শুভ জন্মদিন, শিল্পী আব্বাস উদ্দীন-স্বপন চক্রবর্তী

Home Page » সাহিত্য » শুভ জন্মদিন, শিল্পী আব্বাস উদ্দীন-স্বপন চক্রবর্তী
মঙ্গলবার ● ৩১ অক্টোবর ২০২৩


ছবি-উইকিপিডিয়া-ীশল্পী আব্বাস উদ্দীন
১৯২৯ সাল। ব্রিটিশ ভারতের রংপুর জেলা। এই জেলার অন্তর্গত চিকনবাটি গ্রামে এক বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। গ্রামের ফজিল উদ্দিন সরকারের বড় মেয়ে বেগম লুৎফুন্নেছা সাথে বিয়ের রাতে ঘটলো এক অদ্ভুত ঘটনা। সে রাতে বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন শিল্পীর কোলকাতার বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব। ছিলেন বন্ধু তকরিম আহমেদ- যিনি খুব ভালো সেতার বাজাতে পারতেন। বিয়ের পর অতিথি পাড়া প্রতিবেশিদের অনুরোধে যার বিয়ে সেই বিখ্যাত শিল্পীর গানের অনুষ্ঠান শুরু হলো। অনুষ্ঠানে যেই না তকরিম আহমেদ তার সেতারে টুং টাং আওয়াজ তুলেছেন, আর সেই সাথে আশেপাশের রক্ষণশীল মুসলিমরা তুমুল আপত্তি জানালেন। মুসলমানের বিয়ে বাড়ি, এখানে গান-বাজনা ? এ সব কেন? যন্ত্রসংগীত কেন? এ সবের তো কোন সামাজিক প্রচলন নেই। তা আচমকা সেই বাধায় কোলকাতার বন্ধু বান্ধবরা বেশ মনোক্ষুন্ন হলেন। আর বন্ধুদের অপমানে সদ্য বিয়ে করলেন যে লোক সংগিত শিল্পী তিনি ভীষণ ক্ষীপ্ত হলেন। গানের অনুষ্ঠানে গন্ডগোল লাগার সময় তিনি সবার অলক্ষে কাউকে কিছু না বলে শ্বশুর বাড়ি থেকে সেই রাতেই নিঃশব্দে বেড়িয়ে চলে গেলেন। সে রাতে ভীষণ ঝড় হয়েছিল। সারা রাতধরে সেই ঝড় জলের মধ্যে সবাই বর কোথায় বর কোথায় বলে খোঁজাখোঁজি করলেন। কিন্তু বরকে কোথাও পাওয়া গেল না। অবশেষে ভোর বেলায় তাকে খোঁজে পাওয়া গেল। বিয়ে বাড়ি থেকে অনেক দুরে একটা হাই স্কুলে সারা রাত বাইরে ঝড় আর নিজের মনের মধ্যে ঝড় এই দুই ঝড়ের সাথে যুদ্ধ করে করে ভোরের দিকে ক্লান্ত হয়ে টেবিলের উপর ঘুমিয়ে পড়ে ছিলেন। তার প্রতিবাদ করার ধরণটাই ছিল এই রকম। নিঃশব্দ নীরব প্রতিবাদ। কোচবিহার জেলার এই বিখ্যাত লোক সংগীত শিল্পীকে নিশ্চয়ই আপনারা চিনতে পেরেছেন। তিনিই হলেন বিখ্যাত শিল্পী আব্বাস উদ্দীন আহমেদ। তার জন্মদিনে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এই খোর প্রচেষ্টা। ১৯০১ সালের ২৭শে অক্টোবর কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমার বলরামপুর গ্রামে তিনি জন্ম গ্রহন করেছিলেন।
আব্বাস উদ্দীনের কথা মনে পড়লে তার বিখ্যাত গানগুলির কথা মনে পড়ে যায়। যে গানগুলি কোন দিনও পুরানো হবেনা। এই গানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ১) মাঝি বাইয়া যাও রে ২) নাও ছাড়িয়া দে রে মাঝি পাল উড়াইয়া দে ৩) প্রেম জানে না রসিক কালাচাঁন ৪) আল্লআহ মেঘ দে পানি দে ছায়া দেরে তুই ৫) ফান্দে পড়িয়া বগায় কান্দে রে।
আসলে তার জনপ্রিয় গান এতো অজস্র যে এ ভাবে উল্লেখ করা কখনোই সম্ভব নয়। পল্লী গীতি বলুন ,স্বদেশী গান বলুন, ইসলামী গান বলুন উর্দু গান বলুন, আধুনিক গান বলুন – সব ক্ষেত্রেই তার মৌলিকতা এবং সাফল্য অকল্পনীয়।
কোচবিহারের তুফানগঞ্জ স্কুলে উচ্চ প্রাইমারি পরীক্ষা দিয়ে তিনি বাড়িতে এসেছেন। বাড়িতে মানে কোচবিহারের তুফানগঞ্জ মহকুমার বলরামপুর গ্রাম। বিকেলে মাঠে যখন তিনি বন্ধুদের সাথে খেলছিলেন তখনই এক বন্ধু এসে জানালো ,আব্বাস, তোদের বাড়িতে কলের গান হচ্ছে। সে কথা শুনেই আব্বাস উদ্দীন দৌড়ে চলে এসেছিলেন বাড়িতে। তিনি ছোট থেকেই গান বলতে পাগল। সে যাত্রা পালার গানই হোক,আর মহররমের মর্শিয়ার গানই হোক। গানটা সব সময় চুম্বকের মতো তাকে টেনে নিয়ে গেছে। তা সে দিন বাড়িতে এসে দেখলেন একটা লোক বাড়ি বাড়ি ঘুরে কলের গান শুনাচ্ছে। বিনিময়ে এক সের বা দুসের চাল অথবা পয়সা- যে যা দেয় তাই নিচ্ছে। আব্বাস উদ্দীন তো ভীষণ অবাক হয়ে গিয়ে ছিলেন। সত্যি সত্যিই তো কলের ভিতর থেকে গান বেড়িয়ে আসছে। তিনি লোকটাকে বললেন, খুলে দেখাও তো , ভিতরে কে গান গাইছে। লোকটা বললো, চাল নিয়ে এসো, আমি দেখাচ্ছি ভিতরে কে গান গাইছে। আব্বাস উদ্দীন মহা উল্লাসে বাড়ির ভিতর থেকে চাল নিয়ে আসলেন। লোকটা তখন যন্ত্র খোলে দেখালো। না আছে কোন লোক না আছে কোন অন্য কেউ। লোকটা বললো ,ভিতরে কোন লোক নেই গো। এই যে কুকুর মার্কা প্লেট , মানে এই যে কালো রঙের রেকর্ড খানা দেখতে পাচ্ছনা এই রেকর্ডের উপরে এই যে সূঁইয়ের মতো ছোট্ট পিন এই পিনটা লাগিয়ে দিলেই দেখ কি সুন্দর গান হয়। আব্বাস উদ্দীন সেই যে কলের গান গ্রামোফোন রেকর্ডের গানসেই যে প্রথম শুনলেন জীবনে তিনি কখনো সেই গানটি ভুলেন নি। গানটি ছিল “ বুড়ি তুই গাঁজার জোগার কর,ওলো তোর জামাই এলো দিগম্বর। এই গানটি গেয়েছিলেন সে যুগের বিখ্যাত কৌতুক অভিনেতা চিত্তরঞ্জন গোস্বামী।
( অনুলিখন,  চলবে )

বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৩:৪৮ ● ৩৫২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ