রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন-৩১৯ তম পর্ব:জালাল উদ্দীন মাহমুদ

Home Page » সাহিত্য » রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন-৩১৯ তম পর্ব:জালাল উদ্দীন মাহমুদ
শুক্রবার ● ১১ আগস্ট ২০২৩


জালাল উদ্দীন মাহমুদ

ম্যানেজার স্যারের জল চিকিৎসা-

আগেই বলেছি আমার প্রতি কেউ অন্যায় করলে তা রফিক সাহেব কোনক্রমেই সহ্য করতে পারত না ,প্রতিবাদ করত। তবে তার প্রতিবাদ ছিল ইনডাইরেক্ট ও অভিনব পদ্ধতিতে। এ রকম দুটি ঘটনা আজ খুব করে মনে পড়ছে। ঘটনা দুটোর নাম দিতে চাই –
১)ম্যানেজার স্যারের জল চিকিৎসা,
২)জাহাঁনুর বেগমের আজব শাস্তি।
মোজাহার হোসেন স্যার তখনও সপ্তপদী মার্কেট শাখার ম্যানেজার। আমার সাথে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। বলা নেই ,কওয়া নেই হঠাৎ করে তিনি একদিন আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে বসলেন। কি খারাপ ব্যবহার - তা আজ আর আমার মনে পড়ছে না।বাড়ি করার সময ছুটি না দেয়ায় একটু মন খারাপ হয়েছিল আমার । কিনতু খারাপ ব্যবহারের কোনও ঘটনা ঘটেছিল বলে মনে হয় না।
স্মৃতি কথা লিখতে গিয়ে এখন দেখছি অনেক গুরুত্বপূর্ন ঘটনা মনে পড়ে না অথচ অনেক তুচ্ছ ঘটনা ঠিকই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ম্যানেজার মোজাহার হোসেনের সাথে কাটানো সময়গুলো এখন স্মরণ করার চেষ্টা করছি। তিনি কোনও দিন খারাপ ব্যবহার করেছেন এমন কোনও ঘটনাই নাই। আসলেই নাই। কারন তো বলেছি-তার এবং তার পরিবারের সাথে আমার অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল। সেই মোজাহার হোসেন স্যার আমার সাথে কি এমন খারাপ ব্যবহার করেছিলেন যে আমি তা নিয়ে রফিক সাহেবের নিকট নালিশ করেছিলাম- হিসাব মেলাতে পারছি না। তবে রফিক সাহেবের কাছে যে অভিযোগ করেছিলাম এবং রফিক সাহেব কৌশলে স্যারকে হেনেস্তা করেছিলেন সে কথা স্পষ্ট মনে পড়ছে।
যা হোক, আমি রফিক সাহেবকে বলেছিলাম ম্যানেজার মোজাহার হোসন স্যার আমার সাথে বিনা কারণে খুব খারাপ ব্যবহার করেছেন। আমার মন ভালো নেই। আমি এ বেলা ছুটি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি । আপনি অফিস সামলান। রফিক সাহেব পরম মমতায় আমাকে বলল ঠিক আছে-অযথা খারাপ ব্যবহার করার বিষয়টি তিনি দেখবেন। তবে এজন্য ছুটি নিয়ে বাড়ি যাবার দরকার নাই।
অন্য কেউ একথা বললে আমি হয়তো উড়িয়ে দিতাম। তার মতো সামান্য একজন অফিসার এতবড় শাখার একজন ম্যানেজারকে কি বলবেন? কিন্তু রফিক সাহেব বলে কথা। রফিক সাহেব করতে পারে না এহেন কাজ ইহজগতে সে সময খুব কমই ছিল।
তবে ম্যানেজার হেনস্তা হোক এমন কোন কিছু অবশ্য আমি চাইনি।
তারপর কয়েকদিন কেটে গেল কিন্তু ম্যানেজার স্যারকে হেনস্তা করার কোনও উদ্যেগ দেখলাম না। ভালো হয়েছে। আমিও ভুলে গেলাম বিষয়টি। কিন্তু রফিক সাহেব যে ভোলার পাত্র নয় তা একদিন বোঝা গেল। সেদিন আমার সামনে এসে রফিক সাহেব বলল ম্যানেজার সাহেবকে তিনি জলচিকিৎসা করাবেন এবং এটাই হবে তার জীবনের শেষ জলচিকিৎসা। হাজেরা আপার কথা মনে পড়ে গেল। রফিক সাহেব আমাকেসহ আবার কোন ঝামেলায় জড়াতে যাচ্ছে না তো? এবার স্বয়ং ম্যানেজারের সাথে। রফিক সাহেবকে বারণ করতে চাইলাম কিন্তু আমিই তো তার কাছে অভিযোগ করেছি ম্যানেজারের নামে। সেতো আমার অপমানের প্রতিশোধ নিতেই ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আবার জলচিকিৎসা করতে চাচ্ছে। কি যে করি?
আমি বারবার না না করতে লাগলাম। ম্যানেজার সাহেব অবশ্য আমার আর রফিক সাহেবের সাথে বন্ধুর মতই মিশতেন। কোনও দুরুত্ব রাখতেন না। জল চিকিৎসা করলেও হয়তো তার সাথে সম্পর্কের অবনতি হবে না , যদি ঠিকমতো বুঝিয়ে বলা যায় । তবু আমি আর জল চিকিৎসা চাই না।
এবং ফাইনালি রফিক সাহেব কে না করে দিলাম। কোনও জলচিকিৎসা হবে না।
রফিক সাহেব বলল ঠিক আছে জলচিকিৎসার নামে একটু ফান করব।
কি করতে কি যে হয় । তবে ভরসা হোল ঐটুকুই যে আমি সাথে থাকলে রফিক সাহেব যে কোন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে।আর ম্যানেজার স্যার আমাদের দুজনকে খুব পছন্দ করে । তিনি আমাদের মুখের উপর কিছু বললেও কখনই বিরূপ হবেন না। যা থাকে ভাগ্যে। আমি আর রফিক সাহেবকে বারণ করতে যাব না। মনে করেও দিব না। বারণ করলে তো সে শুনবেও না। সে যদি আপনা-আপনি বিষয়টি ভুলে যায় তা হলে সবচেয়ে ভলো হয়। কিন্তু ভালো আর হলো না।
একদিন ম্যানেজার সাহেব সকাল সকাল তার চেম্বারে ঢুকেছে। সে সময় আমরা অফিস শুরুর অনেক আগে এসে পেন্ডিং কাজ শেষ করতাম। সেদিন ব্যাংকিং শুরু হতে ঘণ্টা খানেক বাকি । ভল্টের তালাও খোলা হয়নি। মিন্নাত তখনও আসেনি। রফিক সাহেব আমাকে বলল একটু ম্যানেজার স্যারের চেম্বারে চলেন তো দেখি। গেলাম। সালাম বিনিময় হলো। রফিক সাহেব বলল-স্যার আপনাকে এত শুকনা শুকনা মনে হচ্ছে কেন? আপনি বোধ হয় ঠিক মতো পানি পান করেন না !

আপনি বোধ হয় ঠিক মতো পানি পান করেন না এ কথাটি আমাদের দেশে যাকেই জিজ্ঞেস করেন সেই-ই সাধারণত সহমত পোষণ করে । বান –বন্যার -পানির দেশের লোক আমরা কিন্তু পরিমান মতো পানি পান করার ক্ষেত্রে ভীষণ অনীহা। যাহোক সেদিন ম্যানেজার স্যারও রফিক সাহেবের সাথে সহমত পোষণ করেছিল।
-রফিক ঠিকই বলেছ। কিছুদিন যাবৎ আমার ঠিকমতো পানি খাওয়া হচ্ছে না।
-এটা ঠিক না স্যার। পানি ঠিকমত বেশি বেশি করে খেতে হবে। তাছাড়া আপনার শরীরে দ্রুত বয়সের ছাপ পড়বে। রফিক সাহেব এমনভাবে সহমর্মিতা দেখাল - তাতে এটা যে কৃত্রিম তা মনেও হল না।
মনে হলো দ্রুত বয়সের ছাপ পড়ুক এটা ম্যানেজার সাহেব কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না ।
রফিক সাহেব অবশ্য সেদিন সত্য কথাই বলেছিলেন। পরিমিত পানি পান না করলে শরীরে যে দ্রুত বয়সের ছাপ পড়ে এটা কিন্তু পরীক্ষিত সত্য। পানিস্বল্পতা ত্বকের ওপর প্রভাব ফেলে। পানি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে কাজ করে। ঠিক মতো পানি পান না করলে ত্বকে বলিরেখা ও দাগ পড়ে।
যা হোক সেদিন রফিক সাহেব বিশাল জোরে হাঁক ছেড়ে পিওন হাবিবকে ডাকল। হাবিব, ইয়া হাবিব জালদিসে জাগ ভর্তি পানি অর গ্লাস লে আও। হাবিব রফিক সাহেবের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পিওন। সেও এসব কাজে মনেহয় খুব মজা পেত। দৌঁড়াদৌঁড়ি করে পানি নিয়ে হাজির হাবিব। এবার রফিক সাহেব নিজে জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে বলল নেন খান স্যার।আপনাকে আজ শুকনো শুকনো লাগছে। স্যার নির্দ্ধিধায় পান করলেন। পরে আর এক গ্লাসের অনুরোধ করলে অনিচ্ছাসত্ত্বেও স্যার তাও পান করলেন। এরপর খেতে বললে স্যার বললেন-তার আজ ডিসি অফিসে মিটিং আছে। তাড়াতাড়ি যেতে হবে। ভল্টটা খুলে দিয়ে এখুনি ডিসি অফিসের দিকে রওনা দিব। তারপর না হয় এসে পানি খাব। তবে অতিরিক্ত পানি পান করতে বলে যে রফিক সাহেব সঠিক কাজই করেছেন এ ব্যপারে ম্যানেজার স্যার সহমত পোষন করলেন।
ওদিকে আরো বেশি পান করার জন্য রফিক সাহেব তার জোরদার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। সেদিন বোধহয় চার/পাঁচ গ্লাস পানি পান করাতে সক্ষম হয়েছিল রফিক সাহেব। ডিসি অফিসের মিটিংএ যাবার তাড়া থাকায় ম্যানেজার সাহেব তাড়াহুড়া না করলে রফিক সাহেব তার অভিনয় দক্ষতা দ্বারা হয়তো আকন্ঠ পানি পান করাতো। সেক্ষেত্রে আরো বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারত। ম্যানেজার সাহেব ডি সি অফিসের দিকে রওনা দিলেন আর টেবিলে এসে আমরা নিজ কাজে মন দিলাম।
মনে হয় লাঞ্চের একটু আগে আগে ম্যানেজার সাহেব মিটিং শেষ করে চেম্বারে ঢুকলেন। ঢুকেই আমাকে ও রফিক সাহেবকে স্মরণ করলেন। দু‘জনকে একসাথে তলব কেন? জল চিকিৎসার ব্যাপারে নয়তো। কাজেমউদ্দিন স্যারের সাথে কোথাও দেখা হয়ে স্যার জারিজুরি সব অবগত হয়নি তো। আমার মনে এসব দুশ্চিন্তা শুরু হলো। তবে রফিক সাহেবের মধ্যে দুশ্চিন্তার কোনো চিহ্নই দেখলাম না। সে একটা রেজিষ্টার নিয়ে কাজ করছিল। রেজিষ্টারটা উল্টাইয়া রাখল। ভাউচারগুলো পেপারওয়েট দিয়ে চাপা দিল , যাতে ফ্যানের বাতাসে উড়ে না যায় । কলমের হেডটা বন্ধ করে তা সাথে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল- চলেন তো দেখি স্যার কি বলেন?

ম্যানেজার স্যার আর কি বলবেন। ঢুকতেই বকাবকি শূরু করলেন। তোমরা আমাকে সকালে এত পানি খাওয়ালে কেন? অ্যাঁ? আমি ঠিকমতো মিটিং করতে পারলাম না। বারবার বাথরুমে যেতে হলো। রফিক এটুকু শুনেই বিজ্ঞের হাসি হেসে বললেন-স্যার একটু কষ্ট হলেও আপনি কিন্তু পানি পান করার অভ্যাস ত্যাগ করতে পারবেন না।আজ হিঁয়ালের দিন তাই হয়তো একটু কষ্ট হয়েছে। তবে এটা চালিয়ে যেতে হবে।
কুষ্টিয়া জেলার মানুষের কথ্য বা মুখের ভাষাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে শুদ্ধ ভাষা অর্থাৎ বাংলাদেশে বাংলা ভাষার সবচেয়ে প্রমিত রূপ বলা হয়ে থাকে। কুষ্টিয়া এলাকার কাছে বাল্যকাল কাটানো রফিক সাহেব সবসময়ই আঞ্চলিকতামুক্ত শুদ্ধ ভাষায় কথা বলত। যা আমার ভালো লাগত। তবে সে ঠান্ডাকে হিঁয়াল বলত ।
সেদিন রফিক সাহেব হাজার চেস্টা করেও স্যারের রাগ কমাতে পারছিল না। স্যারের বকুনি খেয়ে সে পানি পান করার উপকারিতার উপর একটা ভাষণ দেয়া শুরু করল । পানি ওজন কমায় , চুলকে ভালো রাখে । কিন্তু কিছুতেই স্যারের রাগ কমছিল না। স্যারের বকুনির কারণে রফিক সাহেব কিছুটা পাজল হলেও যুক্তি প্রদর্শন অব্যহত রাখল । পানি বার্ধক্য রোধ করে আর রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে । এমন সময় ম্যানেজারের চেম্বারে কী একটা কাজে জাঁহানুর প্রবেশ করল। পাজলড রফিক সাহেব বলে উঠল পানি পানে পিরিয়ডের সমস্যাও দূর হয়। । এ কথা শুনে জাঁহানুরের মুখ আরক্ত হয়ে গেল। ম্যানেজার সাহেব জাঁহানুরের হাতের ভাউচারটা তাড়াতাড়ি স্বাক্ষর করে দিল। সে তাড়াতাড়ি চলে গেল। ম্যানেজারের রাগ তাড়াতাড়ি বেড়ে গেল ।
তিনি অবশ্য আমাদের কঠোর ভাষায় বকাবকি করছেন না। বরং কোমল ভাষায় তিরস্কার করছিলেন । আমার সাথে তার শ্যালক-দুলা ভাই সম্পর্ক। তিনি অফিসার সমিতির সেক্রেটারি। রফিকও সমিতির সদস্য। তার রাগ দেখানোর তেমন সুযোগ নাই । স্যার শুধু একটাই কথা বারবার বলছিলেন - তোমরা কাজটা ভালো করোনি। অন্যায় করেছো।
রফিক স্যাহেব টুকটাক চিকিৎসা করত। রোগের কারণ বা লক্ষণ নির্ণয় এর জন্য মনে হয় নিদান শাস্ত্র তার পড়া ছিল । আমার মনে হলো ম্যানেজার স্যারের রাগ কমানোর জন্য সে চিকিৎসার শেষ উপায় খুঁজছে।
আমাকে অবাক করে দিয়ে রফিক সাহেব হঠাৎই হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিল । ম্যানেজার স্যারকে বলল স্যার , একটা সত্য কথা বলব।
-আজ আমি খুব তাড়াহুড়োর মধ্যে আছি । তবুও সংক্ষেপে বলো।
- স্যার আপনি আমাকে খুব ভালোবাসেন আর জালাল সাহেবকেও আরো বেশি ভালোবাসেন।
-তোমরা দুজনই আমার প্রিয়পাত্র। তবে জালালকে আমার ঘরের মানুষ মনে হয়।
-সেই জালাল সাহেব যদি আপনাকে ভুল বোঝে , তাহলে তা কি আমার সহ্য হবে ?
-কিন্তু কেন ভুল বুঝবে ? কারণটা কী ?
-আছে । কারন হয়তো আছে। সেটা জালাল সাহেবই ভালো বলতে পারবেন । আমি শুধু জালাল সাহেবকে হাল্কা করার জন্য সকালে পানি খাবার নাটক করেছি। জানি , সব জানলে আপনি মাইন্ড করবেন না। তবু মাফ চাচ্ছি।
-আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না। ঠিক আছে পরে না হয় সব শুনব। তবে না শুনেই আগে তোমাদের মাফ করে দিলাম। এখন যাও টেবিলের কাজ কর। অফিস শেষে সব শুনব। না থাক কিছু শোনার আর দরকারই নাই। অযথা সময় নষ্ট হবে। আমার আবার বিকেলে জোনাল অফিসে মিটিং আছে। কিন্তু জালাল এখনো মন ভার করে আছে কেন ?
-ও কিছু না স্যার । আপনার সাথে সামান্য মিস আন্ডারস্টান্ডিং হয়েছিল তো তাই । আমার হয়ে রফিক সাহেবই উত্তর দিল।
-মিস আন্ডারস্টান্ডিং? বলে স্যার হো হো করে হেসে উঠল।
-হাসছেন স্যার ?
-শোনো আমার মন খারাপ হলে আমি জালালের কাছ থেকে কৌতুক শুনি । আজ জালালের মন ভালো করার জন্য আমিও না হয় একটা কৌতুক বলি।
চাকরির একটা ইন্টারভিউ বোর্ড জিজ্ঞাসা করা হলো –মেয়েটি নীচে দাঁড়িয়ে আছে, তার ইংরেজি কী ?
- স্যার ,মেয়েটি বিবাহিতা না অবিবাহিতা ?
- আপনার তা জানার দরকার নাই ।
-দরকার আছে স্যার ।
-ধরুন অবিবাহিতা । তা হলে ?
-তা হলে ইংরেজী হবে -মিস আন্ডারস্টান্ডিং।
-মানে ?
-মানে আবার কী স্যার। অবিবাহিতা মেয়ে মানে মিস , নীচে মানে আন্ডার আর দাঁড়িয়ে থাকা মানে স্টান্ডিং । মিস আন্ডারস্টান্ডিং। মেয়েটি নীচে দাঁড়িয়ে আছে এর ইংরেজি মিস আন্ডারস্টান্ডিং।
আমার সবাই মিলে অনেকক্ষণ হাসলাম। স্যার বললেন সবার মন হাল্কা হয়েছে এবার তোমরা সবার কাজে যাও। রফিক যে ভাবে পানি পানের উপকারিতা মুখস্থ বলেছে তাতে আমি খুব খুশি হয়েছি। কিন্তু রফিক , দেখ জাঁহানুর মাইন্ড করে থাকলে তাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলো। সে রকম হলে মাফ চেয়ে নিও।
আমরা চেম্বার থেকে বের হয়ে আমাদের টেবিলের দিকে যেতে যেতে রফিক সাহেব এমন ভাবে হেসে উঠল যে তার সব দাঁতগুলো একসাথে দেখা গেল। খেয়াল করে দেখলাম পান খাবার কারনে তার দাঁতগুলো আগের চেয়ে আরো খয়েরি হয়েছে। হাসতে হাসতে সে জানাল তার মেয়ের গার্হস্থ বিজ্ঞান বই থেকে সে পানি পানের উপকারিতা মুখস্থ করে এসেছে।তাই গড় গড় করে বলতে পেরেছে। তবে মুখ ফসকে জাঁহানুরের সামনে পিরিয়ডের কথা বলা উচিৎ হয়নি। সে এখন জাঁহানুরের কাছে মাফ চাইতে যাচ্ছে । আমি সাথে যাব কিনা ?
রফিক সাহেব এমনকি শেষ পর্যন্ত ম্যানেজার স্যারও সেদিন সব কিছু স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিলেও আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। বারবার মনে হচ্ছিল জলচিকিৎসা করা আর জাঁহানুরের সামনে সেনসেটিভ কথা বলা কিছুতেই উচিৎ হয়নি । আমি রফিক সাহেবের সাথে জাঁহানুরের কাছে যেতে চাই না। তাই তার কথার কোন উত্তর না দিয়ে মাথা নীচু করে আমার সিটে যেয়ে বসে পড়লাম।
যদিও প্রকাশ্যে সেদিন পিরিয়ডের কথা বলে রফিক সাহেবও অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল আর জাহাঁনুর , ম্যানেজার স্যার আর আমি লজ্জা পেয়েছিলাম কিন্তু এতো বছর পর মনে হচ্ছে আসলে ব্যাপারটা বোধ হয় লজ্জার না। আমি ভাবলে তো হবে না। আমাদের দেশে এখনও ছেলেদের মুসলমানী যতটা গর্ব আর সম্মানের, কার্ড ছাপিয়ে উৎসব করে লোক খাওয়ানোর, মেয়েদের পিরিয়ড যেন মুদ্রার ওপিঠ,লুকোচুপি করে চেপে যাওয়ার বিষয় । সামাজিক জড়তার বিষয় । এ নিয়ে আলোচনা করলে ‘‘বেহায়াপনা’’, ‘‘লজ্জা শরমের মাথা খাওয়া” ইত্যাদি নানা বক্তব্য কানে আসে। অথচ পবিত্র কোরআনেই পিরিয়ড নিয়ে আয়াত আছে।
পিরিয়ড প্রকৃতির নিয়ম, এতে লজ্জার কী আছে? আমার তো মনে হয় মেয়েদের পিরিয়ড মাতৃত্বের প্রথম সূচনা, নারীত্বের অহংকার , প্রাকৃতিক এবং নৈমিত্তিক জৈবিক প্রক্রিয়া। এখন বেগম রোকেয়া আর প্রীতিলতার উত্তরসূরীরা বিষয়টা লজ্জার না ভাবলেই হয়।
যা হোক এঘটনার পর মনে মনে ঠিক করলাম - আমার যতোই অসুবিধা হোক রফিক সাহেবের কাছে আর অভিযোগ করব না।
আমার দাদা একটা গপ্পো বলতেন। এটা সেই সময়ের গপ্পো যখন আমাদের দেশে বিলেতি গাব আসে নি। শুধু দেশী গাব। দেশী গাবে বড় বড় বিচি থাকত। কাকেরা গাব খেতে খুব ভালোবাসত। গাব খাবার সময় মাঝে মাঝে গাবের বিচি কাকের গলায় আটকে যেত। তখন কাকটা চিৎকার করে করে নাকি বলে-আর গাব- ডালে যাব না। গাবের বিচি খাব না। তারপর যখন গাবের পিচ্ছিল বিচি এক সময় গলা থেকে নেমে যায় তখন নাকি বলে,“গাব খাব না খাব কি, গাবের তুল্য আছে কি”?
আমার অবস্থাও তাই হলো। ব্যাংকে কাজের হাজার সমস্যা থাকবে এটাই স্বাভাবিক । এর আগে আমি একটি গ্রামীণ শাখার ম্যানেজার ছিলাম। কৃষিঋণ নিয়ে যে কতো বাঁধা নিজে নিজে সামলিয়েছি। তবে সপ্তপদী মার্কেট শাখায় সেকেন্ড অফিসারগিরি করতে যেয়ে যখন কোন অনাহুত বাধা পেয়েছি তখন তা রফিক সাহেবকে তা অবগত করেছি। তবে রফিক সাহেব বিভিন্ন অপরাধে প্রতিপক্ষকে উত্ত্যক্ত করার জন্য যে সব ব্যবস্থা নিত তা সমর্থনযোগ্য হয়তো ছিল না তবে খুব মজার ছিল। তবে প্রতিপক্ষকে কখনই এসব কারনে রফিক সাহেবের প্রতি হিংসাত্মক হতে দেখিনি । অনেকে হয়তো তার বা আমার এসব কার্যক্রম এখন সমর্থন করবেন না, আমিও করিনা । কিন্তু সে সময় এসব ঘটনা ঘটেছিল। আত্মজীবনী লিখতে গিয়ে সেসব তো প্রকাশ করতেই হবে। অতীতে যেয়ে তো আর সে সব ঘটনায় পরিবর্তন আনতে পারব না।
যে কাহিনির বৈধতা দেবার জন্য এত ধানাই পানাই করছি সে কাহিনিটাই না হয় এখন শুরু করি।
(পরবর্তী পর্ব ” জাহাঁনুর বেগমের আজব শাস্তি”  )

বাংলাদেশ সময়: ১৮:৩৯:২৯ ● ৪৪৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ