দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাদ পড়লেন বিতর্কিত এমপি রতন; নতুন প্রার্থী রনজিত

Home Page » সারাদেশ » দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাদ পড়লেন বিতর্কিত এমপি রতন; নতুন প্রার্থী রনজিত
সোমবার ● ২৭ নভেম্বর ২০২৩


সাজেদা আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি, বঙ্গনিউজ :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে তিনটিতে নতুনমুখ এবং দুটিতে পুরতনরাই বহাল রয়ে গেছেন। রবিবার(২৬ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় আ. লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এতে হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের ৫টি আসনের তিনটিতে নতুন মুখ ও দুটি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও সাবেক এমপির নাম ঘোষনা করেন তিনি। তারা হলেন- সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা, মধ্যনগর, জামালগঞ্জ ও তাহিরপুর উপজেলা) সুনামগঞ্জ জেলা আ. লীগের সদস্য ও সিলেট জেলা আ. লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট রনজিত সরকার, সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা উপজেলা) পুলিশের আইজিপির ছোটভাই চৌধুরী আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদ (আল আমিন চৌধুরী), সুনামগঞ্জ-৩ (শান্তিগঞ্জ-জগন্নাথপুর উপজেলা) সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সুনামগঞ্জ-৪ (সুনামগঞ্জ সদর-বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা) পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার উপজেলা) সাবেক এমপি মহিবুর রহমান মানিক।

এদিকে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তদের নাম ঘোষনার পরপরই তাৎক্ষণিক মুঠোফোনে এ খবর পৌঁছে যায় হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে। নাম ঘোষনার পরপরই সুনামগঞ্জের ৫টি আসনের বিভিন্ন উপজেলায় তাদের কর্মী ও সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে বের করেন আনন্দ মিছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানাযায় , এমপি রতনকে বাদ দিয়ে রনজিতকে দলীয় প্রার্থী ঘোষনার পরপরই হাজারো নেতা-কর্মী ও সাধারন মানুষের ঢল নামে মধ্যনগর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ ও তাহিরপুর উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে। এসময় সমবেত নেতাকর্মী ও জনসাধারণ স্বতঃস্ফুর্তভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আনন্দ মিছিল ও নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন।

ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর ও তাহিরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-১ আসনটি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে এটির আয়তন ও জনসংখ্যাও অন্য আসনগুলোর চেয়ে বেশী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ১৫ জন। রনজিত সরকার মনোনয়ন পাওয়ায় ও এ আসনে টানা তিনবারের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ছিটকে পড়ায় দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মতো খুশি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সাধারন ভোটারগণও।

জানা গেছে, নানা কারনে টানা তিনবারের নির্বাচিত এমপি রতনকে নিয়ে আলোচনার চেয়ে সমালোচনাই হয়েছে বেশি। সংখ্যালঘু নির্যাতন, চাঁদাবাজি, নারী কেলেঙ্কারিসহ ক্যাসিনো কান্ডে সম্পৃক্ততা, জ্ঞায় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ, একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, বিদেশে অর্থপাচারের মতো অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শুধু তাই নয় তাকে দেয়া হয়েছিল দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞাও।

গতবছর সরকারি টাকায় নির্মিত বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ম্যুরালের ডিজাইন পরিবর্তন করে নিজের ছবি দেয়ায় দেশব্যাপী সমালোচনার জন্ম দেন তিনি। এছাড়াও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থ আত্মসাৎ, জোরপূর্বক অন্যের জায়গা দখল, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে।

চলতি সপ্তাহেও নৌ পথে চাঁদাবাজির ঘটনায় এমপি রতনের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তবে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়বেন রতন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রতনের এক ঘনিষ্ঠ নেতা জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন মনোনয়ন বঞ্চিত আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন।

এলাকাবাসী ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, সুনামগঞ্জ-১ সংসদীয় আসনের চারটি উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে গত ১৫ বছর ধরে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন দলের মনোনয়ন প্রাপ্ত অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার।

তাহিরপুর উপজেলার বাসিন্দা রনজিত দীর্ঘদিন ধরে সিলেট জেলার রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালনের পাশাপাশি এ আসনের চার উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে ও হাটবাজারে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে একেবারে জনগণের দোরগোড়ায় গিয়ে তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনেন এবং সেসব সমাধান করেন। এভাবেই এলাকাবাসীর কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। তার এ জনপ্রিয়তাই তাকে সুনামগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনয়ন পেতে সহায়তা করেছে।
মধ্যনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাজেদা আহমেদ বলছিলেন দলের ও নেতাকর্মীদের প্রতি রনজিত সরকারের আন্তরিকতার কথা। দলের নেতাকর্মীদের তিনি এক সূতায় গেঁথে রেখেছেন বলে জানান সাজেদা আহমেদ।এবারের নির্বাচনে রনজিত সরকার বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুব্রত সামন্ত তালুকদার বলেন, রনজিত সরকার গন মানুষের নেতা। তিনি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় এ আসনে আওয়ামী লীগের বিজয় সুনিশ্চিত হলো।

ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শামীম আহমেদ মুরাদ বলেন, রনজিত দা নৌকা প্রতীক পাওয়ায় আমাদের সুনামগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগ কলঙ্কমুক্ত হলো।

তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এখলাসুর রহমান তারা বলেন, হাওরাঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর আশ্রয়স্থল অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার। তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রতি হাওরবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
মধ্যনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক পরিতোষ সরকার বলেন, রনজিত সরকার নৌকা প্রতীক পাওয়ায় দল- মত নির্বিশেষে সকলেই খুশী। সুনামগঞ্জ -০১ আসনের সর্বস্থরের জনগন এবার উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ভোট দিবে। এতে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ আবারও জেগে উঠবে।

দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অ্যাড. রঞ্জিত সরকার বলেন, শুধু অবহেলিত হাওর এলাকার জনগণের সেবা করার জন্য নির্বাচন করব।

বাংলাদেশ সময়: ১০:১৮:৪২ ● ২৭৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ