বঙ্গ-নিউজঃ ভিসা নীতি ঘোষণার চার মাসের মাথায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার ঘোষণা দিল যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগে মার্কিন ভিসা নীতির আওতায় পড়বে সরকারি ও বিরোধী দলের নেতাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সেই সঙ্গে থাকবে ভিসা নীতি আরোপ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিবৃতিতে এ তথ্য জানান দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
এদিকে ঢাকার ডেইলি স্টার পত্রিকাকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেছেন, ‘খুবই সতর্কতার সঙ্গে আমরা তথ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা করেছি। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি।’
বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের সাড়ে তিন মাসেরও কম সময় বাকি আছে। এর আগেই ভিসা নীতি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত দিল বাইডেন প্রশাসন।
বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মিলার জানান, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ বিধিনিষেধ আরোপ হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে থাকবেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দলের সদস্যরা। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়, সে বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র।
যাদের ওপর ভিসা নীতি আরোপ হবে সেই ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত হলে আরও ব্যক্তিরা ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন। ভিসা নীতির আওতায় পড়তে পারেন বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার যে প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশের সরকারের রয়েছে, তা বাস্তবায়ন করলে যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে ভিসা নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্র কখন, কী মানদণ্ডে এবং কার ওপর কার্যকর করবে, তা ধারণা করা দুরূহ বিষয়।
ভিসা নীতি আরোপ বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের পদক্ষেপের লক্ষ্য শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের যে লক্ষ্য রয়েছে, তাকে সমর্থন করা। সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে যারা এগিয়ে নিতে চায়, তাদের সমর্থন করা। এ পদক্ষেপগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যকে সহায়তা করতে গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি আইনের অধীনে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই নীতির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে। এ ভিসা নীতির আওতায় রয়েছেন– বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সরকারপন্থি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। গত ৩ মে বাংলাদেশকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল বাইডেন প্রশাসন।
ভিসা নীতি আরোপের জন্য গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কিছু কর্মকাণ্ডকে সুনির্দিষ্ট করেছে ওয়াশিংটন। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেওয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।
এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচন বিষয়ে গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের এক পোস্টে এ তথ্য জানান তিনি। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন উজরা জেয়া। পরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান তিনি।
এর আগে নিউইয়র্কে গত সোমবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠকেও বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনের ওপর জোর দিয়েছিলেন উজরা জেয়া।
তাদের নাম জানা যাবে?
যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা কারও নাম উল্লেখ করে না। এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে ম্যাথিউ মিলার বলেছিলেন, ‘নীতিগত অবস্থানের কারণে নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা কারও নাম আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) উল্লেখ করি না। কেবল এটাই জানাই– নির্দিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তাকে আমরা চিহ্নিত করেছি।’