ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ভর্তি নিয়ে বাবা ও চিকিৎসকের হাতাহাতি

Home Page » প্রথমপাতা » ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ভর্তি নিয়ে বাবা ও চিকিৎসকের হাতাহাতি
বৃহস্পতিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৩


ফাইল ছবি
বঙ্গ-নিউজঃ   রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুকে ভর্তি করানো নিয়ে শিশুর বাবা ও চিকিৎসকের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অবশেষে শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও তার বাবাকে আটক করে পাশের মুগদা থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়।

গতকাল দুপুরে মুগদা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এ ঘটনা ঘটে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ‘সকালের ওই ঘটনার পর স্বাস্থ্য অধিদফতর একটি তদন্ত কমিটি করেছে। ওখানকার ঘটনাটি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।’

আহমেদুল কবীর বলেন, ‘একটি শিশুকে নিয়ে তার অভিভাবকরা হাসপাতালে এসেছিলেন। কিন্তু মুগদা হাসপাতালে এখন নতুন রোগী ভর্তি করার মতো অবস্থা নেই। কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটির অভিভাবকদের জানিয়েছিলেন, সেখানে একটা বিছানায় দুজন করে শিশু আছে। সেখানে আরেকজন শিশুকে ভর্তি করলে চিকিৎসা যথাযথভাবে হবে না। তাকে স্যালাইনও দেওয়া যাবে না সমস্যা হবে। অন্য হাসপাতালে সিট খালি আছে, আপনারা সেখানে যান। ওই বাচ্চার অভিভাবক ক্ষিপ্ত হয়ে চিকিৎসকের ওপর চড়াও হন। সেখানে একটা টুল ছিল, সেটা দিয়ে মেরে ওই চিকিৎসকের হাত ভেঙে দেন।
তিনি আরও বলেন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইতোমধ্যে ৬ শতাধিক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। এখন আর নতুন করে কোনো রোগী ভর্তিতে মুগদার সক্ষমতা নেই। চিকিৎসকরা রাত-দিন রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসকরা সারারাত কষ্ট করে চিকিৎসা দিচ্ছেন, রোগীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। সেখানে চিকিৎসকের ওপর আঘাত করা অন্তত গর্হিত কাজ।’

শিশুটির মা সাথী জানান, তারা মানিকনগর এলাকায় থাকেন। শিশুটি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত, হাসপাতালে শয্যা না পাওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে বাসায় রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু অবস্থা খারাপ হলে গতকাল সকালে তাকে মুগদা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দরজা বন্ধ পান তারা। সেখানকার একজন আয়ার কাছে তারা শিশুটির অবস্থা এবং হাসপাতালে ভর্তি করার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘ওই সিস্টার আমাকে বলেছেন ডাক্তারকে দেখাতে। আমরা গিয়ে দেখি গেট লক করা। আমরা গেটে নক করলে সেটা খোলেন একজন ডাক্তার। আমার স্বামী হাবিবুর রহমান তাকে বলেন, ‘স্যার আমার বাচ্চা অনেক অসুস্থ, নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। তাকে একটু দেখেন। কিন্তু উনি ঘুম থেকে উঠছেন, হয়তো এ কারণে মাথা গরম ছিল। বলেন, ‘এইখান থেকে যান, সিট নাই।’ আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে আমার স্বামীকে তিনি চড় মারলে আমার স্বামী ওই চিকিৎসকের কলার ধরেন। এরপর আরও কয়েকজন এসে আমাদের মারধর করেন।’ সাথী জানান, ওই চিকিৎসক তার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলে হাবিবুর রহমান দরজায় লাথি দেন এবং দরজা খুলতে বলেন। একপর্যায়ে হাবিবুর রহমান ৯৯৯-এ ফোন দেন। পুলিশ এসে হাবিবুর রহমানকে একটি কক্ষে নিয়ে বসায়। পরে ওই শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শিশুদের জন্য নির্ধারিত ডেঙ্গু ওয়ার্ডে পাঠিয়ে তাকে স্যালাইন দেওয়া হয়। এ অবস্থায় বাচ্চাসহ তিনি আবার নিচে এসে দেখেন হাবিবুর রহমানের হাতে হাতকড়া পরানো, কিছুক্ষণ পর তাকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। মারামারির ঘটনাটির পর ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুটির বাবা হাবিবুর রহমানকে আটকের পর তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মজিদ।

ডেঙ্গু আক্রান্ত ৪০ হাজার ছাড়াল : সারা দেশে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা। গতকাল আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬৫৩ জন। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেন ৪০ হাজার ৩৪১ জন। গতকাল মারা গেছেন ১৪ জন। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুজ্বরে মারা গেলেন ২১৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, গতকাল আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১ হাজার ৩২৭ এবং ঢাকার বাইরের ১ হাজার ৩২৬ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৮ হাজার ১৮৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৪ হাজার ৭৬০ এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩ হাজার ৪২৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার ৩৪১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ২৩ হাজার ৬৭৬ এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৬ হাজার ৬৬৫ জন। আক্রান্তের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩১ হাজার ৯৩৭ জন। ঢাকায় ১৮ হাজার ৭৪৪ এবং ঢাকার বাইরে ১৩ হাজার ১৯৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ২১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১৭২ এবং ঢাকার বাইরের ৪৩ জন। সারা দেশে এডিস মশা মারতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব কঠিন হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত ডেঙ্গুবিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘শুধু ঢাকা নয়, ডেঙ্গু যতটা মেডিকেল সমস্যা, তার থেকে বেশি পরিবেশের সমস্যা। পাবলিক হেলথ হচ্ছে জনগণকে সম্পৃক্ত করে মশা নিয়ন্ত্রণ করা। ডেঙ্গু রোগী যদি এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। এখন ঢাকা সিটির থেকে ঢাকার বাইরে রোগীর সংখ্যা বেশি।

বাংলাদেশ সময়: ১১:১৭:৫৩ ● ২৬৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ