বঙ্গ-নিউজঃ লাগাতার আগুনের ঘটনায় নির্ঘুম সময় কাটছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের। এক ঘটনার রেশ না কাটতেই ঘটছে আরেক দুর্ঘটনা। পবিত্র রমজান মাসেও একের পর এক আগুন নেভানোর কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে তাদের। এ অবস্থায় আসছে ঈদেও পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন না অগ্নিনির্বাপণকারী এই সংস্থাটির দুই-তৃতীয়াংশ কর্মী। অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদেরকে কর্মস্থলেই থাকতে হচ্ছে। এক-তৃতীয়াংশ যারা ছুটি পাচ্ছেন, তাদেরকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বড় কোনো ঘটনা ঘটলে কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের সব অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম ও পরিবহণ। মার্কেটগুলোকে নিজস্ব নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংস্থাটিতে মোট ১২ হাজার ১৮২ জনের জনবল কাঠামো রয়েছে। তবে বর্তমানে এই সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। ঈদের ছুটির জন্য মোট জনবলকে সমানভাবে তিনটি ব্যাচে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ব্যাচকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। তারা অন্যান্য সরকারি কর্মচারীর মতো ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দেবেন। ছুটি কাটানো কর্মীরা ফিরলে অন্য ব্যাচকে ছুটি দেওয়া হবে। তবে সব সময় দুই-তৃতীয়াংশের বেশি জনবল কর্মস্থলে থাকবেন। যাতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তা মোকাবিলায় তৎক্ষণাৎ কর্মীরা সাড়া দিতে পারেন। এজন্য তাদের শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতেও কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে ফায়ার সার্ভিস। ঢাকার মোট সাড়ে তিনশর মতো জনবল থেকে আড়াইশর কাছাকাছি কর্মী দায়িত্ব পালন করবেন।
বঙ্গবাজার, নিউ সুপার মার্কেটসহ ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটে ধারাবাহিক আগুনের ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে ফায়ার সার্ভিসকে। সংস্থাটি বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে অগ্নিদুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সে কারণে বুধবার ফায়ার সার্ভিসের এক বৈঠকেও ঈদের সময় অগ্নিনিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, ঈদের সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, পাম্প এবং জনবলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অগ্নিনির্বাপণের সব যন্ত্র যেন ঠিকঠাক থাকে সেটা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। কোনো যন্ত্র, গাড়ি বা অন্য সরঞ্জামাদিতে যান্ত্রিক ত্রুটি থাকলে আগেভাগেই তা সারিয়ে নিতে বলা হয়েছে। যে কোনো দুর্ঘটনায় কর্মস্থলে থাকা দুই-তৃতীয়াংশ জনবলের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, চলতি মাসে একের পর এক অগ্নিদুর্ঘটনায় আমাদের জনবলকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশ জনবলই এই সময় কর্মস্থলে থাকবে। বাকি এক-তৃতীয়াংশ সরকারি ছুটি শেষ হলেই কর্মস্থলে ফিরবে। এর মধ্যেও যদি কোনো ‘ন্যাশনাল ক্রাইসিস’ হয় বা পরিস্থিতি খারাপ হলে ছুটিতে থাকা কর্মীরাও কাজে চলে আসবেন।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, ঈদের ছুটিতে সব মার্কেট, শপিংমল এবং ভবনগুলোতে তারা সার্বক্ষণিক পাহারাদার নিয়োজিত রাখতে বলেছেন। মার্কেটগুলোতে বিশেষ তদারকির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা জোরদার করতে বলেছেন। রাতের বেলায় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। বড় মার্কেটগুলোর ক্ষেত্রে নিরাপত্তারক্ষীদের ওপর পুরো স্থাপনাটি ছেড়ে না দিয়ে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদেরও অবস্থানের পরামর্শ দেয় ফায়ার সার্ভিস। এর পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপণে প্রশিক্ষিত জনবলকে মার্কেট তদারকিতে রাখতে বলেন তারা। যাতে ছোট আগুন বড় হওয়ার আগেই তারা তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। এক্ষেত্রে অন্তত ২০ মিনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে এমন সরঞ্জাম সংগ্রহে রাখা ও জনবল তৈরির ওপর জোর দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (ঢাকা) দিনমনি শর্মা যুগান্তরকে বলেন, ঈদে অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। প্রতিটি স্টেশনে ইউনিটগুলো ‘স্ট্যান্ডবাই’ থাকবে। যেহেতু ঈদের সময় মার্কেটে মানুষ কম থাকবে, সাহায্যকারী কম থাকবে, এজন্য আমাদের বিশেষভাবে ঘটনাগুলোকে মোকাবিলা করতে হবে। এসব নিয়ে দোকান মালিক সমিতির সঙ্গেও বৈঠক করেছি। তাদেরও আগুন নির্বাপণে নিজস্ব ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে বলেছি। অগ্নিনির্বাপণের সরঞ্জামগুলো সম্পর্কে যেন তাদের ধারণা থাকে।