ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বেড়েছে মৃত্যু পাঁচ গুণ

Home Page » জাতীয় » ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বেড়েছে মৃত্যু পাঁচ গুণ
মঙ্গলবার ● ৮ আগস্ট ২০২৩


ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেড়েছে পাঁচ গুণ

বঙ্গ-নিউজঃ   আগস্টে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যে আশঙ্কা করেছিলেন, সেটাই সত্যি হয়েছে। গত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের তুলনায় আগস্টের প্রথম সপ্তাহে এই রোগে মৃত্যু ও আক্রান্ত বেড়েছে পাঁচ গুণ। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৭৫১ জন।

ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নির্মূলে জৈব কীটনাশক ‘বিটিআই’ প্রয়োগ শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যেহেতু দেশের সব জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে, তাই শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশেই মশক নিধন কার্যক্রম চালাতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে দেশে ডেঙ্গুতে মারা যান ১৫ জন এবং হাসপাতালে ভর্তি হন ৩ হাজার ৫০ জন। আর আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ৭৬ জনের এবং আক্রান্ত হন ১৭ হাজার ৬৫১ জন। এ হিসাবে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু বেড়েছে ৫ গুণ। গত তিন বছরের উপাত্ত পর্যালোচনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার বেশি।

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে ২ হাজার ৭৫১ জন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১ হাজার ১১৯ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ১ হাজার ৬৩২ জন ভর্তি হয়েছেন। এ সময়ে ডেঙ্গুতে ঢাকায় ১০ জন এবং ঢাকার বাইরে চারজন প্রাণ হারিয়েছেন।

গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ৫৭২ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে ঢাকায় ৪ হাজার ৬৫২ জন এবং ঢাকার বাইরে ৪ হাজার ৯২০ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬৯ হাজার ৪৮৩ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৬ হাজার ৭২০ জন এবং ঢাকার বাইরে ৩২ হাজার ৭৬৩ জন; আর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২৭ জনে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গুতে ছয়জনের মৃত্যু হয়। ফেব্রুয়ারিতে মারা যান দু’জন। মার্চে মৃত্যু না থাকলেও এপ্রিল ও মে মাসে মারা যান দু’জন করে। জুনে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ মাসে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়। জুলাই মারা যান ২০৪ জন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে, এটি মশা প্রজননের জন্য উপযোগী। তাই পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকার পাশাপাশি বাইরেও আক্রান্ত বাড়বে।’ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনসম্পৃক্ততা জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে সারাদেশে বছরজুড়ে মশা নিধন কার্যক্রম জরুরি। এ ব্যাপারে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।’ সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘যেমন করেই হোক সরকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি ম্যানেজ করবে।’ তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ ফেললেও এ রোগের বাহক এডিস মশা নিধনের কাজটি স্বাস্থ্য বিভাগের নয়, এই দায়িত্ব মূলত স্থানীয় সরকার বিভাগের।’

সারা বছর মশক নিধন কার্যক্রম চালানোর জন্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাকে পরামর্শ দেওয়ার কথা জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসায় যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সরকার তা নিয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম একটি মাল্টিসেক্টরাল অ্যাপ্রোচ। সবাই মিলে কাজ করতে হবে। আমরা চিকিৎসা দেব, কলকারখানায় স্প্রে করার বিষয়টি শিল্প মন্ত্রণালয় বা সিটি করপোরেশন থেকে হতে পারে।’ ডেঙ্গুর টিকার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডেঙ্গুর টিকার অনুমোদন দিলে তা দেশে আনার ব্যবস্থা করা হবে। তবে টিকা এখনও তৈরি হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১১:১১:১৯ ● ২৪৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ