বঙ্গ-নিউজঃ কিশোরগঞ্জে সমাজসেবা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধীদের ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৬০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে বিভাগীয় তদন্ত চলছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান। ৬৮ জন প্রকৃত প্রতিবন্ধীর ভাতা কেটে সুস্থদের প্রতিবন্ধী বানিয়ে তাদের কিছু সুবিধা দিয়ে অবশিষ্ট বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আল আমিনের বিরুদ্ধে।
অভিযোগে জানা যায়, সদর উপজেলার দানাপাটুলি, বৌলাই, কর্শাকড়িয়াইল, মহিনন্দ ও লতিবাবাদ ইউনিয়নে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৮ জন প্রকৃত প্রতিবন্ধীকে তালিকাভুক্ত করেছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা। তালিকা উপজেলা বাছাই কমিটিতে গেলে এমআইএস (মেনেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) পদ্ধতিতে যাচাই বাছাই করে তাদের একটি করে ‘অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পরিশোধ বই’ দেওয়া হয়েছিল। সবার একটি করে প্রতিবন্ধী পরিচয়পত্রও আছে। এদের সবাইকে ভাতা প্রদানকারী ব্যাংক এশিয়া থেকে মোবাইল ফোনে একটি নম্বরসহ বার্তাও পাঠানো হয়। প্রত্যেকের এক বছরের ভাতা বাবদ ১০ হাজার ২০০ টাকা করে ব্যাংক এশিয়ার তাড়াইল শাখা থেকে উত্তোলন করার কথা ছিল। তবে উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে পে-রোল পাঠানোর পরই সেই ভাতা নিশ্চিত হয়। কিন্তু উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কম্পিউটার থেকে এই ৬৮ জনের নাম সরিয়ে নতুন ৬৮ জনের নাম বসিয়ে তাদের নামে পে-রোল পাঠিয়েছেন। ফলে অন্য সব প্রতিবন্ধী তাদের ভাতা উত্তোলন করলেও এই ৬৮ জন প্রতিবন্ধীর নামে ভাতা হয়নি। এরা তাদের ভাতা বই নিয়ে জেলা সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নিতে গেলে দুর্নীতির ঘটনাটি ধরা পড়ে।
অভিযোগ উঠেছে, সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের সম্পূর্ণ সুস্থ ৬৮ জন মানুষকে প্রতিবন্ধী সাজিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের বর্তমান ঠিকানা দেখিয়ে তাদের নামে ভাতা বরাদ্দ করিয়েছেন সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আল আমিন। এদের মধ্যে এক গোষ্ঠীতেই ২২ জন, আর এক পরিবারেই ৬ জন আছেন বলে জানা গেছে। আর এই ৬৮ জনকে মাত্র ৫০০ টাকা করে দিয়ে বাকি ৯ হাজার ৭০০ টাকা করে মোট ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৬০০ টাকা ওই কর্মকর্তা আত্মসাৎ করেছেন। এসব অভিযোগ আসার পর জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান খান সহকারী পরিচালক মো. শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। অন্য দুই সদস্য হলেন- করিমগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাইফুল আলম, আর নিকলী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়াজ মনির।
এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান মো. শহীদুল্লাহ অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। তিনি প্রতিবন্ধী সাজানো বেশ কয়েকজনের সাক্ষ্যও নিয়েছেন। এক পরিবারে একাধিক ভুয়া প্রতিবন্ধী দেখানোর বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেছেন, আরও কিছু বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আল আমিনের এই দুর্নীতির সঙ্গে আরও সহযোগী আছে। চৌধুরীহাটির একজন নারীকেও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত পাওয়া গেছে। এসব বিষয়েও তদন্ত চলছে। এ সপ্তাহেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবেন বলে তিনি জানান।অভিযোগ সম্পর্কে কথা বলার জন্য সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আল আমিনের মোবাইল ফোন নম্বরে বার বার কল করলেও তিনি কেটে দিয়েছেন।