত থাকার কিছু তথ্যপ্রমাণ পাওয়ায় ওই ছেলেকে মঙ্গলবার দুপুরে কোর্টে চালান করা হয়েছে।