মঙ্গলবার ● ১০ অক্টোবর ২০২৩
ট্রেনের ভাড়া বাড়বে পদ্মা সেতু দূরত্ব কমালেও
Home Page » প্রথমপাতা » ট্রেনের ভাড়া বাড়বে পদ্মা সেতু দূরত্ব কমালেও
বঙ্গ-নিউজঃ পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের ফলে ঢাকা-খুলনা রুটের দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। কিন্তু পদ্মা সেতু হয়ে যেসব ট্রেন চলবে, তাতে ভাড়া বাড়বে। বর্তমানে এই রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেসের শোভন শ্রেণিতে ভাড়া ৫০৫ টাকা। পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেনে এই শ্রেণির ভাড়া হবে ৬১০ টাকা। এসি বার্থে বর্তমানে ভ্যাটসহ ভাড়া ১ হাজার ৭৩১ টাকা। পদ্মা সেতু হয়ে চলার ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ৮৩৫ টাকা। ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ তা হবে ২ হাজার ২১০ টাকা।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার নতুন ব্রডগেজ সিঙ্গেল রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার এই রুটের ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা অংশ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছরের জুনে যশোর পর্যন্ত রেললাইন চালু হবে।
আপাতত পদ্মা সেতু হয়ে চলবে ঢাকা-খুলনা রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেস, ঢাকা-বেনাপোল রুটের বেনাপোল এক্সপ্রেস। রাজবাড়ী-রাজশাহী রুটের মধুমতি এক্সপ্রেসকে ঢাকা পর্যন্ত চালানোর প্রস্তাব রয়েছে। ট্রেনগুলো ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রাজবাড়ী দিয়ে গন্তব্যে যাবে। বর্তমানে ট্রেন দুটি ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ ঘুরে তথা টঙ্গী, জয়দেবপুর, যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতু, ঈশ্বরদী, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হয়ে গন্তব্যে যায়। রাজবাড়ী থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হয়ে ঈশ্বরদী-রাজশাহী যায় মধুমতি এক্সপ্রেস। এই তিন ট্রেনের নতুন ভাড়ার তালিকা প্রস্তাব করেছে রেলওয়ের কমিটি। তা রেল মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে কার্যকর হবে।
ঢাকার কমলাপুর থেকে গেণ্ডারিয়া, কেরানীগঞ্জ, নিমতলী, শ্রীনগর, মাওয়া, পদ্মা সেতু, শিবচর হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার। রেলের এসি কামরায় প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১ টাকা ৯৫ পয়সা। এ হিসাবে ভাড়া হওয়ার কথা ১৫০ টাকা। সঙ্গে যোগ হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। কিন্তু ঢাকা থেকে ভাঙ্গা ৩৫৯ থেকে ৩৬৪ কিলোমিটার ধরে ভাড়া নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে। ফলে সুন্দরবন এক্সপ্রেসে এসি কেবিনের ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে ৯১৫ টাকা। ভ্যাটসহ ভাড়া হবে ১ হাজার ৫২ টাকা। সুন্দরবন এক্সপ্রেসে ঢাকা-ভাঙ্গা সেকশনে শোভন শ্রেণিতে ২৫০, শোভন চেয়ারে ৩০৫, ফার্স্ট ক্লাসে ৪০৫, কেবিনে ৬১০, এসিতে ৫০৫, এসি সিটে ৬১০ টাকা ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। ফার্স্ট ক্লাস, কেবিন ও এসিতে ভাড়ার সঙ্গে যোগ হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট।
ঢাকা থেকে মাওয়ার দূরত্ব ৫১ কিলোমিটার। কিন্তু ট্রেনের ভাড়া প্রস্তাবে দূরত্ব বিবেচনা করা হয়েছে ১৩৩ কিলোমিটার। শোভন শ্রেণিতে ৯০, শোভন চেয়ারে ১১০, ফার্স্ট ক্লাসে ১৪৫, কেবিনে ২২০, এসিতে ১৮০, এসি সিটে ২২০ ও এসি কেবিনে ৩৩০ টাকা ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। ভ্যাটসহ কেবিনের ভাড়া ৩৮০ টাকা।
ঢাকা থেকে মাওয়া এবং ভাঙ্গা পর্যন্ত বাসে যে ভাড়া, ট্রেনে এর চেয়ে বেশি লাগবে প্রস্তাবিত তালিকা অনুমোদিত হলে। রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পন্টেজ চার্জের কারণে ভাড়া বেড়েছে। তারা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই দূরত্বকে ২৫ দিয়ে গুণ করা হয়েছে। একেই পন্টেজ চার্জ বলা হয়।
কেরানীগঞ্জে ভায়াডাক্টের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে পদ্মা সেতু সংযোগ। এটিই দেশের প্রথম উড়াল রেলপথ। ২৩ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার ভায়াডাক্টকে ৬ দিয়ে গুণ করে দূরত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। এ কারণে ৭৭ কিলোমিটার দূরত্ব বেড়ে হয়েছে ৩৫৯ থেকে ৩৬৪ কিলোমিটার।
শুধু আন্তঃনগর ট্রেনের ভাড়া প্রস্তাব করেছে রেলওয়ে। মেইল, কমিউটার ও লোকালসহ আরও তিন ধরনের ট্রেন পরিচালনা করে রেলওয়ে। সেগুলোর ভাড়া কম হবে। সব ট্রেনেই ভাড়া নির্ধারণ করা হয় কিলোমিটার হিসাবে। এসি শ্রেণিতে আন্তঃনগরে কিলোমিটারে ভাড়া ১ টাকা ৯৫ পয়সা। সেতুর জন্য পয়েন্ট চার্জ যুক্ত হয়। ছয়টি সেতুতে এই চার্জ আদায় করে রেলওয়ে। যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেন চালানোর জন্য সেতু বিভাগকে বছরে এক কোটি টাকা ট্যারিফ দেয় রেলওয়ে।
পদ্মা সেতুতে ৩০ বছরের জন্য রেলওয়ের কাছে সোয়া ছয় হাজার কোটি টাকার ট্যারিফ চেয়েছে সেতু বিভাগ। প্রথম বছরে ১০৬ কোটি টাকা দিতে হবে। রেল এত টাকা দিতে নারাজ। তবে এই ট্যারিফের কারণেই ভাড়া বেড়েছে বলে রেল কর্মকর্তাদের ভাষ্য। তারা জানিয়েছেন, বছরে শতকোটি টাকা দিতে হলে ভাড়া আরও বাড়াতে হবে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকায় নির্মাণ করা পদ্মা রেল সংযোগকে লাভজনক করতে।
ঢাকা-যশোর রুটের দূরত্ব পদ্মা সেতুর কারণে কমে হবে ১৬৯ কিলোমিটার। কিন্তু ভাড়া নির্ধারণে পন্টেজ চার্জ বিবেচনা করে দূরত্ব ধরা হয়েছে ৬০৮ কিলোমিটার। ঢাকা-বেনাপোল রুটের বেনাপোল এক্সপ্রেসে শোভন চেয়ারের বর্তমান ভাড়া ৪৮৫ টাকা। ভ্যাটসহ স্নিগ্ধায় (এসি) ভাড়া ৯৩২ টাকা। এসি কেবিনের ভাড়া ভ্যাটসহ ১ হাজার ৬৭৪ টাকা। বেনাপোল এক্সপ্রেস পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল শুরুর পর শোভনে ৪৯৫, শোভন চেয়ারে ৫৯০, ফার্স্ট ক্লাসে ৭৯০, কেবিনে ১ হাজার ১৮০, এসিতে ৯৮৫, এসি সিটে ১ হাজার ১৮০ ও এসি কেবিনে ১ হাজার ৭৭০ টাকা ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। ফার্স্ট ক্লাস, কেবিন ও এসিতে ভাড়ার সঙ্গে যোগ হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। প্রস্তাবিত তালিকা অনুমোদন পেলে এসি কেবিনে ভ্যাটসহ ভাড়া পড়বে ২ হাজার ৩৬ টাকা।
ঢাকা-রাজশাহী রুটে শোভন চেয়ারের বর্তমানে ভাড়া ৩৪০ টাকা। পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করলে এই শ্রেণিতে ভাড়া লাগবে ৫৮০ টাকা। এই রুটে এসি সিটে ভাড়া ভ্যাটসহ ৭৮২ টাকা। পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চালুর পর ভ্যাট ছাড়াই এই শ্রেণিতে ভাড়া লাগবে ১ হাজার ১৫৫ টাকা। এসিতে বর্তমান ভাড়া ভ্যাটসহ ৬৫৬ টাকা। পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চালুর পর ভ্যাট ছাড়াই ভাড়া হবে ৯৬৫ টাকা।
সুন্দরবন এক্সপ্রেসের জন্য ২৯টি স্টেশনের এবং বেনাপোল ও মধুমতি এক্সপ্রেসের জন্য ২৮টি স্টেশন ধরে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আন্তঃনগর ট্রেনে সর্বনিম্ন ভাড়া ধরা হয়েছে ৪৫ টাকা। এসিতে সর্বনিম্ন ভাড়া হবে ১০০ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৫৪:১৬ ● ২০০ বার পঠিত