আল-আমিন সালমান:শালুক হাওরের মানুষের কাছে একটি পরিচিত সুস্বাদু খাবার। বর্ষায় হাওরের পানিতে অযত্নে অবহেলায় বেড়ে ওঠা শালুক শাপলা ফুলের গোড়ার অংশে জন্মানো এক ধরনের জলজ উদ্ভিদ জাতীয় ফল। বর্ষা থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত হাওরের নিচু জমিতে এমনি এমনিই জন্মায় শাপলা। শাপলা গাছ পরিপক্ব হওয়ার পর গোড়া থেকে শালুক সংগ্রহ করা হয়।একেকটি শালুকের ওজন সাধারণত ৪০ থেকে ৭০ গ্রাম হয়ে থাকে। শালুক সেদ্ধ করে অথবা আগুনে পুড়িয়ে খাওয়া হয়।হাওরাঞ্চলের অধিকাংশ নিম্ন আয়ের মানুষেরা শালুক কুড়িয়ে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বর্তমানে প্রতি কেজি শালুকের বাজার দর ৮০-৯০ টাকা।
একসময় এই শালুক ছিল অভাবী মানুষের খাবার। কিন্তু বর্তমানে এই সুস্বাদু খাবারটির কদর বেড়ে গিয়ে সবার কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেছে।
শাপলা গাছের গোড়ায় একাধিক গুটির জন্ম হয় যা ধীরে ধীরে বড় হয়ে শালুকে পরিণত হয়।
শালুক একটি ঔষধি ফল। চুলকানি ও রক্ত আমাশয় নিরাময়ের জন্য ঔষধ হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও এটি মানবদেহে হজমশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে, শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি জোগায় এবং দ্রুত ক্ষুধা নিবারণ করে থাকে ।
কৃষি মৌসুমে হাওরের বোরো ফসলের জমিতে অতিরিক্ত আগাছা নিরোধক কীটনাশক ব্যবহারের কারনে বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদের পাশাপাশি ধীরে ধীরে আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা এই শালুক।
শালুক কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করা কয়েক নিম্ন আয়ের মানুষের সাথে কথা বললে তাদের মধ্যে কডু মিয়া নামে একজন বলেন,’ আমরা গরীব মানুষ। বহুদিন ধইরা আওরে (হাওর) হালুক(শালুক) তুলি। পরে এই হালুক (শালুক) বাজারে বিক্রি কইরা (করে) পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করি। প্রতিদিন আমরা ২-৪ কেজি হালুক তুলতাম পারি। তবে অহন (এখন) আর আগের মতো হালুক পাওয়া যায়না।
এই বিষয়ে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা জানান,’ জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে হাওর থেকে শুধু শাপলা-শালুক নয় অনেক জলজ উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা পরিবেশের উপর যেভাবে নির্বিচারে অত্যাচার চালাচ্ছি একদিন হাওর তার প্রতিবেশ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে। তাই আমাদের হাওরের জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে হলে সচেতন হতে হবে।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ ও ফসল বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘ শালুক জলজ উদ্ভিদের ফল। এটি বর্ষাকালে শাপলা গাছের সাথে হাওর,নালা, খাল-বিলে জন্মে। প্রতি ১০০ গ্রাম শালুকে খণিজ পদার্থ ১.৩ গ্রাম,আঁশ ১.১ গ্রাম,খাদ্যপ্রাণ ১৪২ কিলো,ক্যালরি প্রোটিন ৩.১ গ্রাম,শর্করা ৩১.৭,ক্যালসিয়াম ৭৬ মিলিগ্রাম রয়েছে।এছাড়াও শালুক শীতলকারক, পিত্ত প্রশান্তিদায়ক, হৃদযন্ত্রের শক্তিদায়ক, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া নিবারক, আমাশয় ও পেট ফাঁপায় উপকারী।