
বঙ্গ-নিউজঃ ডেঙ্গুতে মানুষ বেঘোরে আক্রান্ত হচ্ছেন। মৃত্যুর সংখ্যায় প্রতিদিন নিজেকেই পেছনে ফেলছে। রাজধানীর চেয়ে জেলা ও উপজেলায় এখন আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। সংক্রমণ পরিস্থিতিকে ‘অশনিসংকেত’ উল্লেখ করে ৭ সেপ্টেম্বর সরকারকে আগাম প্রস্তুতির নির্দেশনা দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তবে এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখনও পড়ে রয়েছে ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা’ নীতিতে। সারাদেশের হাসপাতালগুলোয় তারা নতুন করে দেয়নি নির্দেশনা। এরই মধ্যে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত ২ হাজার ১২৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডব্লিউএইচও বাংলাদেশে মাঠ পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ মোতায়েন করেছে। তারা সার্বিকভাবে নজরদারি জোরদারে কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করছে। সেই সঙ্গে তারা গবেষণাগারের সক্ষমতা ও আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতেও কাজ করছে। তবে হুঁশিয়ারির পরও ডেঙ্গু প্রতিরোধে কোনো বৈঠক করেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু নিধন ও রোগীর চিকিৎসায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং নীতিমালা তৈরি জরুরি। বছরের সাড়ে ৮ মাস পার হলেও কার্যকরী কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয়নি। আগামী বছর পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখনই আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে নতুন কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ এবং এই কাজে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গুর চিকিৎসাব্যবস্থা ও জটিল রোগী ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ এবং হাসপাতালে শয্যা বাড়াতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, উষ্ণ বায়ুমণ্ডলীয় অঞ্চল হওয়ায় দেশে ডেঙ্গু বেড়েছে। পরিবেশের পরিবর্তন হয়েছে। সারাবছরই বৃষ্টি থাকছে। শীতকাল নেই বললেই চলে। ফলে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য বাহক মশাকে নির্মূল করতে হবে। এ ছাড়া শকে যাওয়া রোগী ব্যবস্থাপনায় সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া জরুরি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার উপপরিচালক সফিকুল ইসলাম বলেন, নতুন করে কোনো আলোচনা বা নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিতে এক মাস আগে একটি বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকে সারাদেশে সিভিল সার্জন, হাসপাতালের পরিচালক, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এখন ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগী বেশি শনাক্ত হচ্ছেন। সে কারণে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসা নিশ্চিতেই এই নির্দেশনা দেওয়া।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য সরকারের সব পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রেখেছে। চিকিৎসার গাইডলাইনও সময়োপযোগী করা হয়েছে। স্বাস্থ্য, তথ্য, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন বিভাগ একসঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করা হচ্ছে। তবে মশা নিধন ও ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে জনগণকে আরও বেশি ভূমিকা নিতে হবে।
১২ জনের মৃত্যু
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সর্বশেষ ১২ জন নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৯০ জনে। এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন মারা যান। এ সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ছয়জনের মৃত্যু হয়। ফেব্রুয়ারিতে মৃত্যু হয় দু’জনের। মার্চে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও এপ্রিল ও মে মাসে দু’জন করে মারা যান। জুনে ভয়াবহ আকার ধারণ করে ডেঙ্গু। এতে মৃত্যু হয় ৩৪ জনের। জুলাইয়ে প্রাণ হারান ২০৪ জন এবং আগস্টে ৩৪২ জন। চলতি সেপ্টেম্বরের ১৫ দিনে মারা গেছেন ১৯৭ জন।
গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ১২৯ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬১ হাজার ৯৬৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৭১ হাজার ৫০৩ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯০ হাজার ৪৬১ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ৮৯১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৪ হাজার ১৬ জন এবং অন্যান্য বিভাগে ৫ হাজার ৮৭৫ জন।