বঙ্গ-নিউজঃ মাহে রমজান—খোদাভীতি, রবের প্রীতি, সংযম, আত্মসংশোধনের মাস। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণের জন্য ইসলামি শরিয়তে ‘সাওম’ বা সিয়াম প্রবর্তন করেছেন। সিয়াম সাধনা ও কিয়ামুল লাইলের প্রাত্যহিক অনুশীলন ব্যক্তিকে নবচেতনায় উদ্বুদ্ধ করে, মহামহিমের নৈকট্য লাভে ব্রতী করে তোলে। মানুষকে তাক্বওয়ার শ্রেষ্ঠ গুণে গুণান্বিত করে। মাহে রমজানের মূল মাকসাদই হলো, মানুষকে খোদাভীতির নীতিতে জীবন পরিচালনায় অনুপ্রাণিত করা, শৃঙ্খলা ও রুচিকর জীবনে অভ্যস্ত করা, পরোপকারের মহান ব্রতে নিজেকে সঁপে দেওয়া।
মাহে রমজানের প্রথম দশকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর অনুগত প্রিয় বান্দাদেরকে রহমতের ফল্গুধারায় সিক্ত করেন। রহমতের এ মহানেয়ামত পেয়ে মুমিনগণ আল্লাহর নির্দেশনা পালনে আন্তরিক হন ও দায়িত্বশীল বনে যান। তারা তাদের উপর নির্ধারিত ফরজ আদায়ের গরজে কেবল ব্যস্ত থাকেন না বরং সুন্নাহ, নফল এবং মুস্তাহাব আমল পালনেও যথেষ্ট আন্তরিকতা প্রদর্শন করেন। আমলের প্রতিযোগিতায় অনেক বান্দা কাঙ্খিত মঞ্জিলে পৌঁছেও যান। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ভালো কাজে প্রতিযোগিতা করো।’ (সুরা বাকারা: আয়াত : ১৪৮)। তিনি অন্য আয়াতে বলেন, ‘আর এ বিষয়ে প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক’। (সুরা মুতাফফিফীন: আয়াত: ২৬)।
প্রতিদিনের দোয়া
বস্তুত সৃষ্টিজগতের সবকিছুই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মুখাপেক্ষী। একজন সচেতন মুসলিম যেকোন প্রয়োজনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শরণাপন্ন হয়। দোআ এক ধরনের জিকির (স্মরণ)। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা পবিত্র কোরআনে ও তাঁর রাসুলের মাধ্যমে আমাদের শিখিয়েছেন কিভাবে তাঁর কাছে চাইতে হবে। নগদ ইসলামিক অ্যাপে ইসলামিক জীবন-এর প্রতিদিনের দোয়া ফিচারে আছে নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় দোয়াসমূহ। লগইন করেই প্রতিদিনের দোয়া ফিচারটি ব্যবহার করে শিখে নিন এবং আমল করুন প্রয়োজনীয় দোয়া।
রমজানের দ্বিতীয় দশক রোজাদারদের মাগফেরাতের তথা ক্ষমার বার্তা দেয়। আল্লাহপাক রমজানের প্রথম দশকে বান্দাদেরকে রহমতে সিক্ত করে ক্ষমার অবারিত সুযোগ করে দেন। পরম সৌভাগ্যবান কল্যাণপ্রত্যাশীরা মাগফেরাতের পরম এ সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগান। ক্ষমা পাবার লক্ষ্যে যে সকল আমল অতীব জরুরি তা পালনে তারা আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। হাদিসে এসেছে, হে কল্যাণ অনুসন্ধকারী! আল্লাহর কাজে এগিয়ে যাও। হে অকল্যাণ অনুসন্ধকারী! থেমে যাও। (তিরমিযি: ৬৮২, ইবনু মাজাহ: ১৬৪২)।
রমজানের দ্বিতীয় দশকে আল্লাহপাক রোজাদারদেরকে ক্ষমার বার্তা দেন। ক্ষমা পাবার জন্য রয়েছে এমন কতিপয় আমল, যেগুলো বান্দাকে পাপরাশি থেকে মার্জনার পথে নিয়ে যায় সেগুলো হলো—
১. পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত: পবিত্র কোরআন মাজিদের তেলাওয়াত শ্রেষ্ঠ ইবাদাত। রাসুল সা. বলেন, ‘কোরআন তেলাওয়াত সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদাত।’ (আল হাদিস)। রমজানের প্রাত্যহিক তেলাওয়াত বান্দার হৃদয়ে ইমান বৃদ্ধি করে, হৃদয়কে কোমল করে ক্ষমাপ্রত্যাশী হিসেবে উপযোগী করে তোলে তেলাওয়াতের মাধ্যমে বান্দাহ নিজেকে পাপমুক্ত করতে সচেষ্ট হয়।
২. বেশি বেশি ইস্তেগফার করা: পাপমুক্ত জীবনের জন্য ইস্তেগফার মহৌষধ। প্রাত্যহিক এর আমলের মধ্য দিয়ে বান্দা নিজেকে মাপমুক্ত করে। ইস্তেগফার করার জন্য আল্লাহর নির্দেশনা হলো, ‘আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি জুলুম করবে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে; সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু (রূপে)পাবে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১১০)। বান্দা ইস্তেগফার মুহুর্তে বলবে, ‘হে আমার রব! তুমি আমাকে ক্ষমা করো এবং আমার তওবা কবুল করো; নিশ্চয় তুমি তওবা কবুলকারী ও দয়াশীল।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ)।
৩. বেশি বেশি তাওবা করা : পরিপূর্ণ পাপ মোচন এবং নিষ্কলুষ পবিত্র জীবন লাভে তাওবার গুরুত্ব অপরিসীম। তাওবাকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন যারা তাঁর কাছে তওবা করে, এবং তিনি তাদেরকে ভালবাসেন যারা নিজেদেরকে পবিত্র করে। (সূরা আল-বাকারা : আয়াত: ২২২)। তিনি আরও বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন (তওবা) করো, যেন তোমরা সফলকাম হতে পারো। (সূরা আন নুর: আয়াত: ৩১)। প্রত্যেক রোজাদারই জীবনে সফলতা কামনা করে।
৪. বেশি বেশি দোয়ায় মশগুল থাকা : দোয়া ইবাদাত। এ ইবাদাত বান্দাকে যাবতীয় কল্যাণ লাভে সাহায্য করে। মাগফেরাত তথা ক্ষমা লাভের জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে আশা ও ভয়ের সাথে প্রার্থনা করতে হয়। কোমল হৃদয়ে ভক্তি ভরে আল্লাহর দরবারে পাপমুক্তির জন্য দোয়া করলে আল্লাহপাক সে দোয়ায় সাড়া দেন। আল্লাহপাক বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো।’ (সূরা আল মু’মিন : আয়াত ৬০)।
৫. বেশি বেশি দান-সদকা করা: দান ও সদকার আমল ব্যক্তি জীবনে মহাউপকার সাধন করে। বিপদ মুক্তিতে দান-সদকার বিকল্প নেই। পাপমোচনেও সদকার গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহপাক বলেন, ‘যদি তোমরা দান প্রকাশ্যে করো, তবে তা উত্তম; আর যদি তা গোপনে করো এবং অভাবীদেরকে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য শ্রেয়। এর মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের মন্দগুলো মোচন করে দেবেন। তোমরা যা করো, আল্লাহ তা অবগত আছেন। (সুরা বাকারাহ: আয়াত: ২৭১)।
পরিশেষে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে রমজানের দ্বিতীয় দশকে মাগফেরাতের লক্ষ্যে বেশি বেশি আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।