ফ্যামিলি কার্ডে মিলছে টিসিবির পণ্য, আছে ক্রেতাদের অভিযোগও

Home Page » জাতীয় » ফ্যামিলি কার্ডে মিলছে টিসিবির পণ্য, আছে ক্রেতাদের অভিযোগও
বৃহস্পতিবার ● ২৩ মার্চ ২০২৩


---

বঙ্গ-নিউজ:  ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে সারা দেশে সাশ্রয়ী দামে নিত্যপণ্য বিক্রি শুরু করেছে সরকার। পণ্য বিতরণে বিশৃঙ্খলার এড়াতে ফ্যামিলি কার্ড দেখে পণ্য দিচ্ছেন ডিলাররা। তবে ফ্যামিলি কার্ড নিয়েও সরবরাহকারীর দোকানের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষদের। আবার পণ্যের দাম বেশি রাখা, বিতরণের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা না করাসহ ব্যক্তিগতভাবে পরিচিতদের অধিক পরিমাণে পণ্য দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে কোনও কোনও ডিলারের বিরুদ্ধে।

টিসিবির সয়াবিন তেল, চিনি, খেজুর, ছোলা ও মশুর ডালের একটি প্যাকেজের সরকার নির্ধারিত মূল্য ৫৭০ টাকা। বুধবার (২২ মার্চ) মিরপুরের কয়েকটি সরবরাহকারীর দোকানের ঘুরে দেখা যায়, কোনও কোনও ডিলার ক্রেতাদের কাছ থেকে ৫৮০ টাকা করে রাখছেন। অনেক দোকানের সামনে টানানো নেই মূল্য তালিকাও। এছাড়া এলাকার স্থানীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তি ও ডিলারদের পরিচিতদের কাছে কার্ড দেখা ছাড়াই পণ্য গাড়িতে তুলে দিতেও দেখা গেছে। আর এ নিয়ে বিশৃঙ্খলার ফলে সারিতে পিছিয়ে পড়ছেন ভোর থেকে অপেক্ষায় স্বল্প আয়ের ক্রেতারা।

বিতরণের ক্ষেত্রে ডিলাররা শৃঙ্খলা রক্ষা না করায় সুবিধাবাদি কিছু লোক সিরিয়াল ভেঙে আগে এসে পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন। এতে দীর্ঘ সময় রোদে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়াসহ নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বয়স্ক ও প্রকৃত ক্রেতারা।

টিসিবি’র পণ্যের সঠিক দাম সম্পর্কে ধারণা না থাকায় ডিলারের নির্ধারণ করে দেওয়া দামেই পণ্য কিনতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন কেউ কেউ। মিরপুরের ‘বিসমিল্লাহ জেনারেল স্টোর’ নামে এক ডিলারের দোকানের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ রোকেয়া আক্তার। তিনি  বলেন, ‘সেই ফজরের নামাজ পইড়া এইখানে দাঁড়ায়া এখন বাজার হাতে পাইছি।’

তাকে এই পণ্য পেতে পরিশোধ করতে হয়েছে ৫৮০ টাকা। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ১০ টাকা বেশি দিয়েছেন কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সদাই-ই পাই না, আর ১০ টাকা বেশি নিছে সেই হিসাব কই থেইকা রাখমু। তারা যেই দাম রাখে ওই দামেই (পণ্য) নিতে হইছে। এইখানে সবার বাজার পাওন নিয়া কথা। আমরা গরিব মানুষ আমাগো ১০ টাকা যদি খায়, একদিন ঠেকা থাকবো।’

আরেক ক্রেতা সুফিয়া বলেন, ‘দাম বেশি রাখছে জিগাইতে গেলে কয় আমরা মাইপা দিতাছি। এতে মেহনত আছে, এর লাইগ্যা ১০ টাকা বেশি রাখে।‘

ডিলারদের অসততার কারণে সরকারের দুর্নাম হচ্ছে মন্তব্য করে আরেক ক্রেতা সালমা খাতুন বলেন, ‘আমাগো প্রধানমন্ত্রী বলছেন— আমার গরিব-দুঃখীরাও খাবে, কেউ যেন বাদ না যায়। উনি উনার কথা মতো কাজ কইরা যাইতাছেন। কিন্তু এরা বেঠিক কইরা উনার (প্রধানমন্ত্রী) বদনাম করতাছে। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে জনগণের জন্য দিতাছে, ওইভাবে যদি আমরা পাই, কোনও দুই নাম্বারি না করে, তাইলে উনার সুনাম আরও বাড়বে। কিন্তু এরা পাশ দিয়া নিজেগো লোকগো বস্তা ভইরা দিতাছে। যারা নিতাছে তারাও শক্তিশালী, তাগো বিরুদ্ধে কি কিছু কওন যায়!’

দাম বেশি রাখার কারণ জানতে চাইলে ‘বিসমিল্লাহ জেনারেল স্টোরের’ মালিক কাজি আমিনুল বলেন, ‘৫৭০ টাকা প্যাকেজে বিক্রি করি। হয়তো যারা মাল ডেলিভারি দিচ্ছে, তারা পরিশ্রম করছে দেখে বেশি রাখছে। আমি বলে দেবো যেন বেশি না রাখে।’

শুরু থেকেই বেশি দামেই পণ্য বিক্রি হচ্ছে বলে অনেকেই অভিযোগ করছেন— জানালে ‘অসুস্থতার কারণ’ দেখিয়ে তিনি আর কথা বলেননি। পরে তার দোকান থেকে ৫৭০ টাকা করে প্যাকেজ বিক্রি করতে দেখা যায়।
ডিলাররা পণ্য বিতরণে শৃঙ্খলা রক্ষার কোনও চেষ্টা করে না- অভিযোগ মিরপুর ১২ নম্বরে ‘তুরাগ ট্রেড ইন্টারন্যশনাল’-এর সামনে অপেক্ষমাণ আরেক ক্রেতা রেজাউল হকের। তিনি বলেন, ‘এরা (ডিলারা) মাইপা কুলাইতে পারে না। আনার লগে লগেই কেন বেচা লাগবো? আগে তোরা মাপ, তারপর বেচ। হুদাহুদি আমাগো রোদে দাঁড়া করায়া রাইখা মাপতে গিয়া দেরি করায়। আমরাও তো না আইসা পারি না। বেচা শুরু করলেই তো ভিড়। এখন ভিড় ঠেইলাই নিতে হইবো। নিতে না পারলে খালি হাতেই ফিরা যাওন লাগবো। পুরান থানার ডিলার দুই দিন ধইরা মাল বিক্রি বন্ধ রাখছে কেন! তারা মাপতাছে। মাপার পর সিরিয়াল কইরা দিবো। আর এইখানে কোনও নিয়ম নাই।’

এই দোকানের সামনে শাওন নামে আরেক অভিযোগ করে বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে এখানে একজনকে ১৮টি কার্ডে মাল দেওয়া হইছে। ভ্যানে কইরা মাল নিয়া গেছে। সকাল বেলা ভেতরে-ভেতরে সিস্টেম কইরা মাল বিক্রি করছে।‘

দাম বেশি রাখার অভিযোগের বিষয়ে আরেক ডিলার তুরাগ ট্রেড ইন্টারন্যশনালের দ্বায়িত্বে থাকা মহিলা আওয়ামী লীগ ঢাকা উত্তরের সদস্য ও মহিলা লীগের পল্লবী থানার সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াছমিন রিনা বলেন, ‘আমরা বেশি দাম রাখি না। অনেকে ব্যাগ নিয়ে আসেন না। তখন তাদের কাছে তিনটা ব্যাগ ১০ টাকায় বিক্রি করি।’

একজন ক্রেতা তিনটা ব্যাগ কেন নেবেন, জানতে চাইলে এই বিষয়ে তিনি কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। বিশেষ সুবিধার মাধ্যমে একজনকে একাধিক টিসিবি প্যাকেজ দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আর কোনও জবাব দেননি।
তবে কিছু কিছু ডিলারের দোকানে এর ব্যতিক্রমও দেখা গেছে। তাদের ন্যায্যমূল্যেই পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এবিষয়ে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক (বাণিজ্যিক বা সিএমএস ও বিওবি) যুগ্মসচিব এস এম শাহীন পারভেজ বলেন, ‘টিসিবি’র মনিটরিং সেল তেমন স্ট্রং না। আর বিষয়টা তদারকির দ্বায়িত্ব স্থানীয় কাউন্সিলদের। তাদেরই এসব বিষয়গুলো বেশি খোঁজখবর রাখার কথা। তবে আপনি জানিয়েছেন, আমরা আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) অফিশিয়ালি বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিবো।’

বাংলাদেশ সময়: ৯:৫২:২৯ ● ৪০৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ