বঙ্গ-নিউজঃ রাজধানীর সদরঘাটে বুড়িগঙ্গা নদীতে বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় অর্ধশতাধিক যাত্রীসহ একটি ওয়াটার বাস ডুবে গেছে। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুই ঘণ্টা পর তিন যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
রাত সাড়ে ১১টায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ও স্থানীয়রা আটজনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। তাদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও তিনজন নারী। যাত্রীদের মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে রাতে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় কোস্টগার্ডের ডুবুরি দলও। রাত দেড়টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও উদ্ধার অভিযান চলছিল।
ডুবে যাওয়া ওয়াটার বাসের অবস্থান রাতেই শনাক্ত করে ডুবুরি দল। তবে তা টেনে তোলা যায়নি। এ ছাড়া ওয়াটার বাসে ছোট ছোট জানালা থাকায় পানির নিচে গিয়ে এর ভেতরে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয় ডুবুরি দল। নদীর স্রোতের কারণেও উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হয়েছে। উদ্ধার কাজ নির্বিঘ্নে চালাতে দক্ষিণাঞ্চলগামী বিভিন্ন লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনাল থেকে সরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
নিহত দু’জনের পরিচয় মিলেছে। তারা হলেন– আলিফ (১৪) ও ফাহিম (২৫)। আলিফের গ্রামের বাড়ি কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়ার চৌধুরীপাড়ায়। ফাহিম দোহারের জয়পাড়ার সবুজ মিয়ার ছেলে। অন্যজন মধ্যবয়সী। তিনজনের লাশ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে। স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে হাসপাতালের পরিবেশ।
বেঁচে যাওয়া কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওয়াটার বাসটি রাজধানীর লালকুঠি ঘাট থেকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেলঘাটে যাচ্ছিল। মাঝনদীতে এলে এটি এমভি আরাবি নামে বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় ডুবে যায়। খবর পেয়ে রাত ৯টার দিকে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
বেঁচে যাওয়া যাত্রী ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমি কেরানীগঞ্জে যাওয়ার জন্য লালকুঠি ঘাট থেকে ওয়াটার বাসে উঠি। নিচে বসার জায়গা না পেয়ে ওয়াটার বাসের ছাদে বসেছিলাম। আমার জানামতে, ওয়াটার বাসটিতে ৫৫-৬০ জন যাত্রী ছিল। বাল্কহেডের ধাক্কায় আমিসহ কয়েকজন সাঁতরাতে থাকি। আশপাশের নৌকার মাঝিরা এসে উদ্ধার করেন। নিচের যাত্রীদের বেশির ভাগই ডুবে গেছেন।’
ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম দোলন বলেন, ওয়াটার বাসডুবির ঘটনায় সদরঘাট ফায়ার স্টেশনের দুটি ও সিদ্দিকবাজার থেকে একটি ইউনিটের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ করছে।
সদরঘাট নৌ থানার এসআই রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘ওয়াটার বাসটির কত যাত্রী নিখোঁজ, তা আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা বলছেন, যাত্রীর সংখ্যা অর্ধশতাধিক হতে পারে।’
মধ্যরাতে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে দেখা যায়, নিহত আলিফের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। আলিফ সদরঘাটের একটি কাপড়ের দোকানে চাকরি করত। তার চাচা মিলন জানান, আলিফের বাবা গত পাঁচ বছর ধরে শয্যাশায়ী। ছেলেটির আয় দিয়েই চলত পরিবারটি।
হাসপাতালের সামনে মৃত ও আহতদের স্বজনরা ভিড় করছেন। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সমাগম বাড়ছে মিটফোর্ড ইমার্জেন্সি গেটে। উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা চলছিল। এখানে নিখোঁজদের খোঁজে আসছেন অনেক স্বজন। অনেকেই ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল ছোটাছুটি করছেন।