বঙ্গ-নিউজঃ মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কার্যালয়ে চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ইইউর মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর। পরে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
গিলমোর বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা হয়েছে। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক অনেক ভালো। অর্থনৈতিকভাবে আমাদের সম্পর্ক অনেক শক্তিশালী। বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যুতে আমরা বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছি। তারা সরকারি পর্যায়ে কথা বলবে। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে একটি প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যেই ঘুরে গেছে; তারা শিগগিরই রিপোর্ট দেবে। তবে নির্বাচন সামনে রেখে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ আছে।
কমিশন চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম এসব বিষয় নিয়েই মানবাধিকার কমিশন কাজ করছে। এসব ঘটনা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। বিদেশিদের কাছে ভাবমূর্তি নষ্ট করে। নির্বাচন নিয়ে তেমন কিছু আলোচনা হয়নি। তবে নির্বাচনে এমন কিছু করা যাবে না যাতে আমাদের দেশের ইমেজ খারাপ হয়।
বিচারবহির্ভূত হত্যা-গুম-খুন এসব কোনোভাবেই কাম্য নয়, এসব কারণে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। নির্বাহী বিভাগকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।
এ বৈঠকে গিলমোরের সঙ্গে ছিলেন ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের (ইইএএস) রাজনৈতিক উপদেষ্টা ভিক্টর ভিলিক। বৈঠকে অংশ অংশ নেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত এইচ ই চার্লস হোয়াইটলিসহ চার সদস্যের প্রতিনিধি দল।
সোমবার (২৪ জুলাই) সরকারের আমন্ত্রণে ছয় দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর।
সফরের প্রথম দিনেই তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
আজ মঙ্গলবার সফরের দ্বিতীয় দিনে ইমন গিলমোর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সফরকালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
তিনি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ও ঢাকায় জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মতবিনিময় করবেন। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখতে তিনি ২৭ জুলাই কক্সবাজার যাবেন।
ইইউ প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল ঢাকা ছাড়ার পরদিনই ইমন গিলমোর বাংলাদেশে আসেন। ফলে রাজনীতি ও নির্বাচনসংশ্লিষ্টদের ধারণা, বিভিন্ন বৈঠকে ইইউর এ বিশেষ প্রতিনিধি রোহিঙ্গা পরিস্থিতির পাশাপাশি রাজনীতি, নির্বাচন, সুশাসন, নাগরিক অধিকার ও সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।
বাংলাদেশে ইমোন গিলমোরের এটি দ্বিতীয় সফর। এর আগে ২০১৯ সালের জুনে তিনি প্রথমবার বাংলাদেশে আসেন। ওই সফর শেষে গিলমোর বাংলাদেশে শ্রম অধিকারসহ মানবাধিকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের কথা বলেছিলেন। গিলমোর ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আয়ারল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। তার সময়ে আয়ারল্যান্ড আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বেইলআউট থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছিল।
গত মে মাসে ব্রাসেলস সফরের সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ইইউর চার কমিশনারসহ উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেন। ইইউ মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোরের সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।