”হে নতুন দেখা দিক আর-বার, জন্মের প্রথম শুভক্ষণ…. চির নূতনেরে দিল ডাক, পঁচিশে বৈশাখ”- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জন্মদিনে এভাবেই স্বাগত জানিয়ে ছিলেন নতুনকে।
কবিগুরুর ১৬২ তম জন্মদিন। ১৮৬১ সালের ৭ মে এক শুভক্ষণে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ ধরাধামে এসেছিলেন। তাই সামান্য করে হলেও কবিগুরুর স্মৃতি তর্পণ করার একটু প্রয়াস। আর্শ্চয্য জনক হলেও সত্য যে, রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন এখন দেশে-বিদেশে ঘটা করে পালিত হলেও এক সময় তাঁর জন্মদিন পালিত হতো না। কিন্তু কবির সাতাশ পূর্ণ হলে পালিত হয় প্রথম জন্মদিন।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একাধারে কবি, উপন্যাসিক,সংগীত রচয়িতা, সুরকার, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী, ছোট গল্পকার , প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, সংগীত শিল্পী,ও দার্শনিক। নতুন পথের নয়া দিগন্ত রচিত হয়েছিল তাঁর লেখনীতে। তিনি গান বেঁধে ছিলেন –ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো । আবার তিনিই লিখেছেন, “ নিজের অজ্ঞতার মতো অজ্ঞান আর তো কিছুই নাই। তিনিই লিখেছেন, “ আছে দুঃখ আছে মৃত্যু ,বিরহ দহন লাগে। তবুও শান্তি ,তবুও আনন্দ,তবুও অনন্ত জাগে।
সব রকম তুচ্ছতা,সংকীর্ণতা এবং সম্প্রদায়গত সীমাবদ্ধতার উর্ধে উঠতে পেরেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আজীবন ব্রতী ছিলেন অনির্বাণ প্রদীপ জ্বালানোর সাধনায়। তিনি বাংলাভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তিনি বাংলা ভাষার শক্তিকে প্রমাণ করে গেছেন। তিনি অমর , অমর করে গেছেন বাংলা সাহিত্যকে। একটা দ্বীপের চারিদিকে যেমন থাকে জল, আমাদের চারদিকে তেমনেই রবীন্দ্রনাথ। তিনি ছিলেন ধ্যানস্থ,চেতনায় গভীর মগ্ন। তবে কার ধ্যান করতেন তিনি ? শূন্যতার ? অসীমের ? সে শূন্যতাও ছিল বাঙময়, রূপময়। নিরুদ্দেশ সৌন্দর্যের উপাসক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। নির্ঝরের মতো চলছে তার লেখা। গানও চলছে ফাঁকে ফাঁকে। সুর দেওয়া, নাটকের মহড়া , পড়া এবং পড়ানোও চলছে এরই মধ্যে। এ হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ। তাঁকে শুধু মাত্র ভিক্টর হুগোর সাথে তুলনা করা চলে। তবুও তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র। এ মানুষটির তুলনা তিনি নিজেই।
রবীন্দ্রনাথ পার্থিব দেহ ছেড়ে চলে গেছেন। তবে কতো ভাবে বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনে যে বেঁচে আছেন তা বলে শেষ করা যায় না। তিনি নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। তবে আরও কয়েকবার পেলেও তা আশ্চর্যজনক মনে হতো না। অন্তত: গল্পগুচ্ছের জন্য একবার তো পেতেই পারতেন।
নিস্তব্দতার সংগীত সৃষ্টি হয় রবীন্দ্রনাথের মতো মানুষের জন্যই, অপরূপের গর্ভে জন্মায় রূপ । আমাদের ভাষা ,সাহিত্য সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথ দাঁড়িয়ে আছেন তাই মহীরুপের মতো।
রবীন্দ্রনাথ আমাদের জন্য রেখে গেছেন অমূল্য সব সম্পদ। তার কবিতা ,ছোটগল্প, জীবন চলার পথে প্রতি মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন পড়ে। বাঙালি জাতির ঐতিহ্যকে মর্যাদার আসনে নিয়ে যাবার জন্য যে কজন মানুষের নাম বলতে হয়, রবীন্দ্রনাথ তাদের মধ্যে অন্যতম। বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি তিনি বাংলাভাষা ও সাহিত্যকে পৌঁছে দিয়েছেন বিকাশের চূড়ান্ত সোপানে। (চলবে )