বঙ্গ-নিউজঃ দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষদের সংগঠন ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম (ইএমএফ) বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আর সম্ভব নয়। সবার সহযোগিতা নিশ্চিত করে সংবিধান অনুযায়ী বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। গতকাল রোববার রাজধানীতে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা জানান পর্যবেক্ষক দলের প্রতিনিধিরা। এদিকে বিএনপি ইএমএফের বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে না চাওয়ায় তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে নির্বাচন-পূর্ববর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে এসেছেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। পর্যবেক্ষকদের দলে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী। প্রতিনিধি দলটি নাগরিক সংলাপে অংশ নেওয়াসহ নির্বাচন কমিশন ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করছে।
ইসিতে বৈঠক শেষে ইএমএফ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আবেদ আলী সাংবাদিকদের জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি ও সাম্প্রতিক নির্বাচন বিষয়ে প্রতিনিধি দলের বিদেশি পর্যবেক্ষকরা জানতে চেয়েছেন। আগামী নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা আসতে চাইছেন। এ বিষয়ে তারা ইসির আইন ও বিধি জানতে চেয়েছেন। ইসি আশ্বস্ত করেছে, পর্যবেক্ষকরা ভোটের আগে-পরে আসতে পারবেন। কমিশন থেকে কোনো বাধা নেই।
তিনি বলেন, প্রতিনিধিরা ঢাকা-১৭ আসনে হিরো আলমের ওপর হামলায় ইসি কী পদক্ষেপ নিয়েছে– তাও জানতে চেয়েছেন কমিশনের কাছে। ইসি জানিয়েছে, যারা হামলা করেছে তাদের গ্রেপ্তার ও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান সাংবিধানিক ব্যবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা ব্যক্ত করেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা।
ইএমএফ চেয়ারম্যান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেহেতু অসাংবিধানিক, তাই সে বিষয়ে প্রতিনিধিদের কোনো আগ্রহ নেই। তারা বলছেন, কমিশনের যে আইন আছে তার যেন সঠিক প্রয়োগ হয়। রাজনৈতিক দলগুলো ও সরকার যেন ইসিকে সহযোগিতা দেয়। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করলে এই কমিশনের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।
ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের আমন্ত্রণে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গত ২৮ জুলাই থেকে ঢাকা সফর করছে। প্রতিনিধি দলে রয়েছেন– যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষক টেরি এল ইসলে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি পোর্টালের রাজনৈতিক বিষয়ক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নিক পউল, জাপানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজকর্মী ইউসুকি সুগু, চীনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক এন্ডি লিন, দক্ষিণ কোরিয়ার সমাজকর্মী পার্ক র্চু চাং এবং যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাইকেল জন শেরিফ। ইএমএফের পরিচালক অধ্যাপক মাহফুজুল ইসলাম, অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ ও সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি মিজানুর রহমান মজুমদার প্রতিনিধি দলটিকে সহযোগিতা করছেন।
টেরি এল ইসলে সাংবাদিকের বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। এটি করতে হলে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। ইসি এটা চাইলেও করতে পারবে না। কারণ এটি করার কোনো আইনি কাঠামো নেই। এই সরকারের অধীনে কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে। নিক পউল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আশা করছি সংবিধান অনুযায়ী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে ইসি।
পরে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের জানান, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নিয়ে ইএমএফ প্রতিনিধি দলের একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসবেন কিনা, আসতে হলে তাদের কী করণীয়, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মূলত আলোচনা হয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন কীভাবে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজন করবে, কীভাবে কাজ করবে।
ইসি সচিব জানান, সম্প্রতি একটি সিটি করপোরেশন ও একটি সংসদ উপনির্বাচনে ছোটখাটো যে সমস্যা দেখা দিয়েছিল, বিশেষ করে প্রার্থীদের আক্রমণ করা হয়েছিল, সে বিষয়ে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা নিয়েছে, এ বিষয়গুলো তারা জানতে চেয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আসতে চাইলে স্বাগত জানানো হবে। তবে অবশ্যই তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আসতে হবে।
প্রতিনিধি দল গতকাল দুপুরে গিয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্যে। প্রতিমন্ত্রী দপ্তরে না থাকায় সাক্ষাৎ হয়নি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর চলে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রতিনিধি দলের সদস্য নিক পউল বলেন, আমরা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে এসেছিলাম। তিনি অন্য একটি বৈঠকে ব্যস্ত। সম্প্রতি আমি তাঁর সঙ্গে ব্রাসেলসে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছি। যেখানে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন বাণিজ্য সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। বৈঠকগুলোতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেছি, নির্বাচনের সময় কীভাবে কমিশন পুরো ব্যবস্থা বুঝে নেবে ও পুলিশ কীভাবে পরিচালিত হবে। আমার মতে, যে কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এগুলো হচ্ছে শক্তিশালী সুরক্ষা, যা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে অবাস্তব করে দেয়। সংবিধানে না থাকায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্তমানে অসম্ভব।
এদিকে ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের আমন্ত্রণে সফররত বিদেশি পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি হয়নি বিএনপি। সে জন্য প্রতিনিধি দলটি হতাশা প্রকাশ করেছে।
এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিনিধি দলের সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষক টেরি এল ইসলে বলেন, আমরা বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরতে চাই। আমরা খুবই হতাশ। বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েছিলাম তাদের কথা শুনতে। সব সময় যে কোনো ঘটনার দুটি অংশ থাকে। আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নে অবাধ ও স্বাধীন। নির্বাচন নিয়ে দলটির উদ্বেগগুলো জানতে আমাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে খোলা আমন্ত্রণ থাকল।
বৈঠকগুলোতে আলোচনা নিয়ে সন্তুষ্টির বিষয়ে জানতে চাইলে নিক পউল বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা খুবই চিত্তাকর্ষক আশ্বাস পেয়েছি নির্বাচনের সময় কীভাবে কমিশন নির্বাচন ও পুলিশ পরিচালনা করবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এগুলো হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী সুরক্ষা।