জাবিতে সামিউল ইসলামের অনশনের ১০০ ঘন্টা পার -প্রগতিশীল এবং বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংহতি প্রকাশ

Home Page » শিক্ষাঙ্গন » জাবিতে সামিউল ইসলামের অনশনের ১০০ ঘন্টা পার -প্রগতিশীল এবং বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংহতি প্রকাশ
সোমবার ● ৫ জুন ২০২৩


সামিউল ইসলামের অনশনের ১০০ ঘন্টা পার

রুবিনা জাহান তিথী, জাবি প্রতিনিধি।
মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে হল থেকে অপসারণসহ তিন দফা দাবিতে ১০০ ঘন্টা ধরে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়ের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল এবং বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা। রবিবার (৪ জুন) বিকেলে মীর মশাররফ হোসেন হলের সম্মুখে অনশনরত সামিউলকে দেখতে যান তারা।
এসময় কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক বলেন, তার দাবিটি যৌক্তিক এবং তার দাবিকে আমি সমর্থন করি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সিট সংকট থাকার কারণে যে গণরুম ব্যবস্থা এবং প্রাক্তন ছাত্রদের যে হলে অবস্থান এটার একটা সমন্বয় না করা পর্যন্ত আজকে সে অনশন করছে, কালকে আরো অনেকে অনশন করবে।
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম সেলিম বলেন, প্রত্যয়ের যে তিনটি দাবি এই দাবি আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেক দিনের দাবি। এই এমএইচ হল থেকে আমার শিক্ষকতা জীবনের শুরু, তখন এ ধরনের গণরুম, র‌্যাগিং কালচার এগুলো কোনোকিছুই ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দ্রুততর সময়ের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ করছি।
দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, আমি প্রত্যয়ের দাবিগুলোর সাথে সংহতি জানাচ্ছি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি তীব্র ক্ষোভ জানাচ্ছি। কারণ আজকে প্রত্যয় যে জায়গায় এসেছে, তার জীবনকে বাজি রেখেছে, তার আগে সে অনেক ধাপ পার হয়ে এসেছে। হলে যে নির্যাতন হয় তার বিরুদ্ধে অনেক আন্দোলন হয়েছে। প্রশাসন তাও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সরকারি ছাত্র সংগঠনের লাঠিয়াল তৈরি করার জন্য এই গণরুম টিকিয়ে রাখা হচ্ছে। এজন্য তীব্র ক্ষোভ জানাচ্ছি প্রশাসনের প্রতি। আমি মনে করি যে এই দাবিগুলো যৌক্তিক এবং প্রত্যয়ের দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ওর এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত হচ্ছি।
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নূরুল ইসলাম জানান, প্রশাসন তার জন্য কি ব্যবস্থা নিয়েছে? আমরা এইমাত্র জানতে পারলাম আমাদের একজন সম্মানিত শিক্ষক তার বসার ব্যবস্থা করেছেন। দিনরাত এভাবে গরমের মধ্যে মশার কামড় খেয়ে যাচ্ছে সে। প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি তার নিরাপত্তার জন্য, চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য। অন্যথায় যদি কোনো শারীরিক সমস্যা হয় তার দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ প্রশাসনের ওপর বর্তাবে।
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, প্রত্যয়ের যে দাবি গণরুমের বিলুপ্তি সেটি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মাত্র একটা সদিচ্ছা দরকার। একদিনের মধ্যে তালিকা করা সম্ভব যেখানে জানা যাবে কোন কোন শিক্ষার্থী অবৈধ। তারা না পারলে আমাদেরকে দিয়ে একটি কমিটি তৈরি করুক। দুইদিনের মধ্যে সমস্ত হলের তালিকা তৈরি করে দেব কারা কারা অবৈধ আর কারা কারা কবে পাশ করেছে। হলের শিক্ষার্থীরা পর্যন্ত জানে কোন শিক্ষার্থী কবে পাশ করেছে। হলের অফিসে সকল ডকুমেন্টস আছে। কিন্তু তারা চায় না যারা হলের গণরুমে থাকে তাদের নীপিড়ন করে, শাস্তি দিয়ে তাদের দল ভারী করে তারা। তাদেরকে পরবর্তীতে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনগুলো ক্যাডার তৈরির কাজ করে। ফলে গণরুমের বিলুপ্তি হলে তাদের রাজনীতি এখানে টিকবে না। ফলে তারা একাজ কতটুকু করবেন তা নিয়ে আমার যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে। প্রত্যয়ের শরীর খুব খারাপ। আমি প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি কালকের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান চাই। নয়তো আপনারা কাল দেখবেন আরো শিক্ষার্থী অনশনে বসেছে এরপর শিক্ষকরা অনশনে বসবে।
এসময় ফার্মেসী বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, গণিত বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামসহ বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর সেখানে আসেন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শ কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ। এসময় তিনি সামিউল ইসলাম প্রত্যয়কে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিলে প্রত্যয় অস্বীকার করেন এবং বলেন, “আমার মৃত্যুর জন্য আপনারা দায়ী থাকবেন”।
এসময় অধ্যাপক ড. মো. লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ বলেন, আমি তার কথা শুনতে আসসিলাম। এখন বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের একটা মিটিং আছে। আমি সেখানে গিয়ে প্রত্যয়ের বক্তব্য উপস্থাপন করবো।
উল্লেখ্য, গণরুম বিলুপ্তি, মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্রদের অবিলম্বে হল ত্যাগ ও বৈধ শিক্ষার্থীদের হলে সিট নিশ্চিত করার দাবিতে গত বুধবার (৩১ মে) সন্ধ্যা থেকে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন সামিউল ইসলাম প্রত্যয় নামে উক্ত শিক্ষার্থী। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সামিউল ইসলামের অনশনের প্রায় ১০০ ঘন্টা পার হয়েছে। এর আগেও একই দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন এবং দাবি আদায়ে প্রভোস্ট, প্রক্টর ও উপাচার্য বরাবর কয়েক দফায় লিখিত আবেদন করে আসছিলেন বলেও জানান প্রত্যয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার নানা আশ্বাস দিলেও দাবি আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি না দেখা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এদিকে আজও দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেয়ায় গ্লুকোজ স্যালাইন নিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন সামিউল ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ২:৫৭:৫৬ ● ৪৪৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ