রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন: পর্ব ২৮৯ -জালাল উদ্দীন মাহমুদ

Home Page » সাহিত্য » রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন: পর্ব ২৮৯ -জালাল উদ্দীন মাহমুদ
শুক্রবার ● ৯ জুন ২০২৩


জালাল উদ্দীন মাহমুদ

– ছুটি নিয়ে ছোটাছুটি-১
অন্যের কথা কী বলব , ব্যাংকে চাকরির প্রথম পাঁচ বছর আমি ছুটি নিতে পারিনি। মনে পড়ছে সপ্তপদী মার্কেট শাখা য় বদলি হবার আগ দিয়ে ১৯৮৮ সালে ডেমাজানী শাখার ম্যানেজার থাকাকালীন বিয়ে উপলক্ষে ছুটি চাইতে গিয়েছিলাম বগুড়ার তৎকালীন জোনাল হেডের কাছে। উনি বললেন -আপনি লোকাল পার্সন,বিয়ের জন্য ছুটি লাগবে কেন? অফিস শেষ করে হুট করে বিয়ে করে ফেলবেন। ব্যস হয়ে গেল।
স্যার এটা কি বললেন? হুট করে বিয়ে -এভাবে? যে বিয়ে নিয়ে এতদিন ভেবেছি- আমার হাতে যে মেয়ের ছবি দিয়ে বলা হয়েছে -এর সাথেই আমার বিয়ে হতে যাচ্ছে। যে ছবি নিয়ে তখনকার দিনের ক্যাসেট প্লেয়ারে অফিসে যাবার আগে প্রত্যহ গান শুনতাম,“ চাঁদ দেখতে গিয়ে আমি তোমায় দেকে ফেলেছি”। সারা রাত জেগে জেগে অরুন্ধুতি সাথি, সপ্তর্ষীর খেলা দেখে যে চাঁদের দিকে তাকিয়ে তার মুখ যে দেখতাম -সে বিষয়টাও অস্বীকার করছি না।বিবাহের পূর্বে শ্রবণ ও দর্শনের দ্বারা নায়ক নায়িকার অন্তরে যে প্রণয়ের সঞ্চার হয় তাকে যদি প্রথম অনুরাগ বা পূর্বরাগ বলে তবে সেটাও আমার হয়েছিল।
যাকে নিয়ে এত ভাবলাম- প্রথম অনুরাগ বা পূর্বরাগ হলো তার সাথে জীবন শুরু করার জন্য ছুটি মিলছে না। অধৈর্য হয়ে পড়লাম। তর্কে জড়িয়ে পড়া কখনই আমার স্বভাব ছিল না। কিন্তু সেদিন তর্কে জড়িয়ে পড়া অনিবার্য হয়ে পড়ল। জোনাল হেড় স্যারকে বললাম, স্যার আমি চাকরিতে যোগদানের পর থেকে আজ পর্যন্ত অর্থাৎ বিগত ৫বছরে কোনও ছুটি ভোগ করিনি। আর এখন নিজের বিয়ে উপলক্ষ্যেও ছুটি পাবনা, স্যার ?
স্যার বললেন, আমিও নিজের বিয়েতে ছুটি পাইনি, তাতে আমার বিয়ে ঠেকেনি। আপনাকেও ছুটি দিব না, এতে আপনার বিয়েও ঠেকবে না - এটাই আমার শেষ কথা। আমিও বিয়ের ছুটি পাইনি আপনাকেও আমি বিয়ের ছুটি দিব না।
সে যুগে প্রায় প্রত্যেক জোনাল হেড বা ম্যানেজারের এরকম ছুটি না পাওয়ার গল্প ছিল। আমিও ছুটি পাইনি তোমাকেও দিব না - অনেকেই এরুপ মনোভাব পোষণ করতেন। এখন যুগ পাল্টে গেছে - বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হচ্ছে। ছুটি যে ব্যাংকারদের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় এটা পরবর্তীতে নন-ব্যাংকারগণও উপলদ্ধি করতে পেরেছিলেন। তারপরেও এ ম্যান্ডেটরী লিভ বা রিক্রিয়েশন লিভ নিয়ে অনেক ঝামেলা হয় । আমি নিজেও রিক্রিয়েশন লিভ নিয়েছি কিন্তু তা নাম মাত্র- কারন ছুটিতে থেকেও রীতিমতো অফিস করতে হয়েছে।
বিশ্রাম কাজের অঙ্গ এক সাথে গাঁথা, নয়নের অংশ যেমন নয়নের পাতা ,-এ ভাবসম্প্রসারণ লিখে অনেক নম্বর পেলেও বিশ্রাম এ জীবনে আার পাওয়া হয়ে উঠেনি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছুটি গল্পের ফটিকের কথা মনে আছে নিশ্চয় । ব্যাংকের শাখায় শাখায় অনেক ফটিক ছিল এখনও আছে যাদের ভাগ্যে জগৎ থেকে চুড়ান্ত অবসরের আগে ছুটি মেলে না। কর্মকালেও নয় , অবসরের পরও নয়।
পরবর্তী পর্ব আগামীকাল

বাংলাদেশ সময়: ৮:৪৫:১৮ ● ৩০৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ