ইনফ্লেশন বা মূদ্রাস্ফিতি নিয়ে একটু একাডেমিক দিক থেকে দেখি। অবশ্যই বাংলাদেশ আর এবারের বাজেটের অবস্থার সাথে আমাদের মতো আমজনতার উপরে কি রকম চাপ আসবে সেটা নিয়েই বলি।
প্রথমেই ভবিষ্যৎ বাণী করি। আমাদের ইনফ্লেশন সরকারি ভাবে ৯% বলা হলেও আমার হিসেবে বাস্তবে সেটা ২০% এর উপরে। আমার ভবিষ্যৎ বাণী হলো এই বছর এটা আরো বাড়বে, প্রায় ৩০-৩৫% হবে। যদি কিছু পদক্ষেপ ঠিক মতো নেওয়া হয় তাহলে হয়তো কিছুটা কম থাকতে পারে।
এখন দেখা যাক, কেনে ইনফ্লেশন বাড়বে বলে মনে করছি।
এবারের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭.২% আর ইনফ্লেশন রেট ৬%। আবার বাজেট ঘার্তি আছে ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকার মতো। এনবিআর কে টার্গেট দেওয়া হয়েছে প্রায় ৪৩০ হাজার কোটি টাকা আয় করে দেওয়ার।
এখন আমরা দেখি- সংখ্যাগুলোতে সমস্যা কোথায়?
জিডিপি হলো সহজ ভাবে - দেশে একবছরে মোট কত টাকার পণ্য ও সেবা উত্পাদিত হচ্ছে তার পরিমান। এখন বাজেটে আমরা বলছি গত বছরের চেয়ে আমরা ৭.৫% পণ্য বেশী উৎপাদন করবো। ভালো কথা।
পণ্য বা সেবা যাই উৎপাদন করতে চাই না কেনো- তার জন্য কাঁচামাল লাগবে। এখন আমাদের ডলার রিজার্ভ কম। এর মানে চাইলেই আমি বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে পারবো না। টাকা নাই। তো কাঁচামাল আমদানি না করতে পারলে আমার উৎপাদন বাড়ার কথা না। তাহলে জিডিপি বাড়ার কথা না।
এখন উৎপাদন না বাড়িয়ে কি জিডিপি বাড়ানো যায় ?
কথা হলো যায়। সেটার জন্য জিনিসের দাম বাড়ায় দিলেই হয়। ধরেন গতবছর একটা গার্মেন্টস একটা সার্ট বানিয়েছে। সেটার দাম ছিলো ১০০ টাকা। এবার একই সার্ট বানালো। দাম ১০৭.৫ টাকা। মানে নমিনাল জিডিপি বেড়ে গেলো ৭.৫%।
তো এই যে ৭.৫% জিডিপি বাড়লো - এটা কিন্তু আসলে ইনফ্লেশনকে ট্রিগার করলো।
এর পরে আসা যাক দেশের কামাই আর খরচের ব্যাপারে। যেহেতু বলেছে ডিফিসিট বাজেট , এর মানে একদম পরিষ্কার। আয় কম , ব্যায় বেশী। কত বেশী ব্যায় ? প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। আমার হিসেবে এটা আসলে আরো বেশী। কেনো একটু পরে বলছি। তো এই টাকা কৈ থেকে আসবে?
বেশ কিছু জায়গা আছে সরকারের। বিদেশী লোন, দেশী লোন, অনুদান আর এফডিআই।
বিদেশী লোন আমাদের জন্য এখন একটু ঝামেলার , কারণ আমাদের ব্যাংকিং রেটিং কমছে। তাই সরকার হয়তো দেশ থেকেই লোন নিবে। মানে ব্যাংক থেকে। আরো সহজ করে বললে, টাকা ছাপায়। মে পর্য়ন্ত প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে সরকার লোন নিয়েছে। এর ফল আমরা ইনফ্লেশন হাড়ে হাড্ডিতে টের পাচ্ছি। এর পরে যদি ১ লাখ কোটি টাকাও ছাপিয়ে লোন নেয় ইনফ্লেশন কোথায় যেতে পারে? আরো মজার ব্যাপার হলো- ১ লাখ কোটি টাকা আসলে ১ লাখ কোটি টাকা না । এটা আসলে প্রায় ২.৫ লাখ কোটি টাকা। যদি ভেলোসিটি অব মানি ২.৫ ও হয় ( এক বছরে একটা নোট কতবার হাত বদল হয়) ।
আবার আমার হিসেবে এনবিআর কে যে লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে তাও অর্জন করা প্রায় অসম্ভব। এই বছরে এনবিআর প্রায় ৩০০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। এর পরের বার প্রায় ৫০% বেশী রাজস্ব আদায় করতে পারার তেমন কোনো যৌক্তিক কারণ নাই। আমাদের উৎপাদন বাড়ার তেমন যুক্তি নাই, আমাদের রপ্তানী বাড়ারও তেমন কারণ নাই- আমাদের রপ্তানীর ৮৩% হলো গার্মেন্টস এবং সেটা হলে বেসিক গার্মেন্টস । পৃথিবীর সব দেশেই চাহিদা কমেছে। তাই অর্ডার কমবে। এর মানে আমাদের আয় কমবে। আবার আমদানি কমার কারণে আমদানী ট্যাক্সও কমবে। সব মিলায় ডেফিসিট বাজেটের পরিমান আরো বাড়বে।
এর অর্থ সহজ করে বললে জিনিস পত্রের দাম আরো বাড়বে।
এখন কথা হলো ইনফ্লেশন কি কমানো যাবে? উত্তর হলো যাবে। তবে রাতারাতি কমবে না।
কিছু কাজ করা দরকার কমাবার জন্য। প্রথমেই বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়া। এটার জন্য ইন্টারেস্ট রেট বাড়াতে হবে।
এর পরে ব্যায় কমাতে হবে। বিশেষ করে অনউৎপাদনশিল ক্ষাতে।
রপ্তানীর জন্য ভূর্তুকি রাখতে হবে।
উৎপাদন ব্যায় কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে ( এটা কি ভাবে করতে হয় - এটা সবাই জানে। কিন্তু বাংলাদেশ এটা করবে বা করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি না)।
টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে। ( আমি দূর্নীতি বন্ধ করতে বলি নি। বলেছি টাকা পাচার বন্ধ করতে। দূর্নীতি করেও চাকা যদি বাহিরে পাচার না হয়ে যায়, আমাদের বাজেট ডিফিসিট কমবে)। সহজ করে বললে চুরি করলেও চুরির মাল দেশে রাখলেই হবে।
এখন কথ হলো সহজ- আমরা আম জনতা সামনে বেশ কিছু ঝামেলাতে পরতে যাচ্ছি। জিনিসের দাম বাড়বে, আয় বাড়বে না সেভাবে।কষ্ট বাড়বে । দারিদ্র বাড়বে। সবার বাড়বে না। বেশীর ভাগ আমজনতার বাড়বে।
যদি নির্বাচনে সরকার বদল হয়- তাহলে কি ইনফ্লেশন কমবে? আমার মতামত হলো না। কমবে না ইনফ্লেশন ।তখন এটা বেড়ে ৫০% হতে পারে। এমনকি ১০০% ও। এর মানে আজকের ১০০ টাকা আসলে সেদিন কাগজ হয়ে যাবে।আমজনতার জন্য সমবেদনা।
রুবাইয়াত সাইমুম চৌধুরী (সহকারী অধ্যাপক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি)