রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন:৩২৪ তম পর্ব, বাদুড়তলা শাখা ,বগুড়া-জালাল উদ্দীন মাহমুদ

Home Page » সাহিত্য » রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন:৩২৪ তম পর্ব, বাদুড়তলা শাখা ,বগুড়া-জালাল উদ্দীন মাহমুদ
সোমবার ● ৬ নভেম্বর ২০২৩


জালাল উদ্দীন মাহমুদ

একজন দুরুহ কর্মী-২

আমি বাদুড়তলা শাখায় যোগদান করে প্রথমেই টাইপিস্ট কাম ক্লার্ক তোজাম্মেলের খোঁজ করলাম। একজন দেখিয়ে দিল। এই তোজাম্মেল। তোজাম্মেল টেবিলে কাজ করছিল। আমার কথা শুনে উঠে দাড়াঁল। ছালাম দিল। তারপর হঠাৎ করে নাটকীয়ভাবে ভাষন দেয়া শুরু করল- আসসালামো আলাইকুম স্যার। আপনি যে আজ বাদুড়তলা শাখায় যোগদান করলেন এতে আমরা সবাই অনেক খুশি। আমরা অনেক দুঃখ কষ্টের মধ্যে থাকি। আপনি আমাদের বেশি করে সুযোগ-সুবিধা দিবেন, তাহলে আমরাও আপনার জন্য দোয়া করব। সে সারাক্ষন তার টেবিলের দিকে তাকিয়ে কথা বলছিল। আমার দিকে বা অন্য কারো দিকে একবারও তাকায়নি। কিন্তু কথা শেষ হতেই সে গেটের কাছে যেয়ে হাত জোড় করে আমাকে বিনয়ের সাথে ডাকল। তার এমন ডাক আমি উপেক্ষা করতে পারলাম না। উঠে তার কাছে গেলাম। সে আঙুল দিয়ে বাহিরে একটা জায়গা দেখিয়ে বললে, স্যার ঐ দেখা যায় তাল গাছ ওখানে আমার বাড়ি। আমি এক দৌঁড়ে বাড়ি যাব আর এক দৌঁড়ে আসব। জরুরী কাজ আছে স্যার । সে এ কথা বলতেই শাখার সবাই প্রায় সমস্বরে “না-না” করে উঠল। তোজাম্মেল অবশ্য আমার অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করল না, দৌঁড় দিয়ে বের হয়ে চলে গেল। কেউ আর কিছু বলল না। শুধু সেকেন্ড অফিসার তবারক সাহেব মৃদু স্বরে বলল-তোজাম্মেল তো আর আসবে না। তার কাজ এখন কে করবে? আমাকেই করতে হবে। ম্যানেজার দুলাল ভাইকে তোজাম্মেলের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে উনি বললেন, তার কথা আর বলবেন না। একটা আস্ত ফাজিল। এক নং ফক্কর। যাকে বলে ৪২০ ।
হতে পারে ফাজিল । হতে পারে ফক্কর। হতে পারে ৪২০। তাই বলে তার কি কোনো প্রতিকার নাই। মনে মনে ভাবতে থাকলাম আমি।
আমি অবশ্য অফিস শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভেবেছি –তোজাম্মেল হয়তো দৌঁড় দিয়ে অফিসে ফেরৎ আসবে। আমার আশা গুড়ে বালি। তোজাম্মেল আর সেদিন আসলই না। কেউ অবশ্য তার ব্যাপারে আর কোন মন্তব্যও করল না। আমার কাছে মনে হলো এ রকম বিষয় সবারই গা সওয়া হয়ে গেছে।
আগেই বলেছি আমাকে শাখার চার্জ বুঝে দিয়ে রিলিজ নিয়ে যাবার ব্যাপারে ম্যানেজার দুলাল ভাইয়ের কোন গরজই পরিলক্ষিত হচ্ছিল না। উনি এটা সেটা করেই বেলা পার করেন। অফিস টাইম পার হলেই দেখি অনেকেই তার সাথে গল্প-গুজব করতে আসেন। সবাই বিদায় হবার পর উনি প্রত্যেকটা তালা এবং জানালার ছিটকিনি ঠিকমত লাগানো হয়েছে কিনা তা বারবার পরীক্ষা করেন। পিওন ইদ্রিস ব্যাংকের ভিতরেই রাত্রে থাকে। আর দোতালায় তো অডিটরদের থাকার ব্যবস্থা। বগুড়ায় অডিট টিম আসলে তারা সেখানেই থাকত। ভিতরে লোক থাকেই-তারপর তালা বিশেষ করে ছিটকিনি বারবার চেক করার কি আছে। তারপর গার্ড তথা পিওন ভিতর থেকে কল্যাপসিবল গেটের ৩টি তালা লাগিয়ে দেয়ার পরও উনি বাহিরে দাড়িয়ে তা বারবার চেক করতেন। তার চেকিং শেষ হলে ইদ্রিস গেটের কাঠের দরজাটা লাগিয়ে দিত। আমি অনেকবার বললাম – এসব বারবার চেকের দরকার নাই। গার্ড ইদ্রিস তো ভিতরেই থাকে। জানালা খুলতে চাইলে সে খুলতে পারে। আর গেটের তালার চাবি তো ইদ্রিসের কাছেই থাকে। আপনি শুধু স্ট্রংরুমের তালা চেক করুন। কে শোনে কার কথা। তার এ বাতিক রোগে প্রত্যহ অন্তত ১৫/২০ মিনিট সময় ব্যয় হতো। এর পর ধীরে সুস্থে তার ৫০ সিসি হোন্ডা লাল রঙের মোটর সাইকেলে ষ্টার্ট দিতেন। আমি পিছনে বসতাম। আমার বাসার পাশ দিয়েই তাকে যেতে হতো। আমায় যখন বাসায় নামিয়ে দিয়ে যেত তখন প্রায়ই ঘড়িতে রাত ১১টা পার হয়ে যেত।
এখনকার যুগে বসে সে যুগের ব্যাংকিং ফ্লেভার পাওয়া সত্যিই কঠিন। তার উপর ব্যাংকিং জগতে কম্পিউটার প্রবেশের পর সে যুগের ব্যাংকিং ইতিহাস এ যুগে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে।
থাক সে সব কথা । আমি তোজাম্মেলের কথা বলছিলাম। আগেই বলেছি ,টাইপিস্ট কাম ক্লার্ক তোজাম্মেল অগ্রণী ব্যাংক বাদুড়তলা শাখায় লেজার কিপারের দ্বায়িত্বে ছিল। বাসা ব্যাংক ভবনের কাছেই। তাকে নিয়ে শাখায় সংঘটিত চমকপ্রদ ঘটনার বর্ণনা এখন শুরু করি।
জোনাল অফিসের তাগাদার প্রেক্ষিতে আমাকে চার্জ দিয়ে দুলাল ভাই এক সময় চলে গেলেন। আমি অফিস মোটামুটিভাবে সামলাচ্ছি , ননব্যাংকি গুণ সম্পন্ন বিচিত্র কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও কোনো রকমে সামলাচ্ছি। কিন্তু তোজাম্মেলকে নিয়ে পড়েছি মহাবিপাকে।
পরবর্তী পর্ব আগামীকাল

বাংলাদেশ সময়: ১১:১৮:০৭ ● ১৭২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ