রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন: পর্ব-২৯৭:জালাল উদ্দীন মাহমুদ
Home Page »
সাহিত্য »
রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন: পর্ব-২৯৭:জালাল উদ্দীন মাহমুদ
ছুটি নিয়ে ছুটাছুটি -৯
জীবনের সব কিছুই রঙে ভরা নয় । বিবর্ণ,-রংচটা ঘটনাও আছে। ভেবেছিলাম জীবনের মলিন –ফ্যাকাশে ঘটনাগুলি আমার বইয়ে লিখব না। কিন্তু চাইলেই কী বিবর্ণ ঘটনাগুলি দুরে সরে রাখা যায় । বইয়ের নাম তো রেখেছি রঙে ভরা আমার ব্যাংকে জীবন। মলিন –ফ্যাকাশে ঘটনাগুলি রঙে ভরা হবে কেমনে? ভাবলাম , পানি যখন অল্প পরিমানে গ্লাসে বা অন্য কোনও পাত্রে থাকে তখন সেটাকে আমাদের চোখে বর্ণহীন দেখায়। কিন্তু পুরুত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে পানির রং গাঢ় নীল বর্ণ ধারণ করে। আমার বিবর্ণ,-রংচটা ঘটনাগুলি মিলে মিশে কোনও রঙ ধারণ করে কিনা –দেখা যাক।
তাহমিনার এ ঘটনার প্রায় বছর কুড়ি পরে ছুটি পাওয়া নিয়ে আমি অন্তত দু বার বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়েছিলাম- ব্যাংকের আইটি ডিভিশনে। সে দুটি ঘটনা আজ বেশ মনে পড়ছে।
প্রথমবার ছুটি না পেয়ে শ্বশুর বাড়ির সাথে আমার সম্পর্ক ফিকে হয়ে গিয়েছিল। আর দ্বিতীয়বার স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিঁড়ে যেতে ধরেছিল।
২০০৯ সালের কথা।সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার পদমর্যদায় আইটি ডিভিশনে সদ্য যোগদান করেছি। সারাদিন এবং অর্ধেক রাত জুড়ে অনলাইন ব্যাংকিং বাস্তবায়নের কাজ চলছে পুরাদমে। বিদেশী টিমও কাজ করছে। বলতে গেলে বাহিরের জগত থেকে আমরা পুরাপুরি বিচ্ছিন্ন। ডি জি এম স্যার নিজেও ছুটি নেন না অন্যকেও ছুটি দেন না। অবশ্য ছুটি দেয়া নেয়ার মতো পজিশনও তখন আইটি ডিভিশনে ছিল না। ছুটি বিষয়টি তখন স্যারের কাছে এবং আমাদের কাছে আউট অব সিলেবাস।কিন্তু একদিন সিলেবাস বহির্ভূত ছুটি বিষয়টিই আমার জন্য খুব প্রয়োজনীয় হয়ে উঠলো। আপন শালার বিয়ে। বগুড়া যেতে হবে। স্ত্রী সব প্রস্তুতি শেষ করে ফেলেছে-আমি ছুটি পেলেই রওয়ানা দিবে। আমি অবশ্য জানি যে আমার ছুটি হবে না। তবুও চেষ্টা করে দেখতে দোষ কি। এজিএম জনাব আনিসুর রহমান সাহেবকে (বর্তমানে এম ডি ,বেসিক ব্যাংক) বললাম। তিনি বললেন তার আপত্তি নাই তবে ডিজিএম সাহেব বোধ হয় রাজি হবেন না। পরামর্শ দিলেন, আমি যেন আগে বিষয়টি ডিজিএম সাহেবকে বলি। তারপর উনি রাজী না হলে তিনি (এজিএম সাহেব) আমার সাথে আর একবার ডিজিএম সাহেবের কাছে যেয়ে চেষ্টা করবেন। তার পরামর্শ আমার পছন্দ হলো।
ভয়ে ভয়ে ঢুকলাম ডিজিএম সাহেবের চেম্বারে। উনি ভীষণ ব্যস্ত। আমরাও ব্যস্ত। কিন্তু আমার ছুটিটাও জরুরী। ছুটির কথাটি বললাম। একদম নিজের শালা তাও নিশ্চিত করলাম। কিন্তু বারবার উনি একই যুক্তি দেখাতে লাগলেন—শালা যদি আপনার নিজেরই হবে তবে আপনার সুবিধা মত সময় বিয়ের ডেট করবে। জালাল সাহেব ,এখন আপনি কত ব্যস্ত। আমরাও ব্যস্ত।আমাদের এখানে বিদেশী টিম কাজ করছে। আমাদের উপর সারাদেশের অনলাইন বাস্তবায়নের দ্বায়িত্ব। এটা ছুটির সময় নয়।
স্যার তার টেবিলের কাজ কর্মের দিকে নজর দিলেন। মনে হলো এই মুহুর্তে স্যারের রুমে আমি অনাকাঙ্ক্ষিত । আর আমার ছুটির বিষয়টি তো শুরু থেকেই অনাকাঙ্ক্ষিত।
এজিএম সাহেবকে আমার ব্যর্থ আবেদনের বিষয়টি জানালাম। উনি পুনঃ আবেদনের সিদ্ধান্ত নিলেন। আমাকে সাথে নিয়ে ডিজিএম সাহেবের রুমে ঢুকলেন। বারবার বললেন-জালাল সাহেবের কাজ আমরা সবাই মিলে ভাগ করে করবো। উনাকে ছুটি দেন। কিন্তু ডি জি এম সাহেবের ঐ এক কথা এ সময় ছুটি হবে না। আর জালাল সাহেবের যদি আপন শালাই হয় তাহলে জালাল সাহেবের সুবিধা মতন সময়ে বিয়ে করবে। ছুটি আগের মতোই না মন্জুর হলো।
বাসায় এসে আমার স্ত্রীকে সব বললাম। সেও ব্যাংকার। সে বারবার বলতে লাগলো-তুমি সারা জীবন ব্রাঞ্চে কাজ করেছ। ভল্টের চাবি তোমার কাছে থাকত। তাই ছুটি পেতে কষ্ট হতো-এটা ঠিক আছে। কিন্তু হেড অফিসে ছুটির এত ক্রাইসিস নাই, যতটা তুমি বলছ। হেড অফিসে তো বেশ কয়েক বছর ধরে আছো। সব সময় ছুটি পাচ্ছো। তুমিই নিজেই এর আগে বলছ যে হেড অফিসে ছুটির কোন সমস্যা নাই। চাচাতো মামাতো নয় তোমার নিজের শালা। তার বিয়েতে তুমি যাবা না- তাই বলো। এত সব ধানাই -পানাই করে লাভ নাই। আমার ছেলে মেয়েরাও মায়ের কথায় সায় দিল। আমার মুখ দিয়ে কোনও কথা বের হলো না। তবে মনে মনে ঠিক করলাম কাল আরো একবার চেষ্টা করবো। এজিএম সাহেবকে ধরলাম। উনি আরো একবার ডিজিএম সাহেবের চেম্বারে গেলেন-কিন্তু রেজাল্ট আগের মতোই হলো।
মানুষের দাম্পত্য জীবনে যে কতো গ্যাপ থাকে-এ ঘটনাটা তার একটা উদাহরন হতে পারে। আমি ইচ্ছাকৃত নয় বরং পরিস্থিতির কারনে ছুটি নিতে পারি নাই। এটা শ্বশুরপক্ষীয়রা কেউ বোধহয় মনে প্রানে কোনও দিন বিশ্বাস করতে পারে নাই প্রসঙ্গ উঠলেই এ খোঁটা আমাকে শুনতে হয়েছে। এ লেখা প্রকাশের পর হয়তো রেহাই মিললেও মিলতে পারে। বিশ্বাসের অযোগ্য ঘটনাও যে মাঝে মধ্যে ঘটতে পারে-তা সকলেরই বিশ্বাস করা উচিৎ।
এ ডিভিশনে ছুটি নিয়ে সংঘটিত আর একটি ঘটনা এখন বর্ণনা করতে চাই ।
চলবে-
বাংলাদেশ সময়: ১১:০১:০৫ ●
২৯৮ বার পঠিত
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)