বঙ্গ-নিউজঃ বাংলাদেশসহ স্বল্প আয়ের দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ নীতি সংস্কারের সুপারিশ করেছে ইন্টার গভর্নমেন্টাল গ্রুপ (জি-২৪)। বিশেষ করে সহজ শর্তে ঋণ, ঋণের সুদ হার কমানো এবং ঋণের অঙ্ক বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মরক্কোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক আইএমএফ বার্ষিক বৈঠকের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার এ প্রস্তাব দিয়েছে জি-২৪ গ্রুপ। ভারত, চীন ও মরক্কোসহ ২০টি দেশের সমন্বয়ে জি-২৪ গঠন করা হয়।
ঋণ নীতি সংস্কারের পেছনে মনে করা হচ্ছে এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বিরাজ করছে। এছাড়া আর্থিক সংকটের মুখে কঠিন শর্ত মেনে নিয়ে অনেক দেশ বৈশ্বিক ঋণ নিচ্ছে। এর অধিক সুদসহ ঋণ পরিশোধে অতিরিক্ত ব্যয়ের চাপের মুখে পড়েছে স্বল্প আয়ের দেশগুলো। এতে অনেক দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতির মুখে ফেলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।
আইএমএফ’র কাছ বাংলাদেশ ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নিয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় করতে সম্প্রতি আইএমএফ’র একটি মিশন ঢাকা সফরে আছে। ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত এ মিশনের প্রতিনিধিদল সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করবে। মূলত ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করার আগে সংস্থাটির দেওয়া শর্ত পূরণের অগ্রগতি যাচাই করছে মিশনটি। এর আগে জুলাইতে প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, আইএমএফ’র ঋণ শর্ত অনেক কঠিন। অনেক দেশের পক্ষে পালন করা সম্ভব হয় না। শর্ত পালনে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি শ্রীলংকাকে ঋণের কিস্তি স্থগিত করেছে আইএমএফ। তবে বাংলাদেশ আইএমএফ’র ঋণের শর্তের মধ্যে কয়েকটি পূরণ করেছে এরই মধ্যে। জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ে নতুন ফর্মুলা কার্যকর করার শর্ত থাকলেও সেটি সম্ভব হয়নি। কারণ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার এটি এখনই কার্যকর করতে আগ্রহী নয়। আগামী বছরের জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি নাগাদ এটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া আইএমএফ’র লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখার মতো শর্ত পালন করতে পারেনি। ফলে এসব নিয়ে পর্যালোচনা করছে আইএমএফ। পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অতিরিক্ত যে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে সেটি আদায় সম্ভব হচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় ফর্মুলা ও রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন থেকে অব্যাহতি চাইতে পারে সরকার। আর সবকিছু ঠিক থাকলে ডিসেম্বর নাগাদ আইএমএফ’র দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পাওয়া যেতে পারে।
সূত্রমতে, বিশ্বব্যাংক আইএমএফ’র বৈঠকে মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে পৃথক দুটি প্রতিবেদন উপত্থাপন করা হয়। সেখানে পূর্বাভাসে বলা হয়, মূল্যস্ফীতি আগের স্থলে পৌঁছতে প্রায় ৩ বছর লাগবে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে আগামী ১২ মাসে পর্যায়ক্রমে হ্রাস পাবে। আর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে গড়ে জিডিপির ২ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে।
জানা গেছে, মরক্কোয় বিশ্বের ১৯০টি দেশের অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে জি-২৪ গ্রুপ আইএমএফ’র ঋণ নীতি সংস্কারের বিষয়ে নানা প্রস্তাব তুলে ধরেছে। সেখানে বলা হয়, বর্তমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখে বহুপাক্ষিক সংস্কার ব্যবস্থার প্রয়োজন। এছাড়া স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে আইএমএফ’র ঋণ আগামীতে আরও বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। বর্তমান অনেক দেশে আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে আন্তর্জাতিক এ দাতা সংস্থার কাছ থেকে ঋণের জন্য দারস্থ হচ্ছে। এ জন্য আইএমএফ’র রিজার্ভ অর্থাৎ তহবিল বিতরণের ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ানোসহ নতুন করে ডিজাইন করতে বলা হয়। বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে আরও বলা হয়, নিু আয়ের দেশগুলোর জন্য আইএমএফ’ ঋণের সুদ ও চার্জ আরোপ করে-সে নীতির সংস্কার করতে হবে। আর আর্থিক সংকট মোকাবিলায় অভাবী দেশগুলোতে তাদের তহবিল বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, এই মুহূর্তে স্বল্প আয়ের দেশগুলো ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে চাপের মুখে আছে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে গ্রুপটি। পাশাপাশি পরিস্থিতি সামাল দিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকে নজর বেশি দিতে বলা হয়েছে। তবে আইএমএফ বলেছে, বর্তমান প্রবৃদ্ধির গতিশীলতার মধ্যে তীব্র পার্থক্য রয়েছে। যুক্তরাষ্টের অর্থনীতিতে গতি ফিরছে। ভারতসহ উদীয়মান অন্য দেশগুলোর অর্থনীতিও চাঙা হচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর গতি এখনো কম। চীনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রত্যাশার চেয়েও গতি কম। অনেক দেশ এ নিয়ে লড়াই করছে। তবে বিশ্বব্যাপী তারল্য এবং রিজার্ভ সংকট মোকাবিলায় আইএমএফ এক লাখ কোটি ডলারের ঋণ দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। এরমধ্যে ৯৬টি দেশে ৩২ হাজার কোটি ডলারের ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৬টি নিু আয়ের দেশে সুদ-মুক্ত অর্থায়ন পাঁচগুণ বাড়ানো হয়েছে।