হাজেরা আপার জল চিকিৎসা-১৪
হাজেরা আপা কোঁকাতে কোঁকাতে আমার সামনে এসে কোন রকমে বসল। আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বলল যে মোমবাতি দিয়ে রফিক আমার চিকিৎসা করেছে সেই মোমবাতি দুটি রফিকের নিকট নিয়ে নিয়ে আমার হাতে দে।
-কেন? সে মোমবাতি দিয়ে কি হবে?
-আমি তোমাদের এখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে জোনাল অফিসে আমার চেয়ারে বসার আগেই অসুস্থ হয়ে টেবিল ধরে মেঝেতে পড়ে যাই।সবাই মিলে আমাকে সোফায় শোয়ায়ে দেয়। একটু সুস্থ্ বোধ করার পর বাসায় যাবার জন্য ডিজিএম স্যারের কাছে ছুটি নিতে যাই।
স্যার সব শুনে বললেন-এসব চিকিৎসা -মিকিৎসা সব আমার কাছে ভুঁয়া মনে হচ্ছে।স্যার আমাকে ঐ মোমবাতি ২টি নিয়ে যেতে বলেছেন ।
আমি সবই বুঝলাম। ডিজিএম স্যার আলামত সংগ্রহ করতে চাচ্ছেন। বিচার কার্যে আলামত অপরিহার্য।
বগুড়ার তখনকার ডিজিএম ছিলেন জনাব শাহজাহান মন্টু। বাড়ি পাবনা। উনি এ কেইসটা হ্যান্ডেল করলে রফিকের তো ট্রান্সফার কনফার্ম। তার সাথে সহযোগী হিসাবে আমারও।
আপা রফিকের সাথে এখন কথা বলতেও আগ্রহী নয়। আমার মাধ্যমেই মোমবতি সংগ্রহ করতে চায়। আমার সামনে বসে বারবার সে মোমবাতি প্রদানের জন্য তাগাদা দিচ্ছে। আর আমি ভাবছি অন্য কথা। কোনো অজুহাতে যদি মোমবাতি হস্তান্তর প্রক্রিয়া ঠেকান যায়।
আসন্ন বিপদে আমার মাথা মাঝে-মধ্যে খুলে যায়। আজ খুলে গেল। বুঝলাম এজন্য সামান্য কিছু ভুল -ভাল যুক্তি লাগবে। লাগে লাগুক, আগে তো নিজে বাঁচি আর সহকর্মীকে বাঁচাই। গলাটা যতদূর সম্ভব নামিয়ে হাজেরা আপাকে বললাম- আপা ঠিক করে বলুন তো দেখি এ চিকিৎসার জন্য রফিক সাহেব আপনার কাছে কি কোন টাকা -পয়সা দাবী করেছে? আপা জানালেন -না, টাকা - পয়সা চায়নি। তখন আমি সুযোগ মতো বললাম-দেখেন টাকা -পয়সা চায়নি , আপনার অনুরোধেই চিকিৎসা করেছে। চিকিৎসা করার পর কেবল ২/৩ ঘন্টা সময় পার হয়েছে। ২/৩ ঘন্টা সময়ের মধ্যে কি চিকিৎসার ফলাফল পাওয়া যায়?
হাজেরা আপা আমতা আমতা করে বলল- তা অবশ্য ঠিক বলেছেন।
তখন আমি বললাম-২/৩ দিন যাক। তারপর না হয় তখন আমি মোমবাতির কথা রফিক সাহেবকে বলব।
-কিন্তু ডিজিএম স্যার তো মোমবাতি চাচ্ছেন।
আপনি অফিসে যেয়ে চুপচাপ থাকেন । আপনি নিজে না বললে মনে হয় না কেউ আর এ বিষয়ে আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলবেন আপনি স্বেচ্ছায় এ চিকিৎসা নিয়েছেন ।
-ঠিক আছে জালাল, সবই তো বুঝলাম কিন্তু আমার শরীর খুব খারাপ লাগছে। দু‘কনুই আর কপাল প্রচন্ড ব্যথা করছে। আর বমি বমি লাগছে। বসে থাকতে পারছি না।
-ঠিক আছে আপা ,আপনি এ অসুখের কথা বলে না হয় ২/৩ দিন ছুটি নেন। আর আজ এখনই বাসায় চলে যান। আমাদের চিকিৎসার কথা কাউকে বলার দরকার নাই।
-যাই তাহলে, তাই করি।
হাজেরা আপা উঠে গেল। তাকে সন্তুষ্টা মনে হলো। আমার যুক্তি মনে হয় তার মনে ধরেছে।
রফিক সাহেবকে ডেকে সব কথা বললাম । রফিক সাহেব আমার উপস্থিত বুদ্ধির তারিফ করল। আমার যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল।
পরবর্তী পর্ব আগামীকাল রাত সাড়ে নয়টায় ।।।