বঙ্গ-নিউ বরগুনার তালতলীতে টানা ভারী বৃষ্টিতে উত্তর কড়ইবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াতের একটাই রাস্তা সেটাও তলিয়ে গেছে। স্কুলটির চার পাশে থৈ থৈ করছে পানি। এর বুকে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্কুলটি। এছাড়াও সামান্য বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয়ের রাস্তায় হাঁটু সমান কাদা হয়ে যায়। ফলে স্কুলে আসতে বিড়ম্বনায় ও ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। তবুও ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪০ সালে ৬৬ শতাংশ জায়গা নিয়ে ১০নং উত্তর কড়ইবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। একটি ভবন সেটিও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। বর্তমানে ক্লাস রুম হিসেবে অস্থায়ী ভাবে একটি টিনশেড ঘর করা হয়েছে। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৫ জন। শিক্ষক রয়েছেন ৪ জন। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতি বছরই সমাপনী পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে থাকে। পিছিয়ে নেই খেলাধুলায়ও। কিন্তু বিদ্যালয়টি বিলের মাঝে হওয়াতে সামান্য বৃষ্টি হলেই মাঠসহ চলাচলের রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে ঠিক ভাবে স্কুলে আসা-যাওয়া ও নিয়মিত খেলাধুলা করতে পারে না। গত চার-পাঁচ দিন টানা ভারী বৃষ্টি হওয়াতে স্কুলটি তলিয়ে না গেলেও চার পাশসহ চলাচলের রাস্তা তলিয়ে গেছে। তবুও ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসেন শিশুরা।
এদিকে চলতি বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটিতে হাঁটু সমান কাদার সৃষ্টি হওয়ায় পাঁচ গ্রামের মানুষ বিশেষ করে কৃষকরা তাদের জমিতে ফলানো বিভিন্ন ফসল বিক্রির জন্য হাট-বাজারে নিয়ে যেতে পারছেন না বলেও জানান স্থানীয়রা। এই রাস্তা দিয়ে দুইটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও চলাচল করেন। দীর্ঘ ৩৫ বছরে বিদ্যালয়ের রাস্তায় একটি ইটও পড়েনি।
একাধিক অভিবাবকদের অভিযোগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আশা দিলেও কোনো সময় এই স্কুলের চলাচলের রাস্তার সংস্কার করে দেয় না। এতে করে আমাদের শিশুরা বৃষ্টির সময় ঝুকি নিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করেন। বৃষ্টির পানিতে রাস্তা তলিয়ে গেলে কখনো আবার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এই ভাবেই আমাদের ছেলে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া আসা করতে হয়। আমাদের দাবি এই রাস্তাটি সংস্কার করে উচু করার দাবি সরকারের কাছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আমেনা,আবুবকর ও জান্নাতিসহ একাধিক শিক্ষার্থীরা বলেন, কষ্ট করে স্কুলে যাওয়া আসা করতে হয়। এখন আর কাদায় হাঁটতে কষ্ট মনে হয় না। প্রতিদিন দুইটি শার্ট প্যান্ট নিয়ে স্কুলে আসি, কারণ কাদা দিয়ে হাঁটলে পড়ে গেলে স্কুলে এসে পাল্টাইয়া ফেলি। অনেক সময় স্কুলে আসতেও পারি না। বর্তমানে রাস্তাটি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন আমাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধের পথে। আমাদের প্রাণের দাবি যাতে করে এই রাস্তাটি উচু করে দেওয়া হয়। তারা আরও বলেন, আমাদের এই রাস্তা দিয়ে তিন কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে স্কুলে আসতে হয়। রাস্তার যে অবস্থা তাতে প্রতিনিয়ত কাদা পানি ডিঙিয়েই যেতে হয়। জামা-কাপড় নষ্ট হয়। আর এই পানি কবে কমবে আর কবেই বা স্কুলে যাবো তার ঠিক নেই।
উত্তর কড়ইবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিদা বেগম, সামান্য বর্ষার সময় হাঁটু সমান পানি জমে থাকে রাস্তায়। বর্তমানে ভারী বৃষ্টিতে রাস্তাটি তলিয়ে রয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে বেশ কষ্ট হয়। কেউ বা পানি ও কাদার ভয়ে স্কুলে আসতে চায় না। এতে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার সংখ্যা বাড়ছে। দ্রুত এই রাস্তাটি সংস্কার করে উচু করার দাবি জানাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে।
এ বিষয়ে কড়বাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম সিকদার পনু বলেন, গত অর্থ বছরে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় রাস্তাটি সংস্কার করা হয়নি। আগামী অর্থ বছরে পরিষদ থেকে ঐ রাস্তাটি সংস্কার করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, বিষয়টি খুব দুঃখজনক। খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।