বঙ্গ-নিউজ: ভুল চিকিৎসায় নবজাতক ও তার মা মাহবুবা রহমান আঁখির মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করলেন অভিযুক্ত ডা. সংযুক্তা সাহা। এই চিকিৎসক বলেন, তারা এমন অনিয়ম করবে, আমি ভাবতেও পারিনি। আমার নাম ব্যবহার করে তারা এসব অনিয়ম করেছে। পরীবাগে নিজের বাসায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ডা. সংযুক্তা সাহা।
ডা. সংযুক্তা সাহা বলেন, মাহবুবা রহমান আঁখিকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তখন আমি হাসপাতালে ছিলাম না। আমাকে না জানিয়েই ওই রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে।
ডা. সংযুক্তা সাহা বলেন, এখন নিজেদের দোষ আড়াল করার জন্য একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে। তারা আসল ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাইছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে।
তিনি আরও বলেন, আঁখি আমার নিয়মিত রোগী ছিলেন না। নিয়মিত রোগী হতে হলে একজন রোগী গর্ভাবস্থার শুরুতে প্রতি মাসে একবার এবং শেষের দিকে দুই সপ্তাহে একবার দেখাতে হয়। আঁখি আমার নিয়মিত রোগী ছিলেন না। তিনি কুমিল্লায় ডাক্তার দেখিয়েছেন। মার্চ মাসে তিনি দুই বার সেন্ট্রাল হাসপাতালে এসে আমাকে দেখান।
ডা. সংযুক্তা সাহা আরও বলেন, আঁখি যখন হাসপাতালে ভর্তি হয়, তখন আমি দেশে ছিলাম না। প্রমাণ স্বরূপ আমার কাছে টিকিট ও বোর্ডিং পাস আছে। তাছাড়া আমি ভিডিও কলে এসেও অপারেশন মনিটর করিনি। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে সব মিথ্যা।
সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে ডা. সংযুক্তা সাহা বলেন, যে মানুষটা দেশেই নাই, তার নাম ব্যবহার করে কেন রোগী ভর্তি করলেন? এখানে কার স্বার্থ? আমি যদি অপারেশন না করি, যদি নাই থাকি, তাহলে রোগী ভর্তি করালেন কোন আক্কেলে? তারা এমন অনিয়ম করবে, আমি ভাবতেও পারিনি।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, গত ১০ জুন আঁখিকে ভর্তির সময় আমার সঙ্গে নাকি যোগাযোগ করা হয়েছিল। আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, একটা প্রমাণ হলেও হাজির করুন। যদি আপনাদের কথা সত্য হয়ে থাকে, কল রেকর্ড হাজির করুন।
ডা. সংযুক্তা সাহা বলেন, আমিও একজন মা। কোনো অবহেলাজনিত মৃত্যুই কাম্য নয়। আমি আঁখি এবং তার সন্তানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি।
এর আগে সোমবার নবজাতক ও মা মাহবুবা রহমান আঁখির মৃত্যুর ঘটনায় দায় স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করে রাজধানীর গ্রীন রোড অবস্থিত সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, আঁখির চিকিৎসায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের অবশ্যই গাফিলতি ছিল। প্রথম গাফিলতি ছিল ডা. সংযুক্তা সাহার। তারপর ওটিতে অস্ত্রোপচারে যারা ছিলেন তারা। কারণ তারা সিনিয়র ডাক্তারদের ডাকেননি।
উল্লেখ্য, গত ৯ জুন প্রসব বেদনা ওঠার পর আঁখিকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এনে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের পর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরদিন তার প্রসূত নবজাতকের মৃত্যু হয়। সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় আঁখি মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন বলে অভিযোগ করেন তার স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তার নবজাতক সন্তান মারা গেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
গত ১৪ জুন ইয়াকুব আলী সুমন সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসকসহ ছয়জনের নামোল্লেখ ও ৫-৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগে মামলা করেন। এর জেরে ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনা নামে সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জানা গেছে, তিন মাস ধরে সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সংযুক্তা সাহার পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিচ্ছিলেন আঁখি। তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক এবং অস্ত্রোপচার ছাড়াই নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব সম্ভব বলে আশ্বস্ত করেছিলেন ডা. সাহা।