মুজিব মানেই বাংলাদেশ, আমার লাল-সবুজ পতাকা
মুজিব মানেই মুক্তি, মুজিব মানেই স্বাধীনতা
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক অবিচ্ছেদ্য নাম। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের পথপ্রদর্শক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর অমর কীর্তি। বাঙালি জাতির জন্ম যদিও হয়েছে হাজারো বছর পূর্বে; কিন্তু বাঙালি জাতি হিসেবে কোনো স্বীকৃতি ছিল না, পৃথক জাতিসত্তা হিসেবে কোনো পরিচিতি ছিল না, বাঙালি জাতির স্বাধীন কোনোও ভূখণ্ডও ছিল না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালিকে পৃথক জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিত করেছেন, পৃথক জাতিসত্তা হিসেবে বাঙালি পরিচিতি পেয়েছে, বাঙালি জাতি রাষ্ট্রও বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে হয়েছে। তাই তো তিনি বাঙালি জাতির পিতা।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি নাম, একটি চেতনা, একটি ইতিহাস।
তার জন্ম না হলে হয়তো বাঙালি জাতি স্বাতীনতা লাভ করত না, সৃষ্টি হতো না স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ভেঙে জন্ম হয় দুটি পৃথক রাষ্ট্র- পাকিস্তান ও ভারত। আমাদের এই ভূখণ্ড তথা বর্তমান বাংলাদেশ তখন ছিল পাকিস্তানের একটি অংশ। ব্রিটিশের কবল থেকে স্বাধীনতা লাভের এক বছরের মধ্যেই এদেশের মানুষ বুঝতে পারে, আমরা নতুন করে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের কবলে পড়েছি।
১৯৪৮ সালেই পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাঙালির মাতৃভাষা বাংলাকে অবজ্ঞা করে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্ত শুরু করে। তখন থেকেই বাঙালির আত্মজাগরণ ঘটে। আর বাঙালির এই জাগরণকে ধীরে ধীরে ও ধাপে ধাপে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তর সালে স্বাধীনতা শুধু বাঙালির নয়, সমগ্র মানবজাতির হতিহাসে এক অবিনাশী উজ্জ্বল অধ্যায়। আর এই অধ্যায়ের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ, একটি অপরটির পরিপূরক, পরস্পর একাত্ম, এক সুতোয় বাঁধা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই সাধক যিনি তাঁর দীর্ঘ কন্টকাকীর্ণ সাধনায় সমগ্র বাঙালি জাতির মনে সঞ্চার করেছিলেন স্বাধীনতার বাসনা। একটি বদ্বীপের জাতীয়তাবাদের চেতনা তুলে ধরা, একটি ঘুমন্ত জাতিকে তাদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার করা, তাদের সকল শোষণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে শেখানো স্বাধীনতার একজন অনন্য স্থপতি তিনি। বাঙালি জানে, সারা বিশ্ব জানে, বাংলাদেশ সৃষ্টির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আলাদা কোন স্বত্তা নন, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু, এই কথা অনস্বীকার্য।তাঁর যাত্রা শুরু ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবে নয়। ক্রান্তিলগ্নে এই ভূখণ্ডের কোটি জনগণের চূড়ান্ত সংগ্রামের পথপ্রদর্শক হয়েই বঙ্গবন্ধু উপাধি তিনি অর্জন করেছেন । এই পরিচয় কর্মে, ত্যাগে, সংগ্রামে, সাধনায়, নেতৃত্বে তাঁর জন্মসূত্রে পাওয়া নামকেও ছাপিয়ে যায়। ‘বঙ্গবন্ধু’ নামের প্রচারে কিংবা ক্ষমতাকেন্দ্রের দাপট কিন্তু তাঁর মহিমা বাড়ায় না। বরং তাঁর কর্ম ও আদর্শ অনুসরণেই তাঁর অনন্য বিকাশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সমগ্র জাতিকে একসূত্রে গ্রথিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন রাজনীতির কবি। রাজনীতির কবির মতো সৃষ্টিশীল চেতনা দিয়ে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন আজীবন। শেখ মুজিব যখনই দেখেছেন বাংলার এই ভূখন্ড শাসক ও শোষকগণের কাছে শুধুই শোষণ, বঞ্চনা ও নিষ্পেষণের এবং যখনই দেখেছেন বাংলার ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতি দলিত হচ্ছে শোষকচক্রের কাছে, তখনই তিনি প্রতিবাদ করেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে, আওয়াজ তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁর মূল্যবোধের জায়গা থেকে। তাঁর সিদ্ধান্ত, অবিচলতা নিয়ে বলতে গিয়ে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেছিলেন-
‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি।ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় তিনি হিমালয়ের মতো’।
৭ই মার্চের অগ্নিগর্ভ ভাষণে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন জনতার কণ্ঠস্বরে। পৃথিবীতে কোন ব্যক্তির একক স্বাধীনতার ঘোষণা এতটা আলোড়ন তুলতে পারেনি যা পেরেছিলো বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা। এই ঘোষণা কোটি মানুষকে মরণপণ সংগ্রামের প্রেরণা জুগিয়েছিলো যা অজেয় শক্তি হয়ে আমাদের জন্য ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে স্বাধীনতাকে। পেট্রিক হেনরির ‘Give me liberty, or give me death’ (1775), আব্রাহাম লিঙ্কনের ‘Gettysburg Address’ (1863), উইনস্টন চার্চিলের ‘We shall fight on the beaches’ (1940), কিংবা মার্টিন লুথার কিংয়ের ‘I have a Dream’ (1963) ভাষণ মানুষকে জাগ্রত করেছে, কিন্তু জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টি করেনি। পক্ষান্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবু ররহমানের ভাষণ ছিল স্বাধীনতার ডাক, মুক্তির আহ্বান- একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা।বর্তমান তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে হলে তা লিখিত তিনটি বই অধ্যয়ন করতে হবে। তাহলে এর মাধ্যমে তারা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে পারবে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সমৃদ্ধি অর্জন করতে আমাদের মধ্যে পারস্পারিক আন্তরিকতা ও সৌহার্দপূর্ণ আচরণের বহিঃপ্রকাশের উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।ঋতুরাজ বসন্তের যে গতি ও আবেগ রয়েছে তা আবার বাঙালি জাতির জীবনে ছড়িয়ে পড়ুক। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশকে দেখতে চেয়েছিলেন তা প্রতিষ্ঠার জন্যে নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। চারদিকে যে অস্থিরতা ও অসামঞ্জস্যতা রয়েছে তা কাটিয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট মহলকে আরও সোচ্চার হতে হবে। এটাই হোক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের অন্যতম প্রত্যয়।
লেখক:
গুলশান আরা
কবি ও প্রাবন্ধিক।