শ্যাম যেন ফিরে আসে -এম নন্দিনী খান
Home Page »
সাহিত্য »
শ্যাম যেন ফিরে আসে -এম নন্দিনী খান
বর্ষায় নতুন পানি অদ্ভুত মাদকতা নিয়ে-
শিকারি চিতার পায়ে নিঃশব্দে আসে।
অষ্টাদশী চাঁদ সেই বেনোজলে ডুবে যায়
জোছনার আলো সাঁতরে বেড়ায় পানির গভীরে।
হাওরের জলজ প্রাণগুলো উপকূলমুখী হয়
মানবির সান্নিধ্য পেতে তার ফর্সা পায়ে জড়ায়।
প্রণয়কাতর ব্যাঙ প্রহর গুনে প্রেয়সীর তরে
প্রকৃতি আসক্তির চোখে সেই নিশিলীলা দেখে।
হাওড়ের এই গোপন জীবন ভাসবে না সাদামাটা চোখে।
গজারমাছ একঝাঁক ছানাপোনা নিয়ে-
আঙিনার কুলে নাইওরে আসে।
পুটিমাছ-কৈ মাছ কচুরির ফাঁকে ফাঁকে লেজের সিম্ফোনি তোলে
ডাহুক তখন বাউলের একতারা সেই জলের বসন্তে।
ছানাদের ব্যস্ততা সরু সরু পায়
সামান্ত প্রভু হয়ে দখলদারিত্ব চালায়।
বৃষ্টিভেজা আকাশছিদ্র বিকেলে
গাছেরা নেয়ে ওঠে, চুল মোছে লালশাড়ি পরে
ভেজা কাক-শালিক শান্তির চুক্তিতে
গায়ে গায়ে ঘেঁষে ভালোবাসে অসীম প্রণয়ে।
যুবতি হাঁস ভাসান ভাসায়
সাদা পাখনায় তার আলতার মোহ রয় লেগে।
জোছনার সেই শ্রাবণ পূর্ণিমার রাতে
হাওরের কোকিল কালো জলে
যুবতি চাঁদ দেহের বসন খুলে-
নিজেকে মেলে ধরে প্রলুব্ধ করে।
নারকেল পাতার ফাঁকে আলোর ঝলক
আমার মগ্নতা চুরমার করে।
সর্বনাশা বৃষ্টির মোহন ধ্বনি-
রাধার মন ঘরছাড়া করে
দক্ষিণা বান প্রবল রোষে-
আঘাত করে বাড়ির উঠোনে
তখন আমি ধ্যানমগ্ন ঋষি-
কল্পনায় তোমাকে দেখি জলের বাসরে।
রাত গভীর হলে বৃষ্টির ঝুমঝুম শব্দ-
আরো তেড়ে আসে, বধীরতা আনে শ্রবনে।
তোমার দু’চোখ দেখি হাওড়ের জলে ভাসে
ভেসে ভেসে কাছে আসে কুলের বাহুডোরে।
বাসনারা জেগে ওঠে কানায় কানায় -
তোমার হাতে হাত রেখে মেঘের ভেলায় ভেসে
হারিয়ে যেতে চায় মন
পৃথিবী ছেড়ে অচেনা নক্ষত্র ছায়া পথে।
বর্ষায় হাওড়ের নেশালাগা ঘ্রাণ
রূপের বাহার অনন্য সুন্দরে চেতনার অলিগলি ডোবে।
আমার তরল হৃদয় মেঘের কাছে বলে
এমন বাদল দিনে শ্যাম যেন ফিরে আসে হাওড়ের পাড়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫৪:০৬ ●
৩৩০ বার পঠিত
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)