বঙ্গ-নিউজঃ সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন সফল করতে নানা ধরনের তৎপরতা শুরু করেছে বিএনপি। শুধু দলের নেতাকর্মী নয়, একই দাবিতে বিভিন্ন পেশাজীবী মাঠে নামানো হচ্ছে। সমমনা অন্যান্য দল ও জোটের ছাত্র, যুব সংগঠনগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়েছে। সব কিছু আয়ত্তে আনার পর সময়-সুযোগ বুঝে চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য মাঠে নামতে চায় দলের হাইকমান্ড। আগামী মধ্য অক্টোবরকে ডেডলাইন ধরে নেওয়া হচ্ছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। এর আগে বিভিন্ন ইস্যুতে চলমান আন্দোলন নিয়মতান্ত্রিকভাবে এগিয়ে নিতে চায় দলটি। এতে যেমন রাজপথ দখলে রাখার কৌশল রয়েছে, তেমনি নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে সক্রিয় রাখার প্রক্রিয়া।
সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ রাজধানীতে গণমিছিল ও সমাবেশ করবে দলটি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। আগে মহানগর উত্তর-দক্ষিণ গণমিছিল, পদযাত্রার মতো কর্মসূচি শেষে একসঙ্গে মিলিত হয়নি। এবার গণমিছিল হবে; একই সঙ্গে সমাবেশও হবে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের দুটি গণমিছিল বিকাল ৩টায় শুরু হবে।
উত্তরের গণমিছিলটি রামপুরার বেটার লাইফ হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু হয়ে আবুল হোটেল-মালিবাগ রেলগেট-মৌচাক-মালিবাগ মোড়-শান্তিনগর-কাকরাইল মোড়-নাইটিংগেল মোড় হয়ে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হবে। অন্যদিকে দক্ষিণ বিএনপির গণমিছিল কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে পীরজঙ্গি মাজার-আরামবাগ-ফকিরাপুল মোড় হয়ে নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হবে। পরে সেখানে সমাবেশ করবে দলটি। এতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেবেন। সমমনা অন্যান্য দল ও জোটও একই দিন এ কর্মসূচি পালন করবে। এ ছাড়া দেশে ভোটাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার দাবিতে এদিন দলনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবী-লেখক-শিল্পী-শিক্ষক-সাংবাদিকরা শাহবাগে সমাবেশ করবেন।
এদিকে, সরকারের পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপির সঙ্গে সমমনা গণতন্ত্র মঞ্চ, এলডিপিসহ অন্যান্য দল ও জোটের উদ্যোগে আজ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পৃথক গণমিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপি নেতারা জানান, এখন থেকে সব কর্মসূচিতেই ভিন্নতা থাকবে। ধীরে ধীরে আন্দোলনের গতি বাড়বে। মধ্য সেপ্টেম্বরের পর থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচিতে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আন্দোলনের রূপরেখা সাজানো হচ্ছে। সরকারবিরোধী আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে এসব কর্মযজ্ঞের পাশাপাশি নেতাকর্মীকে সংগঠিত করতেও নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে যেসব এলাকায় সাংগঠনিক দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে, সেখানে দ্রুতগতিতে সংগঠনকে শক্তিশালী করার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন জেলায় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠনের কার্যক্রমও চলছে সমান গতিতে।
এক দফার আন্দোলনে ছাত্র-শ্রমিক ও পেশাজীবীদের পৃথক মোর্চা গড়ার চেষ্টা করছে বিএনপি। যেখানে সমমনা ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের ছাত্র-শ্রমিক ও পেশাজীবী সংগঠনকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। চূড়ান্ত আন্দোলনে এই তিন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ আরও দৃশ্যমান করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ নামে একটি আলাদা মোর্চা গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ছাত্রদলসহ ১৯টি ছাত্রসংগঠন বৈঠক করেছে। পাশাপাশি শ্রমিক সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করা হচ্ছে। এজন্য শ্রমিকনেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের এ বিশেষ সহকারী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জানান, ছাত্র-শ্রমিক সংগঠনের মতো পেশাজীবী সংগঠনগুলোকেও ঐক্যবদ্ধ করে মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে বিএনপি। আইনজীবীদের সংগঠিত করতে এরই মধ্যে ‘ইউনাইটেড ল ইয়ার্স ফ্রন্ট’ নামে সুপ্রিম কোর্টে সরকারবিরোধী আইনজীবীদের একটি সংগঠন গঠন করা হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিরোধী সব রাজনৈতিক দলসহ দেশের জনগণ রাস্তায় নেমেছে। তাদের ভোটাধিকার, বাক্স্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং বেঁচে থাকার অধিকার ফিরে পেতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে।
আদালতকেন্দ্রিক কর্মসূচির পরিকল্পনা তুলে ধরে দলের একজন নেতা বলেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আদালতকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করার প্রতিবাদে ঢাকায় একটি সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই সমাবেশ থেকে আদালতের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার না পাওয়ার অভিযোগ তুলে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরবেন তারা। এরপর সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, আদালতে কীভাবে সেই মামলার বিচারকার্য চলছে, তা তুলে ধরতে সেমিনার করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। বিদেশি কূটনীতিকদের সামনে ওই সেমিনারে আদালতকে ব্যবহার করে বিরোধী নেতাকর্মীর ‘দমনপীড়ন ও সাজা’ দেওয়ার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হবে।
বিএনপির নেতারা জানান, তাদের প্রতিটি কর্মসূচি সফলে কঠোর বার্তা রয়েছে দলের হাইকমান্ডের। সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে একাধিক পদক্ষেপ। এতে সুফলও পাচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতারা। কর্মসূচিতে নেতাকর্মী ছাড়াও ক্রমান্বয়ে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরা আর নেতাদের ডাকের অপেক্ষায় থাকবেন না। দল যখনই আন্দোলনের জন্য মাঠে নামতে বলবে, তখনই তারা মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।