বঙ্গ-নিউজঃ তীব্র জ্বর নিয়ে সোমবার সকালে রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি হন আয়েশা বেগম (৬০)। চিকিৎসকরা স্যালাইন দিতে বললে বিপাকে পড়েন স্বজনরা। হাসপাতালের পাশাপাশি মগবাজার ও ইস্কাটনের বেশ কয়েকটি ফার্মেসিতে সন্ধান করেও ইনজেক্টেবল স্যালাইন পাননি। পরে শাহবাগের কয়েকটি দোকান ঘুরে চার ব্যাগ স্যালাইন পান মালিবাগের এ বাসিন্দার ছেলে আফজাল উদ্দিন। আপাতত স্বস্তি মিললেও উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালেই যদি স্যালাইন না থাকে, মানুষ যাবে কোথায়? এভাবে দোকান দোকান ঘুরে কি রোগীর চিকিৎসাসম্ভব? আজ তো পেলাম, আরও লাগলে কী করব– ভাবতেই ভয় হচ্ছে।’
শুধু হলি ফ্যামিলি নয়, স্যালাইন সংকটের কারণে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ডেঙ্গু, সার্জারি, ডায়ালাইসিসসহ বিভিন্ন রোগীকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত স্যালাইন থাকলেও তীব্র সংকট বেসরকারিতে। এ কারণে দামও বেড়েছে দুই থেকে তিন গুণ। এমন পরিস্থিতিতে সংকট মেটাতে বাজার মনিটরিংয়ের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজধানীর ইস্কাটনের মেডিকেয়ার ফার্মেসির আবদুল ফয়সাল বলেছেন, এখন খুবই সংকট স্যালাইনের। তিন মাস ধরে অর্ডার দিয়েও বেক্সিমকোর স্যালাইন পাচ্ছি না। এখন দিনে দুই শতাধিক ব্যাগের চাহিদা থাকলেও পাচ্ছি না। অন্যান্য কোম্পানি থেকে সপ্তাহে দু’দিন ২০ ব্যাগ করে স্যালাইন পাচ্ছি। শুধু ডেঙ্গু নয়, অন্যান্য রোগীর স্বজনও এসে ফিরে যাচ্ছেন।
স্যালাইনের অভাবে গত শনিবার রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাতে এসে বিপাকে পড়েন এক নারী কিডনি রোগী। পরে পরিচিত একজনের মাধ্যমে ওষুধ কোম্পানিতে ফোন দিয়ে স্যালাইন জোগাড়ের পর ডায়ালাইসিস করান তিনি।
রাজধানীর পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, নরমাল স্যালাইন শুধু ডেঙ্গু নয়; গাইনি, সার্জারি সব ক্ষেত্রে প্রয়োজন। এখন যে হারে চাহিদা, সেই তুলনায় কোম্পানি থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে না। কোম্পানিতে ১০০ ব্যাগ চাহিদা দিলে, ১০-২০টি পাচ্ছি। আগে মিটফোর্ড মার্কেট থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী স্যালাইন কিনতে পারতাম। এখন প্রতিদিন তিন-চারজনকে সেখানে পাঠিয়েও ঠিকঠাক পাচ্ছি না। ৯০-৯৫ টাকার স্যালাইন কিনতে হচ্ছে ২০০ টাকা ব্যাগ। এতে রোগীদের চিকিৎসা খরচ বেড়ে যাচ্ছে, সঙ্গে ভোগান্তিও।
রাজধানীর শমরিতা হাসপাতাল অ্যান্ড মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. এস এম মামুন ইকবাল জানান, তাদের হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ অনেক বেশি। স্যালাইনের চাহিদা বাড়লেও কোম্পানিগুলো সরবরাহ করতে পারছে না। দুঃখের বিষয়, দেশে দৈনিক কত ব্যাগ স্যালাইন প্রয়োজন, বিপরীতে কত ব্যাগ উৎপাদন হচ্ছে– এর সঠিক পরিসংখ্যান ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কিংবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রকোপে বৃদ্ধি পেয়েছে স্যালাইনের চাহিদা। উৎপাদন বাড়িয়ে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের চেষ্টা করছি।’
জানতে চাইলে সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক বে-নজীর আহমেদ বলেন, গেল দুই মাস ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিতে আরও সতর্কতা প্রয়োজন। ওষুধ কোম্পানিগুলোকে স্যালাইনের উৎপাদন বাড়াতে হবে। কোনো কারণে হাসপাতালে স্যালাইনের সংকট হলে রোগী ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে পড়বে, বাড়বে ডেঙ্গুতে মৃত্যুঝুঁকিও। ফলে এ সময় বাজার মনিটরিং খুবই জরুরি।
যোগাযোগ করলে গতকাল মঙ্গলবার একাধিক ওষুধ কোম্পানি স্যালাইন উৎপাদন ঠিক রাখার কথা জানায়। তা হলে এ সংকট কেন– এমন প্রশ্নের জবাবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক নুরুল আলম বলেন, ‘কিছুদিন আগে স্যালাইনের সংকট দেখা দিলে কোম্পানিগুলো উৎপাদন বাড়াতে বলা হয়েছিল। এমনকি ছুটির দিনেও কারখানা খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। আমার জানা মতে, এখন স্যালাইনের কোনো সংকট নেই।’
এদিকে, গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজের শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলন অডিটোরিয়ামে ‘ডেঙ্গু ড্রপস’ অ্যাপস উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, দেশে ওষুধের কোনো অভাব নেই। সব রোগের ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগী উদ্বেগজনক হারে বাড়লেও মোকাবিলায় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গাইডলাইন করা হয়েছে। চিকিৎসক-নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।