বঙ্গ-নিউজঃ দিনভর কত নাটকই না হলো। প্রথমবারের মতো টাইমড আউট হলো, মাঠে উত্তেজনা ছড়ালো, সাকিব-শান্ত’র সেঞ্চুরিও মিস হলো। এর ফাঁকেই হারতে থাকা বাংলাদেশ দলের আকাশে দেখা মিললো আলোর আভা। বিশ্বকাপের অন্তিম লগ্নে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ হাসি হাসলো বাংলাদেশ। সাকিবদের জয় ৩ উইকেটে।
টানা ছয় ম্যাচ হেরে ইতোমধ্যেই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছে সাকিব-তামিমরা। তবে হ্যাঁ, এই জয়ের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার স্বপ্ন জিইয়ে রাখলো বাংলাদেশ। তবে এই হারে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেলো লঙ্কানরা।
সোমবার (৬ নভেম্বর) দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপে নিজেদের অষ্টম ম্যাচ খেলতে নামে দু’দল। দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাসকে হারিয়ে ইনিংসের শুরুতে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়লেও শান্ত ও সাকিবের জুটিতে ভর করে জয়ের খুব কাছেই চলে যায় বাংলাদেশ।
২৮০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ১৭ রানে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তামিম জুনিয়র। ৫ বলে ৯ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন তিনি। সেখান থেকে শান্তকে সাথে নিয়ে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করছিলেন অপর ওপেনার লিটন দাস।
কিন্তু দলীয় ৪১ রানে লিটনও ফেরেন ২৩ রান করে। দুটি উইকেটই শিকার করেন দিলশান মাধুশঙ্কা। তবে চারে ব্যাটিংয়ে নামা অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে নিয়ে দারুণ জুটি গড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত। ১৪৯ বলে ১৬৯ রানের দারুন জুটি গড়েন তারা। তবে ইনিংসের ৩১ দশমিক ১ ওভারে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের শিকার হন সাকিব। আউট হওয়ার আগে ২ ছক্কা ও ১২টি চারের মাধ্যমে ৬৫ বলে ৮২ রান করেন অধিনায়ক।
সেঞ্চুরির পথে থাকা শান্তও পাননি সেঞ্চুরির দেখা। তাকেও বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান ম্যাথুস। আউট হওয়ার আগে ১০১ বলে ৯০ রান করেন তিনি। কোনো ছক্কা না মেরে ১২টি চারের মাধ্যমে তিনি এ রান করেন।
এরপর দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক। তবে বেশিদূর যেতে পারেননি তারা। ১৩ বলে ১০ রান করে দিলশান মাদুশঙ্কার বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান তিনি। দলকে জিতিয়ে ফিরতে পারেননি মাহমুদউল্লাহও। ১টি ছক্কা ও ৩টি চারের মাধ্যমে ২৩ বলে ২২ রান করে থিকসানার বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। মেহেদী হাসান মিরাজও ফেরেন তার পরপরই। ৫ বলে ৩ রান করে থিকসানার শিকার হন তিনি।
তবে তাওহিদ হৃদয় ও তানজিম হাসান সাকিবের হাত ধরেই জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ। ২ ছক্কায় ৭ বলে ১৫ রান করে অপরাজিত থাকেন হৃদয়। তানজিম সাকিব করেন ৬ বলে পাচ রান। ইংসের ৪১ দশমিক ১ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিলো ২ রান। ম্যাথুসের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে ছিলো তানজিম। শর্ট লেন্থের ডেলিভারিটি তানজিমের পায়ে লেগে চলে যায় বাউন্ডারির বাইরে। ফলে ৮ দশমিক ১ ওভার বাকি থাকতেই ৩ উইকেটের জয় তুলে নেয় টাইগাররা।
শ্রীলঙ্কার হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নিয়েছেন দিলশান মাদুশঙ্কা। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও মাহেশ থিকসানা নিয়েছেন দু’টি করে উইকেট।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। শরিফুল ইসলামের বলে ইনিংসের ষষ্ঠ বলে উইকেটরক্ষক মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লঙ্কান ওপেনার কুশাল পেরেরা। তিনি করেন ৪ রান। ৫ রানেই প্রথম উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
এরপর নিশাঙ্কা-মেন্ডিস জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। তাদের ব্যাটে প্রথম ১০ ওভারে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫২ রান তোলে লঙ্কানরা। মেন্ডিস ধীরে রান তুললেও চড়াও হন নিশাঙ্কা। ৬১ রানের এই জুটি ভাঙ্গেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে তানজিম সাকিবের হাতে ক্যাচ হয়ে ফেরেন অধিনায়ক মেন্ডিস। ফেরার আগে ৩০ বলে ১৯ রান করেন তিনি।
১১ দশমিক ৩ ওভারে দ্বিতীয় উইকেট হারানো লঙ্কান শিবিরে পরের ওভারেই আবার আঘাত হানে টাইগাররা। এবার উইকেট নেন তানজিম সাকিব। তার বলে পরিষ্কার বোল্ড হয়ে ফেরেন ভয় জাগানো নিশাঙ্কা। ফেরার আগে তিনি ৩৬ বলে করেন ৪১ রান। তার ইনিংসটি ছিল ৮টি চারে সাজানো।
ইনিংসের ২৫তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন অধিনায়ক সাকিব। প্রথম বলেই সাদিরা সামারাবিক্রমার কাছে চার খেয়ে বসেন তিনি। তবে পরের বলেই মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ বানিয়ে সামারাবিক্রমার উইকেট তুলে নেন সাকিব।
এরপরই শুরু হয় নাটক! পরবর্তীতে ব্যাটে নামা লঙ্কান অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন কোনো বল খেলার আগেই। হয়েছেন ‘টাইমড আউট’। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিরল এই আউটের শিকার হওয়া প্রথম ব্যাটার বনে যান ম্যাথুস।
এরপরে ধননঞ্জয়া ডি সিলভাকে নিয়ে ভালোই আগাচ্ছিলেন চারিথ আসালাঙ্কা। তবে ইনিংসের ৩৮তম ওভারের শেষ বলে মিরাজের বলে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হয়ে ফেরেন ধননঞ্জয়া। ১ ছক্কা ও ৪টি চারের মাধ্যমে ৩৬ বলে ৩৪ রান করেন তিনি।
৪৬তম ওভারে মাহেশ থিকসানাকে নাসুমের হাতে ক্যাচ বানিয়ে আউট করেন শরিফুল। সাজঘরে ফেরার আগে ৩১ বলে ২২ রান করেন তিনি। ৪৭ দশমিক ৫ ওভারে ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি তুলে নেন চারিথ আসালাঙ্কা। ১০১ বলে ১০০ রানের দেখা পান তিনি।
তবে মারমুখী হতে গেলেও সেঞ্চুরির পরে একটি ছক্কার বেশি মারতে পারেননি আসালাঙ্কা। ৪৮ দশমিক ৩ ওভারে তানজিম সাকিবকে ছক্কা মারেন তিনি। কিন্তু পরের বলেই লিটনের হাতে ক্যাচ বানিয়ে তার উইকেট তুলে নেন তানজিম হাসান সাকিব। আউট হওয়ার আগে ৫টি ছক্কা ও ৪টি চারের মাধ্যমে ১০৫ বলে ১০৮ রান করেন তিনি।
একই ওভারের শেষ বলে নতুন ব্যাটিংয়ে নামা কাসুন রাজিথাকেও শূন্য রানেই ফিরিয়ে দেন তানজিম।
পরের ওভারে অর্থাৎ ৪৯ দশমিক ৩ ওভারে দুশমন্থ চামিরাকে রান আউট করলে নির্ধারিত ৫০ ওভারের খেলায় ৩ বল বাকি থাকতে ২৭৯ রানে অলআউট হয়ে যায় লঙ্কানরা। ফলে বাংলাদেশের জিততে হলে করতে হবে ২৮০ রান।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নিয়েছেন তরুণ তুর্কী তানজিম সাকিব। জোড়া উইকেট নিয়েছেন অধিনায়ক সাকিব ও শরিফুল। বাকি একটি উইকেট নিয়েছেন মিরাজ।