শিবপুরের কৃতিসন্তান শাহনওয়াজ দিলরুবা খান গণপ্রজান্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন বিভাগের এক উজ্জল নক্ষত্র এবং সমাজ ও মানব কল্যাণের এক অনুপ্রেরণার ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি তিনি শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
শিবপুর উপজেলার দত্তেরগাঁও গ্রামের মৌলভী ফজলুল করিম খানের মেয়ে শাহনওয়াজ দিলরুবা খান দত্তের গাঁও উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাশ করার পরপরই পারিবারিক চাপে সাংসারিক জীবনে প্রবেশ করতে হয়। এরপর ইডেন মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাশ করে নানা প্রতিকূলতার সাথে সংগ্রাম করে দুটো সন্তান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ এমএসএস পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএড, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। সংগ্রামী এই নারী ১৭ তম বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন। মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পদে যেমন সহকারী কমিশনার ভূমি (ভৈরব ও কুলিয়ারচর), প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট (কিশোরগঞ্জ), তিন উপজেলায় ইউএনও (কুলিয়ারচর, কিশোরগঞ্জ সদর ও কালিহাতি, টাঙ্গাইল), গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়াও তিনি আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে যুগ্মসচিব, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য হিসাবে কাজ করেছেন।
তিনি অফিসিয়াল দায়িত্বের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কাজে নিজকে নিয়োজিত রেখেছেন। নারী শিক্ষা প্রসার, নারীর উন্নয়নে, নারীদের আত্মকর্মসংস্থান ও আত্মশক্তি বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ ও তৃণমূল পর্যায়ে বাল্যবিবাহ, যৌতুক, ইভটিজিং, নারী নির্যা প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি নিজে প্রতিষ্ঠা করেছেন ফিরোজা আরিফ ফাউন্ডেশন, ফিরোজা আরিফ মহিলা উন্নয়ন সংস্থা, বিজনেস ফোরাম ফর পুওর উইমেন এন্টারপ্রেনার্স, গাজীপুর। এসব সংগঠন সারা দেশেব্যাপী সুনামের সহিত কাজ করে যাচ্ছে। সহায় সম্বলহীন পরিবার থেকে নির্বাসিত মায়েদের জন্য আপন ভূবন নামে একটি বৃদ্ধাশ্রম এর উপদেষ্টা হিসেবে তিনি কাজ করছেন। ইভটিজিং থেকে মেয়েদের রক্ষার্থে ও আত্মশক্তি বৃদ্ধিতে তিনি মেয়েদের কারাতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে কারাতে ‘অগ্নিমাতা খেতাব’ পেয়েছেন। ঢাকা গাজীপুরে প্রায় কয়েক হাজার মেয়েকে তিনি এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। পাশাপাশি তিনি দরিদ্র অসহায়, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
এছাড়া তিনি উত্তরা অফিসার্স ক্লাবের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা ইউনির্ভাসিটি ইকোনমিক এলামনাই এসোসিয়েশন এর আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ এ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সদস্য, নরসিংদী পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের উপদেষ্টা, নরসিংদী ফোরাম ঢাকা এর সদস্য, উত্তরা ১০নং সেক্টর ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন এর নির্বাহী সদস্য ছিলেন, উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরীর উপদেষ্টা, ঢাকা অফির্সাস ক্লাব এর সদস্য এবং লাইব্রেরী উপকমিটির সদস্য, বিসিএস উইম্যান নেটওয়ার্ক এর সদস্য, ১৭ তম বিসিএস ফেরামের সদস্য। তিনি বিভিন্ন কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন নানা পুরস্কার। যেমন- শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কার, এছাড়াও তিনি তার সামাজিক কার্যক্রমের জন্য এ টু আই ও বিবি এফ কর্তৃক ২০১৫ সনে নারী দিবসে ‘শ্রেষ্ঠ রিজিওনাল লিডার মানবাধিকার সংগঠন কর্তৃক বেস্ট হিউম্যানিটি এ্যাওয়ার্ড-২০২১, দানবীর হাজী মুহাম্মদ মহসীন সম্মাননা-২০২১, “Women Empowerment Award-2022′ পেয়েছেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জননী তিনি । ছেলে ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজ উদ্দিন রহমতউল্লাহ, ইলেকট্রিক এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার, অস্ট্রেলিয়া সিডনিতে কর্মরত আছে এবং মেয়ে ডাক্তার জান্নাতুল মোবাশ্বেরীন দিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এমডি করছে। দুই সন্তানকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করায় ‘রত্নাগর্ভা মা’ হিসেবেও তিনি স্বীকৃতি অর্জন করেছেন।
মানব সেবায় অনন্য বহুগুণে গুনান্বিত অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী, জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ প্রতিযোগীতায় শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কার, কারাতে অগ্নিমাতা ও আয়রন লেডি খেতাব অর্জনকরেছেন। তাঁর এই সংগ্রামী, সততার মানবকল্যানী-কর্মময় জীবন নতুন প্রজন্মসহ আপামর মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবে।