রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন: লোন মিললেও ছুটি মিলল না–২:-জালাল উদ্দীন মাহমুদ

Home Page » সাহিত্য » রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন: লোন মিললেও ছুটি মিলল না–২:-জালাল উদ্দীন মাহমুদ
বৃহস্পতিবার ● ১ জুন ২০২৩


জালাল উদ্দীন মাহমুদ
অচিরেই বাড়ি নির্মানের কাজ শুরু হয়ে গেল। ম্যানেজার স্যারের কাছে কয়েকদিনের ছুটি চাইলাম। তিনি বললেন-বাড়ির কাজ করবে মিস্ত্রি , সেখানে তোমার কাজ কি? সিমেন্ট-রড-ইট কেনা লাগলে অফিস শেষে কিনবে। প্রয়োজনে আমিও সাথে থাকব। যতবারই ছুটি চাই-উনার একই কমন জবাব।
কি আর করা বাড়ির কাজ দেখভালের জন্য গ্রামের বাড়ি থেকে একজন লোককে এনে রাখলাম ।একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের নিকট থেকে কোন কোন বিষয় চেক করতে হবে তার লিষ্ট নিলাম।
লিষ্ট তো নিলাম। কিন্তু লিষ্ট অনুসারে কাজ হচ্ছে কিনা তা কে চেক করবে? ম্যানেজার তো ছুটিই দিতে চায় না। আবার স্ত্রীও চাকরিজীবী । পড়লাম মহাফাঁপরে। রফিক সাহেবের শরণাপন্ন হলাম। রফিক সাহেবকে সব খুলে বললাম। সে বলল-কাল দুপুরে লাঞ্চের সময় আমার নির্মাণাধীনবাসা সে দেখতে যাবে- হেড মিস্ত্রি যেন তখন থাকে। রিকশায় ১০ মিনিটের পথ। যেয়ে দেখি হেড মিস্ত্রি আমাদের অপেক্ষায় বসে আছে। রফিক সাহেব
আমাকে বলল, আমি তো বাড়ি বানানো সম্পর্কে কিছু জানি না। তবে কিছু টোটকা চিকিৎসা দিব। কাজে লাগবে কিনা জানি না।
-টোটকা চিকিৎসা?
-ঐ হোমিওপ্যাথি আর কি । এ চিকিৎসা, কাজে লাগবে কিনা জানিনা। আপনি কিছু বলবেন না,হেড মিস্ত্রিকে যা বলার আমিই বলছি। হেড মিস্ত্রির নাম যেন কি?
-আবু বকর।
রফিক সাহেব হাঁক ছাড়লেন,আবু বকর কোন হে? এ ধারমে জলদি অ্যাও। উত্তেজিত হলে রফিক সাহেব ভাঙা ভাঙা ভুলভাল হিন্দী বা উর্দু বলত। বাল্যকালে প্রাথমিক স্কুলে সে নাকি উর্দু ভাষা পড়েছিল। পাকিস্তানী আমলে পড়তে হতো।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকার হেড মিস্ত্রি আবু বকর ডাকের ধরন দেখে কাঁপতে কাঁপতে সামনে এসে দাঁড়াল। রফিক সাহেব বললেন –শোনেন হেড মিস্ত্রি আবু বকর, আপনি সময় পেলেই অফিসে আমার সাথে দেখা করবেন। হেড মিস্ত্রি আমতা আমতা করছে দেখে আমি বললাম ইনি বড় স্যার। যা বলছে শুনবেন।
মিস্ত্রি-আবু বকর,? রফিক সাহেব নিশ্চিত হতে চাইলেন।
মিস্ত্রি জবাব দিলেন
-কহেন ষাড় ।
-হেড মিস্ত্রি?
-কহেন ষাঁড়।
(রফিক সাহেব ও আমি দুজনই জানতাম আবু বকর মিস্ত্রির বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের লোকজন ‘স’ উচ্চারণ করতে পারে না। তারা স্যারকে ষাঁড় বলে থাকে। )

-ঐ কালো ছোকড়াঁ লেবারটার নাম কি?
-কালাম ষাঁড় ।
-ওকে যেন আমি এরপর এ সাইটে আর না দেখি। ও কাজে ভুল করেছে।
-কি ভুল করালছে ?
-সেটা আপনি ওর কাছ থেকেই শোনেন। তবে ওকেও যেন আর না দেখি। এখনি বিদায় করে আপনার অন্য সাইটে তাকে দেন।
-ঠিক আছে ষাঁড়। হামি এ দুজন্যাকে উফশহরের (উপ শহরের) সাইডে প্যাঠ্ঠিয়ে দিব।
হেড মিস্ত্রি তখন কালাম লেবারকে বিদায় করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আর রফিক সাহেব আকর্ণ বিস্তৃত হাসি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,প্রথম রাতেই বিড়াল মেরে দিলুম আর কি।
জানতে চাইলাম, ঐ লেবারের কাজে কি ভুল ছিল?
-তাতো জানিনা।
-জানেন না মানে? আপনিই তো বললেন,ও কাজে ভুল করছে।
-আরে ভাই আপনিও তো দেখি? … যাক, আপনি হেড মিস্ত্রি কে আমার কাছে হাজির করবেন, আমি তাকে টাইট দিয়ে দিব”।
-টাইট?
-হ্যাঁ,টাইট।
তার যুৎসই টাইট দেবার অপূর্ব পদ্ধতি পরে টের পেয়েছিলাম। শুধু একদিনের ঘটনা বলি-
(পরবর্তী পর্ব আগামীকাল)

(লেখক একজন সুসাহিত্যিক,কবি এবং ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত  উপমহাব্যবস্থাপক।  তার লিখিত একাধিক বই রয়েছে। )

বাংলাদেশ সময়: ২০:০০:১৩ ● ৩৬০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ