
চিকেনপক্স (ভ্যারিসেলা) বা জলবসন্ত একটি পরিচিত ও ছোঁয়াচে রোগ। যে কোনো বয়সের লোক এই জীবাণুতে আক্রান্ত হতে পারে। তবে নবজাতক এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রাপ্তবয়স্করা এ রোগে আক্রান্ত হলে রোগটির তীব্রতায় মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।
যেভাবে ছড়ায় : আক্রান্ত শিশুর সরাসরি সংস্পর্শে এলে, আক্রান্ত শিশুর থুথু, হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে, আক্রান্ত শিশুর ব্যবহৃত সামগ্রীর মাধ্যমে, গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের মধ্যে মা আক্রান্ত হলে গর্ভজাত শিশুও আক্রান্ত হতে পারে, শিশু প্রসব হওয়ার এক সপ্তাহ আগে ও পরের সময় মা আক্রান্ত হলে নবজাতকের চিকেনপক্স হতে পারে।
চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র
রোগীকে কুসুম গরম তরল খাবারসহ স্বাভাবিক যে কোনো খাবার অল্প করে বারবার দিতে হবে। প্যারাসিটামল জাতীয় সিরাপ দেওয়া যেতে পারে। চুলকানি হলে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ অথবা ক্যালামাইন লোশন শরীরে ব্যবহার করতে হবে। মুখগহ্বর সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ব্যাকটেরিয়াজনিত ত্বকের সংক্রমণ হলে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিতে হবে। রোগের তীব্রতায় (চামড়ায় প্রদাহ বেড়ে গেলে, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে) অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।
সময়কাল : গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ঠান্ডার সময় এ রোগ বেশি দেখা দেয়। তবে বছরজুড়েই এর বিস্তার দেখা যেতে পারে।
লক্ষণ : সাধারণত ২-৮ বছরের শিশুর বেশি হতে দেখা যায়। প্রথম দিকে জ্বর, যা ১০০-১০৬ ফারেনহাইট পর্যন্ত ওঠে। ক্লান্ত লাগা, মাথাব্যথা, অরুচি, বমি ভাব হতে দেখা যায়। তবে এক বছর বয়সের নিচের শিশুদের প্রাথমিক এই লক্ষণগুলো সাধারণত দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে সরাসরি প্রথম দিনেই র্যাশ অথবা লালচে দাগ চামড়ায় দেখা যেতে পারে। দানাগুলো প্রথম দিকে লালচে ভাব, পরে উঁচু হয়ে পানিপূর্ণ হয়ে ৩-৪ দিন থাকার পর ঘোলাটে হয়ে যায়।
চিকেনপক্স থেকে জটিলতা
চিনেকপক্স থেকে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা, যেমন– ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ত্বকে সংক্রমণ, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, নিউমোনিয়া, স্নায়ুতন্ত্রের সংক্রমণ-এনকেফালাইটিস, সেরেবেলার এটাক্সিয়া, গর্ভজাত শিশুর স্নায়ুতন্ত্র, চোখ, হাত, পা ও চামড়ার গঠন ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে, মৃত শিশুও প্রসব হতে পারে।
প্রতিরোধ : চিকেনপক্স যেহেতু ছোঁয়াচে রোগ, তাই আক্রান্ত শিশুর কাছ থেকে আলাদাভাবে রাখতে হবে। চিকেনপক্সের টিকা দিয়ে এ রোগের বিরুদ্ধে দীর্ঘকালীন প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলা সম্ভব। ৯ মাস বয়সের পর থেকেই এই টিকা দেওয়া যায়। ১২ বছর পর্যন্ত একটি ডোজ ও ১২ বছরের বেশি হলে দুটি ডোজ (দুই সপ্তাহের ব্যবধানে) দিতে হয়।
লেখক : অধ্যাপক, শিশু বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, আলোক হেলথকেয়ার লিমিটেড, মিরপুর, ঢাকা।