নূর হোসেনের গণতন্ত্র আর কত দূর?

Home Page » ইতিহাস » নূর হোসেনের গণতন্ত্র আর কত দূর?
শুক্রবার ● ১০ নভেম্বর ২০২৩


  ফাইল ছবিঃ শহীদ নূর হোসেন , গণতান্ত্রিক আন্দোলন ,

১০ নভেম্বর ১৯৮৭ একটি দিন, একটি জীবন্ত ইতিহাস। উদোম শরীরে রাজপথে নামেন নূর হোসেন। বুকে-পিঠে রৌদ্রের অক্ষর লেখা সেই অনন্য স্লোগান। পুলিশের বন্দুকের সিসা নূর হোসেনের বুকে নয়, বাংলাদেশের হৃদয় যেন ফুটো করে দেয়। মানবিক আর্তনাদের ৩৪ বছর। শহীদ নূর হোসেন জীবন দিয়ে দুর্বল গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে উজ্জীবিত করে গেছেন। ’৮৭-র ১০ নভেম্বর নূর হোসেনের শহীদি মৃত্যু আন্দোলনের দুই নেত্রীকে ঘরে ফেরার পথ রুদ্ধ করে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ’৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত হয় গণতন্ত্রের বিজয়। নূর হোসেনের রক্তের দামে কেনা হলো ’৯১–তে, নতুন সংসদীয় গণতন্ত্রের সংসদ। কোনো কোনো মৃত্যু পাখির পালকের চেয়েও হালকা, আর কোনো কোনো মৃত্যু পাহাড়ের চেয়েও ভারী। এ উক্তি মাও সে–তুংয়ের। দেশের জন্য অনেকেই আন্দোলন করেন, দেশপ্রেমিকও অনেকেই আছেন। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর উদোম শরীরে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ মুদ্রিত করে নূর হোসেন নিজেই হয়েছিলেন সময়ের সাহসী সৈনিক। নূর হোসেনের আত্মত্যাগের মূল্যায়ন করতে গেলে কেউ তাঁর সাহসেরা প্রশংসা করেন। কেউ বলেন পাগলামি। কিন্তু অ্যারিস্টটল বলেছেন ‘পাগলামি ছাড়া প্রতিভা থাকতে পারে না’। নূর হোসেন আত্মাহুতি দিয়েছেন, আর আশ্চর্যজনকভাবে আমরা বেঁচে আছি। নূর হোসেনরাই বাংলাদেশে বারবার গুলি খায়, পড়ে যায়, আবার উঠে দাঁড়ায়। বঞ্চিতরা যে লড়াই করতে পারে তার কারণ এই নূর হোসেনরা। নূর হোসেনের রক্তের দামে কেনা সংসদে ধারাবাহিকতায় দেশের বড় দুই দল ক্ষমতায় আসে–যায়, এরা সবাই গণতন্ত্রের জন্য রাজনীতির আসর সরগরম করে। কিন্তু নূর হোসেনের আত্মোৎসর্গের জাতীয় স্বীকৃতি কোথায়? নূর হোসেনের শাহাদত বরণের সময় আমি প্রবাসে ছিলাম। দেশে ফিরে ১৯৯৭ সালে ১০ নভেম্বর ভোরে জুরাইনের তাঁর কবরস্থানটিতে গিয়েছিলাম শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। কবরের দৈন্যদশা আমাকে ব্যথিত করে। কবরটি পাকা করে দিই। শহীদ নূর হোসেনের স্মরণে বিনামূল্যে ভ্রাম্যমাণ সেবা প্রদান শুরু করেছিলাম। নূর হোসেনের গণতন্ত্র কি মুক্তি পেয়েছে? সুশাসন ও জবাবদিহির কোনো ব্যবস্থা কোনো সরকার এ যাবৎ করতে পারেনি। গণতন্ত্রের অন্যতম উপাদান পরমতসহিষ্ণুতা একবারেই অনুপস্থিত। নূর হোসেনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ গণতন্ত্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে চলেছেন সবাই। নূর হোসেনের অবমূল্যায়ন করেন অনেকেই। তাঁর সামাজিক ভিত্তি, পেশা, শিক্ষা ছিল না বলে যথাযথভাবে শাহাদত দিবসও পালন করা হয় না। নূর হোসেনের বৃদ্ধ বাবা রোগশোক–অবহেলায় অভাব-অনটনের ভেতর যারা যান।

আজ নূর হোসেনের ৩৪তম শাহাদাত বরণ দিবসে আমাদের শপথ হোক সব সংকীর্ণকতা, দলীয় ও ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে যেকোনো মূল্যে আমরা বাংলাদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব। শহীদ নূর হোসেনের রক্তের ঋণ শোধ করব।

ডা. মো. নুর উদ্দিন চিকিৎসক ও পরিবেশকর্মী

বাংলাদেশ সময়: ৯:১১:৫৯ ● ১৬৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ