বঙ্গ-নিউজঃ আজ বৃহস্পতিবার। ঢাকায় এদিন কোনো কাজে কেন পথে নামা লাগবে, না নেমে থাকা যাবে কি না—এমন ভাবনা-আলোচনা নগরবাসীর মনে ঘুরছিল কয়েক দিন ধরে। শুধু ভাবনা নয়, কিছুটা দুর্ভাবনাও। সেই দুর্ভাবনায় আপাতত স্বস্তি। তবে তা শুধু এক দিনের জন্য।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসছে। দাবি আদায়ে অনড় বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও কোনো ছাড় দিতে নারাজ। এমন এক প্রেক্ষাপটে আজ বৃহস্পতিবার একই দিনে ঢাকায় বড় সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে বসেছিল দুই পক্ষ। মানুষের মনে শঙ্কা চেপে বসেছিল সে জন্য, রাজপথে আবার না শুরু হয়ে যায় সংঘাত!
এই অবস্থায় গতকাল বুধবার রাতে প্রথম ঘোষণাটি আসে বিএনপির দিক থেকে। দলটি জানায়, বৃহস্পতিবার নয়, তারা সমাবেশ করে শুক্রবার। রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই হবে এই অয়োজন।
বিএনপির এই ঘোষণার মিনিট দশেক পরেই দিন বদলের ঘোষণা আসে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা সমাবেশ’ করার কথা ছিল তাদের অঙ্গ ও সহযোগী তিন সংগঠনের। তবে তারাও জানিয়ে দেয়, বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে তারাও শুক্রবার সমাবেশ করবে। আগারগাঁওয়ে পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে তারা এই সমাবেশ করবে।
দুই পক্ষের এই শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় রাজধানীবাসী এবং দেশের মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল এক দিনের জন্য। কিন্তু পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি থেকেই গেল। একই সঙ্গে যথারীতি থেকে গেছে ভয়, শঙ্কা, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠাও। কাল শুক্রবার হয়তো সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে মানুষ।
সঙ্গে আরও একটি শঙ্কার বিষয় আছে। বিএনপি বলছে, তারা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশ করবে। কিন্তু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বলছে, তাদের সেখানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
ডিএমপির কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক গতকাল রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নয়াপল্টনে কোনো সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে না। অন্য কোথাও যদি সমাবেশ করতে চায় তাহলে নতুন করে আবেদন করতে হবে।’
এর আগে গতকাল দুপুরে গোলাম ফারুক বলেছিলেন, দলগুলোর উচিত ছুটির দিনে সমাবেশের কথা ভাবা। কেননা, কর্মদিবসে এমন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে।
সরকারের সঙ্গে হিসাব রাজপথে ফয়সালার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে রাজপথেই বিএনপিকে প্রতিহত করে ক্ষমতায় থাকতে চায় আওয়ামী লীগ। দুই দলের মুখোমুখি লড়াই বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা ছড়াচ্ছে রাজপথে। কাজেই দিন-তারিখ বদলের পরেও সেই উত্তেজনায় ভাটা পড়েনি। শুক্রবার কী হতে যাচ্ছে—এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছে সাধারণ মানুষ।
পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে একে অপরকে উদ্দেশ করে হুঁশিয়ারি এসেছে দুই দলের পক্ষ থেকেই। বিএনপির অভিযোগ, সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে সহিংসতাকে ছড়িয়ে দিতে চায়। তারা সহিংসতা চায় বলেই ২৪ তারিখের কর্মসূচি ২৭ তারিখে নিয়ে গেছে। বিএনপির সমাবেশ নস্যাৎ করার চক্রান্ত থেকেই পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। যদিও কোনো চক্রান্ত করে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ নস্যাৎ করা যাবে না বলেও জোর দিয়ে বলেছেন দলটির নীতিনির্ধারকেরা। আর যদি কোনো বাধা আসে, সংঘাতের ঘটনা ঘটে, সে জন্য সরকারকে তার দায়ভার বহন করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের নামে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায় বিএনপি। যে কারণে নির্বাচনে না এসে নানা রকম ষড়যন্ত্র করার অপকৌশল নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে রাজপথে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে জননিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় তারা। এ জন্য বিএনপিকে মোকাবিলা করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, মহাসমাবেশের নামে কোনোভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট হলে এবং জননিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটলে তার দায়ভার বিএনপিকেই নিতে হবে।
দুই দলের এমন যুদ্ধংদেহী মনোভাবের বিপরীতে সংঘাত এড়াতে সরকারকে যথাযথ দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকার যেহেতু নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় আছে, তাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। সরকারের ভূমিকা যেন আওয়ামী লীগের পক্ষে বেশি বা বিএনপির বিপক্ষে বেশি—এ রকম না হয়। তেমনটা হলে সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হবে। কোনো দল হিসেবে না, সরকারকে সরকারের মতো ভূমিকা পালন করতে হবে।