বঙ্গ-নিউজঃ ডলারের পাশাপাশি ব্যাংক খাতে এখন টাকার সংকট চলছে। দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে প্রতিদিনই ধার করছে কিছু ব্যাংক। বিনিয়োগে স্থবিরতার প্রভাবে মূলধনি যন্ত্রপাতি, শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানি কমেছে। এসবের প্রভাবে অনেক দিন পর বেসরকারি খাতের ঋণ কমেছে। গত জুনের তুলনায় জুলাইতে বেসরকারি খাতে ঋণস্থিতি প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা কমেছে। সাম্প্রতিক কোনো মাসে এমন দেখা যায়নি। কয়েক মাস ধরে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণও কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই শেষে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণস্থিতি কমে ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকায় নেমেছে। আগের মাস জুন শেষে যা ছিল ১৪ লাখ ৯৪ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। এর মানে এক মাসের ব্যবধানে ঋণস্থিতি কমেছে ৮ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। অবশ্য আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। গত জুলাই মাসের এ প্রবৃদ্ধি ২১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। আর ২০২১ সালের অক্টোবরের পর বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি এই প্রথম ১০ শতাংশের নিচে নেমেছে।
কয়েকজন ব্যাংকার জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমেছে। গত দুই বছরে ব্যাংকগুলোর কাছে ২ হাজার ৩৪৪ কোটি ডলার বিক্রির বিপরীতে বাজার থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো উঠে এসেছে। আবার উচ্চ মূল্যস্ফীতি, কিছু ব্যাংকের প্রতি আস্থাহীনতাসহ নানা কারণে মানুষের হাতে টাকা ধরে রাখার প্রবণতা বেড়েছে। গত জুন শেষে প্রথমবারের মতো প্রচলন বা সার্কুলেশনে থাকা নোটের পরিমাণ ৩ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে উঠেছে। আবার ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য কমে জুন শেষে ৩ হাজার ৯০৯ কোটি টাকায় নেমেছে। এক বছর আগে যা ২ লাখ ৩ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ছিল। এরকম অবস্থায় কিছু ব্যাংক অনেক দিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ নগদ জমা (সিআরআর) রাখতে পারছে না। এসব ব্যাংকের দণ্ড সুদের টাকা চলতি মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এরকম বাস্তবতায় ঋণ সেভাবে বাড়ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মনে করেন ঋণস্থিতি কমার কয়েকটি কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, নতুন ঋণ বিতরণ ও আদায় ব্যাংকগুলোর একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। আর্থিক সংকটের কারণে কয়েকটি ব্যাংক এখন নতুন ঋণ দিতে পারছে না। এর মূল কারণ কয়েকটি ব্যাংক তহবিল সংকটের কারণে সিআরআর রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। কিছু ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত সীমার অনেক ওপরে চলে গেছে। অবস্থা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত এসব ব্যাংককে নতুন ঋণ বিতরণ না করতে বলা হয়েছে। আবার নির্বাচনের আগে অনেক সময় বিনিয়োগে স্থবিরতা থাকে।
মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামী ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতে ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং আগামী জুন শেষে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে। গত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ ঋণ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে গত জুন শেষে প্রবৃদ্ধি হয় ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয় গত বছরের আগস্টে। এরপর কয়েক মাস ১৪ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। তবে গত বছরের নভেম্বর থেকে প্রতি মাসেই প্রবৃদ্ধি কমছে।
অভ্যন্তরীণ ঋণের পাশাপাশি বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণও ধারাবাহিকভাবে কমছে। গত জুলাই শেষে ঋণস্থিতি নেমেছে ১ হাজার ৩৩৮ কোটি ডলার। গত বছরের জুন শেষে যা ছিল ১ হাজার ৭৭৬ কোটি ডলার। এভাবে ঋণ কমার মূল কারণ যেভাবে ঋণ পরিশোধ হচ্ছে, আসছে সে তুলনায় কম।
চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে সুদসহ ১ হাজার ৯৩৮ কোটি ডলারের বিদেশি ঋণ পরিশোধ হয়েছে। অথচ এ সময়ে নতুন ঋণ এসেছে ১ হাজার ৫৯৭ কোটি ডলার। এর মানে যে পরিমাণ নতুন ঋণ এসেছে, পরিশোধ হয়েছে তার চেয়ে ৩৪১ কোটি ডলার বেশি।