বঙ্গনিউজঃ ভারতের রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পরপরই দেশে রাতারাতি দ্বিগুণ হয়ে যায় পেঁয়াজের দাম। পেঁয়াজের এমন ঊর্ধ্বমুখী বাজারে ক্রেতা যখন কঠিন সময় পার করছে, তখন আরেক দুঃসংবাদ নিয়ে এলো রসুন। বাড়তে শুরু করেছে মসলা জাতীয় এ পণ্যটির দামও। পেঁয়াজের ডামাডোলের মধ্যেই গত চার দিনে কেজিতে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা বেড়েছে রসুনের দাম। এদিকে এক দিনেই কেজিতে সর্বোচ্চ ১০০ টাকার বেশি বাড়ার পর তিন দিনে পেঁয়াজের দাম কমেছে ৫০ টাকার মতো।
চার দিন আগে রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হয়েছিল ২০০ থেকে ২১০ টাকা দরে। গতকাল ঢাকার কারওয়ান বাজার, শান্তিনগরসহ কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা দরে। সেই হিসাবে চার দিনে বেড়েছে ৫০ টাকা। একইভাবে বড় আকারের চায়না রসুন কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা।
সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে দেখা গেছে, এক বছরের ব্যবধানে দেশি রসুনের ২৪০ শতাংশ এবং আমদানি করা চায়না রসুনের ৯৫ শতাংশ দাম বেড়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে রসুনের চাহিদা রয়েছে ৭ লাখ ১০ হাজার টন। এর বিপরীতে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৩০০ টন। তবে উৎপাদনের পর তা সংরক্ষণ করা পর্যন্ত কমবেশি ২০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। সে হিসাবে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টন রসুন নষ্ট হয়। ফলে চাহিদার প্রায় দুই লাখ টন রসুনের ঘাটতি থেকে যায়, যা মেটানো হয় আমদানির মাধ্যমে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ও আমদানিকারক সূত্রে জানা গেছে, রসুন আমদানির ৯০ শতাংশই আসে চীন থেকে। বাকিটা আসে ভারত, মিয়ানমারসহ অন্য দেশ থেকে।
এ বছর উল্লেখযোগ্য হারে রসুন আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ১৫ হাজার টন রসুন আমদানির অনুমতি মিলেছে। এর মধ্যে আমদানি হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার ৫০০ টন।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে রসুনের মৌসুম ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত। ফলে নতুন রসুন উঠতে এখনও দীর্ঘ সময় বাকি। এর মধ্যে আমদানি ব্যাহত হলে রসুনের বাজার আরও চড়া হতে পারে।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ-রসুন ব্যবসায়ী এরশাদ হোসেন বলেন, পেঁয়াজের দর বাড়ার মধ্যেই রসুনের দর বেড়েছে। পেঁয়াজের চেয়ে রসুনের চাহিদা কম থাকায় ক্রেতাদের মধ্যে দাম বাড়ার আলোচনা কম। তবে আমদানি কমে গেলে রসুনের বাজারও চড়া হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
গত শুক্রবার সকালে খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজের কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ এবং ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ১০০ থেকে ১২৫ টাকার মধ্যে ছিল। এর পর কয়েক ধাপে ১০০ টাকার মতো বেড়ে পরদিন শনিবার দেশি পেঁয়াজের কেজি সর্বোচ্চ ২৫০ এবং ভারতীয় পেঁয়াজের দর ২০০ টাকা ছুঁয়েছিল। পরে সারাদেশের পেঁয়াজের পাইকারি ও খুচরা বাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার তদারকি জোরদার, ভারতের বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়ায় দাম কমতে শুরু করে। ভোক্তা অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকালও সারাদেশে অভিযান চালিয়ে ১১৫ প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ ৩৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তাতে গত তিন দিনে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৭০ টাকা কমে ১৭০ থেকে ১৮০ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিতে ৫০ টাকার মতো কমে ১৫০ টাকার আশপাশের বিক্রি হচ্ছে। তবে কোনো কোনো বাজারে দুই ধরনের পেঁয়াজ এর চেয়ে ১০ টাকা বেশি দরেও বিক্রি হয়েছে।
চট্টগ্রামে দুই কেজির বেশি পেঁয়াজ না কেনার অনুরোধ এদিকে চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে পেঁয়াজের মূল্য, মজুত পর্যবেক্ষণ ও পাইকারি থেকে খুচরা বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের ছয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নগরের বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালানো হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরের চাক্তাই, রিয়াজুদ্দিন বাজার, দুই নম্বর গেটের কর্ণফুলী মার্কেট, পাহাড়তলী বাজার ও আগ্রাবাদের চৌমুহনী এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানা করা হয়। কর্ণফুলী মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করেন সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম। এখানে খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের কেজি ১২০ টাকার বেশি না রাখতে ৫০টির অধিক দোকানিকে সতর্ক করেন তিনি। এ ছাড়া ২ কেজির বেশি পেঁয়াজ কেনা থেকে বিরত থাকতে ক্রেতাদের অনুরোধ জানানো হয়।