তাহমিনার গৃহ নির্মাণ
********************
আমার বাড়ি নির্মাণের পরপরই মিস তাহমিনা নামের একজন মহিলা কমকর্তা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মানের কাজ শুরু করে এবং এ অজুহাতে সে প্রায়ই বিলম্বে অফিসে আসতে থাকে। সে তখন ছিল লেজার কিপার (ইনপুটার)। গ্রাহকের চেক ও জমা ভাউচার বড়বড় লেজার বইয়ে পোস্টিং দিত। সে যেদিন দেরিতে আসত সেদিন গ্রাহক সামলাতে আমাকে হিমসিম খেতে হতো। সপ্তপদী মার্কেট অনেক বড় শাখা । আমার টেবিল থেকে ম্যানেজারের চেম্বার খানিকটা দুরে। তার পক্ষে সবকিছু দেখা সম্ভব নয়। এ সব আমাকেই সামলাতে হতো।
বিলম্বে না আসার জন্য আমি অনেকভাবে তাকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম কিন্তু ব্যর্থ হলাম।
তাহমিনা যে বাড়ি নির্মানের অজুহাতে প্রত্যহ অফিসে লেটে আসছে এক সময় এ বিষয়টি ম্যানেজার সাহেবের নলেজে গেল। তিনি একদিন আমাকে ডেকে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলেন। আমি জানালাম ঘটনা সত্য। ম্যানেজার সাহেব আমাকে অনেক ভৎর্সনা করলেন। আমি যে প্রশাসনে অনেক দুর্বল সে কথা বারবার বললেন। সবশেষে বললেন,তাহমিনা যেন আসতে আর লেট না করে । লেট করলে আমি যেন ব্যবস্থা নেই। ম্যানেজারের চেম্বার থেকে ফিরে এসে আমি তাহমিনাকে খুব জোরের সাথে জানালাম, সে যেন আর লেটে না আসে। আসলে যে তার নামে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে তাও জানালাম। এর রেজাল্টও ভালো হলো। তাহমিনা প্রত্যহ উদভ্রান্ত বেশে হলেও সঠিক সময়ে অফিসে হাজিরা দিতে শুরু করল। তখন সকাল ৯ টায় অফিস শুরু হতো। তাহমিনা ৯টার মধ্যেই অফিসে আসতে লাগল কিন্তু ঐ যে বললাম উদভ্রান্ত বেশ- সে ভাবেই। মাথায় চিরুনি দিত না ,পায়ে স্যান্ডেলে কাদা-বালি লেগে থাকত, গায়ে ড্রেস থাকত ইনফর্মাল। লেবার মিস্ত্রি সামলিয়ে মালামালের যোগান কনফার্ম করেই তাকে আসতে হতো। তখন আবার সাপ্তাহিক ছুটি ছিল শুধু একদিন-শুক্রবার। বেচারীর উপর অনেক চাপ যে যাচ্ছে তা বোঝাই যেত। কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। আজ মনে হচ্ছে তার তিন কুলে মানে পিতৃকুল, মাতৃকুল ও শ্বশুরকুলে বোধহয় সাহায্যে করার মত কেউ ছিল না। একটা ভুল হয়ে গেল । সে ছিল তখন অবিবাহিতা। তাই তার শ্বশুরকুল বলে কিছু থাকার কথা না। সম্ভবত শরৎচন্দ্রের কোন এক উপন্যাসে পড়েছিলাম,“ মেয়েটির তিন কুলে কেউ নাই”। তাই কুল নিয়ে কথাটা তুললাম।
এক সময় বাংলাদেশে যখন সংক্রামক রোগ বিশেষ করে কলেরা-বসন্তের প্রাদুর্ভাব ঘটতো তখন গাঁ কে গাঁ উজাড় হয়ে যেত। অনেকস্থানে মাঠে লাঙ্গল দিয়ে চাষ করার মত কেউ থাকতো না । অনেকের আত্মীয় স্বজন বলে এ ধরাধামে কেউ থাকত না।
এখন তো আর এরুপ পরিস্থিতি নাই। তাহলে মিস তাহমিনা কেন তার কোন আত্মীয় স্বজনকে বাড়ি দেখার কাজে নিয়োজিত করতে পারছে না। এ প্রশ্নটা আমার মনে দোলা দিচ্ছিল। কিন্তু তাকে কখনো জিজ্ঞাসা করা হয় নাই।
যা হোক , আমাদের চাপে তাহমিনা লেট করে অফিসে আসা ছেড়ে দিল কিন্তু অবিন্যস্ত বেশে অফিসে আসা শুরু করল। তা তার বেশ বিন্যস্ত হলেই আমার কী আর অবিন্যস্ত হলেই বা আমার কী ? ম্যানেজারের নিকট কৈফিয়ত প্রদানের হাত থেকে বেচেঁছি এটাই যথেষ্ট ।
তবে একটা কথা বলে রাখি তাহমিনার লেট করে অফিসে আসা নিয়ে আমার সাথে এক সময় একটা লজ্জাকর ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনাটির মধ্যে প্রচ্ছন্ন অশ্লীলতা ছিল । এখানে অশ্লীল শব্দটা অভদ্র অর্থে নিবেন নাকি কুরুচিপূর্ণ অর্থে নিবেন নাকি আর এক ধাপ এগিয়ে কামলালসাপূর্ণ অর্থে নিবেন- ঘটনা শোনার পর সেটা আপনাদের মানে পাঠক-পাঠিকাদের বিবেচনা করতে হবে। সে ঘটনা এখনই বলতে চাচ্ছি না। একসময় অবশ্যই বলব।
আবার আগের কথাই ফিরে আসি । তাহমিনা সময় মত অফিসে আসা করা শুরু করেছে। কিন্তু ১৫/২০ দিন পর প্রায়ই সে ছুটির জন্য বায়না ধরা শুরু করল। ম্যানেজার সাহেবের সাফ জবাব-বাড়ি করার জন্য লোন দেয়া হয়েছে, আবার ছুটিও দিতে হবে এমন কোন কথা নাই।
সে যুগের ম্যানেজাররা সব দিতে রাজী ছিল, কিন্তু ছুটি দিতে নয়। পিওন-দারোয়ানরা আড়ালে আবড়ালে বলাবলি করত-ছুটি কি তার বাপের ঘরের সম্পত্তি-যে দিতে চায় না ? ম্যানেজার স্যারেরা কেন ছুটি দিতে পারে না –সে কারন অনুসন্ধানে অবশ্য কেউ রাজি ছিল না।
পরবর্তী পর্ব আগামীকাল রাত সাড়ে নয়টায় ।।।