বঙ্গনিউজঃ আমল রোজাকে শক্তিশালী এবং প্রতিদানকে পূর্ণ করে। আমল ছাড়া শুধু রোজা সওয়াবের খাতায় নিষ্প্রভ। বাস্তবে শুধু না খেয়ে থাকা ছাড়া কিছু নয়। তাই রাতদিনের যাবতীয় আমল দ্বারা রোজাকে সজ্জিত করা কাম্য। তাহলে কবরের অন্ধকারে রোজা হবে দীপ্তিমান।
রমজান মাসে শ্রাবণের বৃষ্টি ধারার ন্যায় বর্ষিত হয় অজস্র রহমত। আল্লাহর অনুগ্রহ ও অনুকম্পায় মাগফিরাত ও নাজাত লাভ করে প্রকম্পিত হয় গোনাহগার পাপিষ্ঠ বান্দা। রমজান এমন মাহাত্ম্য, কল্যাণ ও বরকতে পরিপূর্ণ যে, গভীর একাগ্রতায় বিশুদ্ধচিত্তে ইবাদতগুজার হলে বহুবিধ প্রাচুর্যে ভরে যায় উভয় জীবনের নানা অধ্যায়।
পবিত্র রমজান মাস নিঃসন্দেহে আত্মমর্যাদা ও বরকতের। তবে গতানুগতিকতার স্বাভাবিক প্রবাহে যারা এ মাসকে অতিবাহিত করবে, এর মর্যাদা ও বরকত তাদের জন্য নয়। তারা এর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে পারবে না। তারা বঞ্চিত হবে এর বরকত থেকে।
রমজান থেকে কে কতটুকু ফায়দা হাসিল করবে তা নির্ভর করবে নিয়ত, সঠিক পরিকল্পনা, কর্মপ্রচেষ্টা আর আমলের ওপর। এ বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেন, কেউ আল্লাহর দিকে এক হাত অগ্রসর হলে আল্লাহ তার দিকে দুই হাত অগ্রসর হন। আল্লাহর দিকে যে হেঁটে যায়, আল্লাহ তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হোন। -সুনানে তিরমিজি : ৩৬০৩
রোজা আসে রোজা যায়, তবুও অনেকের তহবিল শূন্য থাকে। এমন দুর্ভাগাদের কাতারে আল্লাহ যেন আমাদের না রাখেন। রাসুল (সা.) বলেন, অনেক রোজাদার আছেন যাদের ভাগ্যে ক্ষুধা-পিপাসা ছাড়া আর কিছুই জোটে না, অনেকে সারারাত জেগে ইবাদত করেন, কিন্তু তা রাত জাগরণ ছাড়া আর কিছুই হয় না। -মিশকাত : ২০১৪
রমজান আত্মার পরিশুদ্ধি ও পরিতৃপ্তি অর্জনের মাস, ইমান সংস্কার করার মাস, আত্মিক ও চারিত্রিক শক্তি ফিরিয়ে আনার মাস, নফসের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার মাস, কুপ্রবৃত্তিকে দমন করার মাস, সর্বোপরি মানুষ হওয়ার মাস। মুমিন মুসলমানরা এ মাসের অপেক্ষায় থাকেন অধীর আগ্রহে।
রমজানে অর্জিত হয় তাকওয়া। বাস্তবায়ন হয় আল্লাহর নির্দেশমালা। শানিত হয় ইচ্ছা। অর্জিত হয় ঐক্য, মহব্বত ও ভ্রাতৃত্ব। মানুষ অনুভব করে ক্ষুধার্তের ক্ষুধা। এটি ত্যাগ, বদান্যতা আর আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষার মৌসুম। যে ব্যক্তি রোজা রাখবে তার রুহ পবিত্র হবে। হৃদয় নরম হবে। অনুভূতিগুলো শানিত হবে, আচরণগুলো বিনম্র হবে। এ মাসে মুসলমানরা আল্লাহর মুখাপেক্ষী হওয়ার অনুভূতি অর্জন করে। এ মাসে একজন মুসলিম প্রশিক্ষণ নেয় আত্মদানের।
রমজান মানুষকে তার রবের অধিকার বিষয়ে সচেতন করে। যারা আনুগত্যশীল, এ মাসে তাদের উচিত নেক কাজ বাড়িয়ে দেওয়া। পাপীদের কাছে এ মাস ফিরে আসার। তাই আত্মিক ও বস্তুগত সব রোজা ভঙ্গকারী বিষয়গুলো আমাদের জেনে নেওয়া দরকার।
হালাল রুজি ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত। রমজান মানুষকে হারাম থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। রমজান থেকে মুসলিম উম্মাহ ঐকান্তিকভাবে শিক্ষা নেয়, বেহুদা কাজ থেকে বিরত থাকে, জিহ্বায় লাগাম টানে, হৃদয় পরিচ্ছন্ন রাখে, ব্যবহারকে সুন্দর করে, হিংসা-রেষারেষি থেকে মুক্তি লাভের শিক্ষা নেয়। ফলে বিচ্ছিন্ন হৃদয়গুলো অভিন্ন সুতোয় বেঁধে নেওয়ার সুযোগ পায়। রমজান জীবনের মিশনকে আয়ত্ত করার এক বিরাট সুযোগ।
রমজান শাসক ও শাসিতের মাঝে যোগাযোগের একটি উপলক্ষ। ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র, উঁচু-নিচুদের মাঝে সেতুবন্ধের একটি বড় মাধ্যম। অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বারণ করার বিরাট সুযোগ। রমজান সামাজিক, চিন্তাগত অস্থিরতা থেকে মুক্ত থাকার একটি উপলক্ষ। মুসলমানদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের মোক্ষম সময় রমজান। তাই সবার উচিত রমজান এলে বেশি বেশি আত্মসমালোচনায় মনোযোগী হওয়া।
তাকওয়া অর্জিত হলেই কেবল রোজা আমাদের পাপকে জ্বালিয়ে দেবে। তাই শুধু তেলাওয়াত নয়, বরং কোরআনকে অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ পড়ে আমল করা জরুরি। এর মাধ্যমেই আমরা বুঝতে পারব আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কী, আমাদের দায়িত্ব কী। আর পশুর মতো দেহটি কীভাবে পরিণত হবে মানুষে। আরও বুঝতে পারব- রোজা আসে রোজা যায়, তবুও সমাজ থেকে পাপাচার, অন্যায়, পশুত্ব, রাহাজানি কেন দূর হয় না। তাই এই রমজান হোক নিজেকে বদলে দেওয়ার, পাপ-কালিমাকে মুছে দেওয়ার এবং আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জন করে আল্লাহর রহমত পাওয়ার উপযোগী করে নিজেকে গড়ে তোলার।