রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবনের ৪র্থ খন্ড,পর্ব-২৯৫:জালাল উদ্দীন মাহমুদ

Home Page » সাহিত্য » রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবনের ৪র্থ খন্ড,পর্ব-২৯৫:জালাল উদ্দীন মাহমুদ
বুধবার ● ২১ জুন ২০২৩


জালাল উদ্দীন মাহমুদ
তাহমিনাকে নিয়ে লজ্জাকর কাহিনি -২

সেদিন ৯.০০টা বাজতেই কেন জানিনা সপ্তপদী মার্কেট শাখা য়একসাথে অনেক কাস্টমারের ভিড় জমেছে। ম্যানেজার সাহেবেরও জরুরী টাকার প্রয়োজন। সবাই চেক দিয়ে রেখেছে। তাহমিনা তখনও আসে নাই। কেন যে দেরী করছে। অন্যদিকে তাহমিনা না থাকলে যে গোডাউন কিপার মাঝে মাঝে লেজারে চেক পোস্টিং দিত সেও গোডাউনে গেছে। কাকে দিয়ে যে তাহমিনার কাজ করাব, ভাবছি।
এমন সময় ম্যানেজার সাহেব আমার সামনে এসে হাজির। জিজ্ঞাসা করলেন , তাহমিনা আসে নাই? উনার কথা শেষ হতে না হতেই তাহমিনার ভাই একটা দরখাস্ত নিয়ে হাজির। ম্যানেজার সাহেব দরখাস্তটা হাতে নিলেন। পড়লেন। তারপর তাহমিনার ভাইকে বললেন, তাকে আমরা বহুবার নিষেধ করেছি- এভাবে যেন বাড়ি থেকে দরখাস্ত না পাঠায়। তা সত্ত্বেও পাঠিয়েছে। ওকে অফিসে আসতে বলেন। না হলে আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।
ম্যনেজার সাহেব দরখাস্তটা তার হাতে ফেরৎ দিলেন।
আমার দুর্বল প্রশাসনের জন্যই যে এরুপ ঘটনা ঘটেছে ম্যানেজার স্যার আগে থেকেই সে বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত ছিলেন। আজও সে বিষয়টি বারবার উল্লেখ করতে থাকলেন। আজ তিরস্কার চলছিল প্রকাশ্যে-তার চেম্বারে না। ম্যানেজার স্যারের নিজের চেকটাও এখনও পোস্টিং দেয়া হয় নাই। পরিস্থিতি জটিল। এমন সময় ত্রাতা হিসাবে আর্বিভূত হলেন স্বয়ং রফিক সাহেব। তিনি সবগুলো চেক পোস্টিং দেবার জন্য নিজে লেজারে গেলেন। ক্যাশিয়ার উঠে এসে ম্যানেজার সাহেবের টাকা তার হাতে দিল। টাকা নিয়ে উনি তার চেম্বারের দিকে দিলেন। যাবার আগে বলে গেলেন , তাহমিনা আসলে তাকে যেন শোকজ করা হয়। আমি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের পরিবর্তে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের পক্ষপাতী ছিলাম। সারা জীবনই আমি তা করেছি। একটি সংশোধনমূলক ব্যবস্থা কারো মধ্যে বিদ্যমান অ-সঙ্গতিগুলি দুর করার এবং তার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করার অন্যতম কার্যকরী উপায় ।
ভাবলাম আজ যদি তাহমিনা আসে –তবে তাকে কঠিনভাবে আবারো মৌখিক সতর্ক করব। শাখার সব কাজই ঠিকভাবে চলছে। শুধু তাহমিনার বিলম্বে আসার জন্য ম্যানেজারের নিকট আমাকে বারবার হেনস্তা হতে হচ্ছে।
সে অবশ্য কাজে কর্মে দক্ষ। শুধু লেটে আসে। তবে আগে তেমন লেটে আসত না। বাড়ি নির্মানের কাজ ধরার পর থেকে লেট করে আসছে। ব্যাংক বাড়ি নির্মানের ঋণ দিবে অথচ কাজ করার সুযোগ দিবে না – এটাই-বা কেমন? দৈনন্দিন কাজ করছিলাম – আর এসব ভাবছিলাম। আমার ভাবনার জাল ছিন্ন হলো। তাহমিনা সামনে দাঁড়ায়ে সালাম দিল। এলোমেলো বেশ। গলায় বহু পুরানো একটি মাফলার প্যাঁচানো। তার জন্যে আমি অনেক অপমানিত হয়েছি। আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম, চাকরি করলে ঠিকমতো করেন, নয়তো চাকরি ছেড়ে দেন। বাসার কাজের দোহাই দিয়ে ডেইলি লেট করে আসবেন, বাসা থেকে ছুটির দরখাস্ত–
-স্যার, আজ বাড়ির কাজের জন্য ছুটির দরখাস্ত পাঠাইনি স্যার। কাল রাত থেকে আমার গলায় ব্যাথা। জ্বর।গলা ফুলে গেছে। মাফলার পেচাঁয়ে আছি। বরফের চেয়েও ঠান্ডা গলায় নির্বিকারভাবে সে বলে উঠল।
-মাফলার খোলেন তো দেখি- কোথায় গলা ফুলে গেছে? এটা আপনার একটা অজুহাত।
একদিকে ম্যানেজার সাহেবের ঝাড়ি তার উপর আবার তাহমিনার নির্বিকার উত্তরে সেদিন আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েছিল।
আমি লজ্জা -শরমের মাথা খেয়ে চিৎকার করে মাফলার খোলার কথাটি বলেছিলাম।
আমার কথা শুনে তাহমিনা দু‘হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ডুকরে কেঁদে উঠল। সামনে বেশ কিছু কাস্টমার ছিল। সে সময় সপ্তপদী মার্কেট শাখায় লেডিজ কর্নার নামে শুধু মহিলা গ্রাহকদের জন্য আলাদা একটা কর্নার ছিল। লেডিজ কর্নারের ইনচার্জ জাহাঁনুরসহ বেশ কিছু লেডিজ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিল। তাহমিনা লেডিজ কর্নারের ইনচার্জ মহিলাকে জড়ায়ে ধরে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে থাকল। ইনচার্জ তাকে ধরেধরে তার চেম্বারে নিয়ে গেল। যাবার সময় ইনচার্জ আমার দিকে বারবার চোখ বড় করে তাকাতে লাগল। আশে পাশের সবাইকে কেন যেন হতভম্ব মনে হলো। কি আশ্চার্য! আমার এ সামান্য কথাতেই মনে হচ্ছে বিশাল একটা সিনক্রিয়েট হয়ে গেছে। কিন্তু বিকেলে যে এর চেয়ে বড় সিনক্রিয়েট হবে এটা সেদিন সবাই বুঝলেও আমি তখন বুঝতে পারি নাই । পরবর্তী পর্ব আগামীকাল

বাংলাদেশ সময়: ৮:৪৬:০৬ ● ৩৬৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ