বঙ্গ-নিউজঃ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রভাব পড়ত পারে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে। এ কারণে গতি কমে যাওয়ার সঙ্গে কমতে পারে বৈদেশিক অর্থছাড়ও। বৈশ্বিক অবস্থার কারণে ইতোমধ্যেই অর্থ প্রাপ্তি কমতে শুরু করেছে। এসব কারণে চলতি অর্থবছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে বড় অঙ্কের বৈদেশিক সহায়তা কমার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বৈদেশিক অংশের বরাদ্দ কাটছাঁটের প্রক্রিয়া শুরু করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইআরডির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাছে জরুরি ভিত্তিতে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এগুলো পেলে ডিসেম্বরে সিরিজ বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন ইআরডির সচিব শরিফা খান। সেখান থেকে যে হিসাব পাওয়া যাবে তার ওপর ভিত্তি করে সংশোধিত এডিপির জন্য তথ্য পাঠানো হবে পরিকল্পনা কমিশনে। ইআরডি সূত্র জানায়, ২২ অক্টোবর থেকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি এবং ২০২৪-২৫, ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ অর্থবছরের এডিপি প্রাক্কলন নির্ধারণের জন্য তথ্য চাওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট চলমান এবং নতুন প্রকল্পের জন্য কত বরাদ্দ প্রয়োজন তার তথ্য সংগ্রহ হচ্ছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪ মাসের বৈদেশিক সাহায্যের প্রকল্পগুলোর ব্যয় বা বাস্তবায়নের অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে সংশোধিত এডিপির জন্য বরাদ্দের প্রাক্কলন করতে হবে। পাশাপাশি আগামী তিনটি অর্থবছরের জন্য এমটিবিএফ (মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো) তৈরির জন্যও তথ্য দিতে হবে। ৯ নভেম্বরের মধ্যেই সব তথ্য ইআরডিতে জমা দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ইআরডির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ২ মাসে (জুলাই-আগস্ট) বৈদেশিক অর্থ ছাড় কমেছে। কিন্তু উলটো চিত্র বিরাজ করছে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে। এই ২ মাসে বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে অর্থছাড় হয়েছে ৭৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৩ কোটি ২৮ লাখ ডলার। এ হিসাবে কমেছে ৯ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের ২ মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ৪০ কোটি ৫ লাখ ডলার, গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৮ কোটি ২৭ লাখ ডলার। এ হিসাবে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ১১ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে অর্থছাড় আরও কম এবং ঋণ পরিশোধ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইআরডির সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, নির্বাচনি অর্থবছরের এই সময়টাকে বলা হয় ট্রানজিশন পিরিয়ড। এ সময় মনিটরিং ঠিকমতো থাকবে না। সবাই নির্বাচন নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন। উন্নয়ন সহযোগীসহ অনেক পক্ষই অপেক্ষা করবেন কি হয় দেখার জন্য। এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি কমবে। ফলে সংশোধিত এডিপিতে বড় অঙ্কের বরাদ্দ কমার শঙ্কা আছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এখন থেকে নির্বাচনকালীন বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বৈদেশিক অর্থ ব্যয় কমার চিত্র। এতে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে এডিপিতে বৈদেশিক অর্থ বরাদ্দ রয়েছে ৯৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে গত ৩ মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করেছে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বৈদেশিক অর্থ খরচের হার ছিল ৮ দশমিক ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এক্ষেত্রে ব্যয় কমছে। সেই সঙ্গে সাতটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এখনো খরচের খাতাই খুলতে পারেনি। অর্থাৎ অর্থবছরের ৩ মাস পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এক টাকাও ব্যয় করতে পারেনি। পিছিয়ে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলো, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।